বেরোবিতে ক্যাফেটেরিয়ার ভাড়া না দিয়েও ভর্তুকি পেল ঠিকাদার
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ৪ বছরের ভাড়া বকেয়া রেখে ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এস এস ক্যাটারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান এবং ছাব্বিশ মাসের ভাড়া বকেয়া রেখেছে মেঘনা ব্যাংক। শুধু ভাড়াই নয়, এই পর্যন্ত দেয়নি বিদ্যুৎ ও পানির বিলও। অথচ ১৫ হাজার টাকা ভর্তুকি পেয়েছে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনাকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
চুক্তিপত্র সূত্রে জানা যায়, এস এস ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ট্রেজারারের দায়িত্ব পালনকালে এই চুক্তি করেন। চুক্তি অনুসারে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া মাসের ১০ তারিখের মধ্যে এবং বিদ্যুৎ ও পানির বিল কাগজ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়াও চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার দুই বছর পরে ১০ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ আছে চুক্তিপত্রে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টাকাই দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। ক্যাফেটেরিয়ার বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২২ থেকে উঠে এসেছে এমন তথ্য। এতে দেখা যায়, ৭ মার্চ ২০১৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ কোনো ভাড়া দেয়নি। মাসিক ভাড়া ১০ হাজার হিসেবে মোট তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা বাকি, অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিল হিসেবে আনুমানিক তিন হাজার টাকা করে এক লাখ দুই হাজার টাকা বাকি আছে। কোনো বিল পরিশোধ করেনি (পুরো টাকা বাকী) বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।
এ ছাড়াও ক্যাফেটেরিয়ার আবর্জনা ফেলার জন্য নেই নির্দিষ্ট স্থান। ক্যাফেটেরিয়ার এক সাইডে গর্ত করে ফেলা হচ্ছে এসব আবর্জনা আর ময়লা পানি, যা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে ক্যাফেটেরিয়া সংলগ্ন আশপাশের জায়গাগুলোতে হাটা-চলা ও অবস্থান করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আমাদের তো আলাদা করে আড্ডা দেওয়া বা সংস্কৃতি চর্চার জায়গা নেই, ক্যাফেটেরিয়ার সামনে, পাশে বসে আমরা এই কাজগুলো করতাম কিন্তু এখন দুর্গন্ধে এখানে থাকা যায় না। কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
ভাড়া না দেওয়ার ব্যাপারে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনাকারী ঠিকাদারের প্রতিনিধি সেলিম ইসলাম বলেন , 'আমরা ক্যাফেটেরিয়া নেওয়ার কিছুদিন পরে করোনা মহামারি শুরু হয়। ফলে দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আমরা করোনাকালীন ভাড়া মওকুফের আবেদন দিয়েছি। এরপরের মাসগুলোর ভাড়া কেনো দেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভাড়া দিয়ে দিবো সামনে।
এদিকে বেরোবি মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড কালেকশন বুথের ভাড়া বকেয়া পড়েছে দুই লাখ ৯৬ হাজার ৪০০ টাকা। যদিও ব্যাংকটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভাড়া পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ বিলসহ মোটা অঙ্কের টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড রংপুর শাখার ডেপুটি ম্যানেজার ও ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সার্বিক বিষয়ে ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, ক্যাফেটেরিয়ার আবর্জনা বা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি, দ্রুত সমাধান আশা করছি। আর মেঘনা ব্যাংকের ভাড়ার বিষয়ে ট্রেজারার মহোদয় অবগত আছেন, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। আর মেঘনা ব্যাংকের ভাড়া বকেয়া আছে কি-না তা আমি জানি না। আমি শুধু ক্যাফেটেরিয়া তদারকি করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। এটা ব্যাংকের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা ভালো বলতে পারবেন।
চুক্তির নিয়ম মেনে ভাড়া না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মজিব উদ্দিন আহমদ বলেন, স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় অবস্থিত মেঘনা ব্যাংকের গত জানুয়ারি ২০২১ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত মোট ২৬ মাসের মাসিক ভাড়া বকেয়া পড়েছে। বকেয়া টাকা পরিশোধ ও হালনাগাদ করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছি।
এ বিষয়ে মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড রংপুর শাখার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার একরামুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের যে লোকেশন চুক্তি ছিল তার জায়গা একটু কমিয়েছে। আমরা চিঠি দিয়েছি কতটুকু জায়গা কমালো তার অনুপাতে আমরা ভাড়া দিয়ে দিব। এর আগেও আমরা ভাড়া দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, উদ্বোধন হওয়ার পরে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১৯ সালে এটি চালু করার জন্য এস এস ক্যাটারিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এসআইএইচ