শাবিপ্রবির গবেষণা বাজেট শূন্য থেকে বেড়ে ৮ কোটিতে
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ থেকে পদোন্নতি পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে গবেষণা প্রয়োজন। কিছু পদে পদোন্নতির জন্য জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের দরকার হয়। দেশের উন্নয়নে গুণগত গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। বাজেটের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)।
তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সময়ে। শুধু গবেষণা খাতেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও এসেছে দৃষ্টিনন্দন পরিবর্তন।
বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট বাজেটের পরিমাণ ১৬০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এতে গবেষণায় ৮ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের প্রায় ৫ শতাংশ (৪.৯৩) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটিই দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে গবেষণা খাতে মোট বাজেটের ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এই খাতে বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে মোট বাজেটের মাত্র ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ১২ বছরের বরাদ্দকৃত বাজেটের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে গবেষণা খাতে বাজেট ছিল মাত্র ২৫ হাজার টাকা। এরপরের বছর ২০১২-১৩ তে ৩ লাখ টাকা। তারপরের দুই বছরের গবেষণা খাতে বাজেট ছিল শূন্যের ঘরে। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ও ২০১৬-১৭ তে ৫২ লাখ। তারপরের বছর ২০১৭-১৮ তে গবেষণা খাতে বাজেটের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৭০ লাখ, ২০১৮-১৯ এ ২ কোটি ৯০ লাখ, ২০১৯-২০ এ ৪ কোটি, ২০২০-২১ এ ৪ কোটি ৬০ লাখ, ২০২১-২২ এ ৬ কোটি এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে গবেষণাখাতে বাজেটের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮ কোটি টাকায়।
এদিকে গবেষণায় চুরি ঠেকানো ও মান বজায় রাখতে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর শিক্ষকদের জন্য টার্ন-ইট-ইন (প্ল্যাগারিজম চেক) পদ্ধতির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের ৫১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় নির্বাহের জন্য ১০ হাজার ৫১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। এতে উচ্চশিক্ষায় ইউজিসি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য আসন্ন অর্থবছরে মূল বাজেটে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাজেট বৃদ্ধির ব্যাপারটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো.সাইফুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা একটি প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ বাজেট দিয়ে থাকি। সম্প্রতি ভালো মানের গবেষণার জন্য কোনো প্রকল্পে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজেট দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় যে পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে তাতে সকল শিক্ষক গবেষণামুখী হবে বলে আমার বিশ্বাস।
গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় গবেষণার বিকল্প নেই। শিক্ষকদের গবেষণা মৌলিক এবং বিশ্বমানের করতে প্রতিবছর গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে মোট বাজেটের ৫ শতাংশ গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। গবেষণার মান নিশ্চিত করার জন্য এখানে টার্ন-ইট-ইন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন জার্নাল ও বইয়ের জন্য বরাদ্দ ১৫ লাখ টাকা থেকে ৬০ লাখ টাকা করা হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারে সেজন্যে রিমোট অ্যাক্সেস লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে। গবেষণা কর্মকে উৎসাহ প্রদানের জন্য অনেক ধরনের প্রণোদনা চালু করা হয়েছে। অচিরেই এ লক্ষ্যে আরও নতুন নতুন প্রণোদনা চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। শিগগিরই পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের জন্য বন্ধ হওয়া ইনক্রিমেন্টগুলো পুনঃ প্রবর্তন করা হবে। সবকিছু মিলে একটি চমৎকার গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এসজি