ডিসির কাছে রাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্র
জেলা শহরে অবস্থিত শাহ্ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) উপাচার্যের (ভিসি) সঙ্গে 'দুর্ব্যবহারের' অভিযোগে এবার জেলাপ্রশাসকের কাছে অভিযোগপত্র দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৫ মার্চ) বিকাল ৪টায় জেলাপ্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের কাছে অভিযোগপত্র দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল।
বুধবার বেলা ৩টার দিকে রাবিপ্রবির নিজস্ব চারটি বাসযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেলাপ্রশাসক (ডিসি) কার্যালয় চত্বরে আসেন। এসময় শিক্ষার্থীরা শাহ্ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমানের 'অপসারণ' চেয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে স্লোগান দেয়। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানার ওসি আরিফুল আমিনসহ পুলিশ সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশের অনুরোধে স্লোগান দেয়া বন্ধ রাখেন শিক্ষার্থীরা।
রাবিপ্রবি'র ভিসির পক্ষে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ শীল জানিয়েছেন, 'আমাদের ভিসি ম্যামকে অপমান করা হয়েছে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেছেন। আমরা ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি'।
অভিযোগপত্র গ্রহণের পর রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অভিযোগপত্র দিয়েছেন, আমরা সেটি গ্রহণ করেছি। এসময় জেলাপ্রশাসক শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্রটি মাউশি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর জন্য এডিসি (সার্বিক)'কে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে অভিযুক্ত শাহ্ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, 'গতকাল (মঙ্গলবার) বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে সুরাহা হয়েছে। তবুও তারা এখন কেন এমন করছে?- এর উত্তর আমার জানা নেই'।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জুয়েল সিকদার বলেন, 'গতকালকে (মঙ্গলবার) প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়েছিল তারা বিষয়টি দেখছেন এবং ইউএনও বলেছেন, জেলাপ্রশাসক বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার জন্য। সেটির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা জেলাপ্রশাসক মহোদয়ের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন'।
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির প্রতিবাদ:
এদিকে বুধবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বিবৃতিতে রাবিপ্রবি ভিসির সঙ্গে 'দুর্ব্যবহারের' প্রতিবাদ জানিয়েছে রাবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতি।
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মাহবুব আরা ও সাধারণ সম্পাদক মহিম-আল-মহিউদ্দিনের সই করা প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, 'শাহ-বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত ছিল। অ্যাসোসিয়েশন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং প্রধান শিক্ষকের এরূপ হীন আচরণের জন্য যথোপযুক্ত আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোর দাবি জানাচ্ছে'।
এদিকে, একই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতো একই ভাষায় হুবহু প্রতিবাদ জানিয়েছে রাবিপ্রবি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি। কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেনের সই করা প্রতিবাদ লিপিতে তারাও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
যেভাবে ঘটনার শুরু:
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ঘটনার দিন মঙ্গলবার বিকালে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) উপাচার্য (ভিসি) ছাত্রাবাস পরিদর্শনে আসেন এবং অগ্রিম টাকা নিয়েও হলের সংস্কার কাজ ভালোমতো না করা নিয়ে তিনি শাহ্ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান তাঁর সঙ্গে 'অসৌজন্যমূলক' আচরণ করেন।
এছাড়া হল প্রভোস্টকে মারধর ও শিক্ষার্থীদের গালাগাল করেন। পরে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে তাকে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এরপর পুলিশ-প্রশাসন দুইপক্ষকে নিয়ে রুদ্ধধার বৈঠকে বসেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক ভিসির কাছে ঘটনার জন্য 'ক্ষমা' চেয়েছেন।
তবে বিষয়টি সমাধানের পরদিন আবার অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আন্দোলনরত করছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, প্রধান শিক্ষকের 'দুর্ব্যবহারে' ইমেজ সংকটের জবাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামিয়েছে রাবিপ্রবি প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) নিজস্ব কোনো ছাত্রাবাস নেই। রাবিপ্রবির শ্রেণী কার্যক্রম শুরু থেকেই শাহ্ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে শ্রেণী কার্যক্রম চলছে। তবে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে শ্রেণী কার্যক্রম চললেও ভাড়ায় দুইটি ছাত্রাবাস রয়েছে মাঝেরবস্তিতে। বিশ্ববিদ্যালয় চালুর শুরুর দিক থেকেই শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভাড়া নিয়ে নিজেদের ছাত্রাবাস বানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এএজেড