রাবিতে বিজিবি মোতায়েন, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা
স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে। পুলিশের রাবার বুলেট নিক্ষেপের পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। আর স্থানীয়রা ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছে। রাস্তায় ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনসহ অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, উদ্ভুত পরিস্থিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগামী ১২ ও ১৩ মার্চ সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার পান্ডে স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ১৪ মার্চ থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ যথারীতি চলবে।
এর আগে, রাত ১১ টা পর্যন্ত দাফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে জায়গা দিতে না পেরে আহতদের বাসে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করেন।
সুলতান উল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সে কাভার করা যাচ্ছে না। আহতদের বাস দিয়ে রামেকে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে, বিনোদপুর বাজার এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মারমুখী অবস্থান দেখা গেছে। অন্যদিকে, একদল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রেল স্টেশন এলাকায় ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নিয়েছেন। এ অবস্থায় পুলিশ ও বিজিবি মাঝে সড়কে অবস্থান নিয়েছে।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে এখনও আহতরা ভর্তি হচ্ছে। আহত অবস্থায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ রাত ১১ টার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানিয়েছিলেন, প্রায় অর্ধশত আহত ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এই সংর্ঘষ শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত অনেক দোকানপাট পুড়ে ছাই হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও কাজ করছিলেন। এই সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বগুড়া থেকে মোহাম্মদ বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়ির ড্রাইভার শরিফুল ও সুপারভাইজার রিপনের সাথে কথাকাটাকাটি হয় আকাশের। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট এসে আবারও সুপারভাইজারের সাথে ঝামেলা বাঁধে। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সাথে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়র মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড় হন এবং স্থানীয় দোকানদারে উপর চড়াও হন।
একপর্যায়ে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করেন। এসময় দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ২ জন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি জানার পরপরই সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও কাজ করছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত।
/এএস