রাবিতে সংঘর্ষ
ছাত্রলীগ-প্রশাসনকে দায়ী করে ৮ ছাত্র সংগঠনের বিবৃতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের জন্য ছাত্রলীগ ও প্রশাসনকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি ছাত্র সংগঠন। রাবি শাখা ছাত্রলীগ ও স্থানীয়দের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষকে শিক্ষার্থীদের উপর স্থানীয়দের হামলা বলে প্রচার করা হলেও শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সংঘর্ষে জড়ায় বলে দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি করে ছাত্র সংগঠনগুলো।
বিবৃতি দেওয়া আটটি সংগঠন হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, নাগরিক ছাত্র ঐক্য এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা)।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত শনিবার (১১ মার্চ) বগুড়া থেকে আসা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন আকাশের সঙ্গে বাস কন্ডাক্টরের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বাস কন্ডাক্টরের সাথে হাতাহাতি হয় আকাশের বন্ধুদের। এরপর বিনোদপুরের কিছু ব্যবসায়ী আকাশের বন্ধুদের উপর মারমুখী হলে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়ানোর কারণ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রলীগ ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগ কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র (রামদা, চাপাতি, রড, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প) সহ বিনোদপুর গেটে এসে জড়ো হতে থাকে। ছাত্রলীগ কর্মীদের এই সংঘর্ষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। অপরদিকে বিনোদপুরের কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগ নেতা অনিক মাহমুদ বনিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা পুলিশ বক্সে আগুন দিলে আশপাশের কিছু দোকানেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনা এ পর্যন্ত তরান্বিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টায় ভিসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এই পরিস্থিতির কোনো সমাধান না করেই ফিরে আসেন। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি চালায় পুলিশ। এর ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাস কন্ডাক্টরের সামান্য বাকবিতণ্ডার ঘটনা সংঘর্ষের পর্যায়ে যাওয়া এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় চূড়ান্তভাবে দায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা ও নির্লিপ্ত অবস্থান।
শিক্ষার্থীদের চাপা ক্ষোভের বিষয় উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো প্রকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অসন্তোষ বিরাজ করছিল। যার ফলে ১২ মার্চ শিক্ষার্থীরা একত্রে ভিসির বাসভবনের গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে অবরুদ্ধ ভিসি কোনো সমাধান না দিয়ে তার বাসভবনে চলে যায়।
আন্দোলনের সহিংসতার বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পুনরায় সহিংস করে তোলার চেষ্টায় মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জান্নাত জানার নেতৃত্বে রেল লাইনের উপর ডামি পুড়িয়ে চারুকলার রেলগেট অবরোধ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, উক্ত ঘটনাগুলো ঘটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শিক্ষার্থী ও বিনোদপুরের সাধারণ মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিনোদপুরের সাধারণ জনগণ। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বাংলাদেশ রেলওয়ে আলাদা আলাদাভাবে তিনটি মামলা করেছে। এরপরও স্থানীয় ব্যবসায়ী, মেস মালিক ও জনগণের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রকার উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার ফলশ্রুতিতে অত্র এলাকায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা চরম উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতায় আছে।
এ ছাড়াও বিবৃতিতে ৬টি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-অবিলম্বে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ উপাচার্যকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, হলে ছাত্রলীগের দখল দারিত্ব ও সিট বাণিজ্য বন্ধ করা ও নতুন হল নির্মাণ করে শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন-পুলিশ প্রশাসন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, মামলার নামে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণ হয়রানির শিকার যেন না হয় তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে রাকসু সচল করা।
এসআইএইচ