ইবি ছাত্রী নির্যাতন
২৪ দিনেও ভিডিও ফুটেজ উদ্ধারে ব্যর্থ হল প্রশাসন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী দ্বারা র্যাগিংয়ের নামে প্রথম বর্ষের ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি হলের সিসিটিভি ফুটেজ। সেদিনের ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজগুলো উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে হাইকোর্ট তার পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনাপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
গত ৬ মার্চ হাইকোর্ট ফুলপরীর উপর নির্যাতনের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনাপত্র প্রকাশ করেছে। হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার, সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনাপত্রে হল প্রশাসনের সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহে ব্যর্থতায় আলাদা করে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত হালিমা আক্তার উর্মীর মোবাইলে ধারণ করা নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ দ্রুত উদ্ধার করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল আছে কিনা এ ব্যাপারে স্মুথ অপারেশনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
হল সূত্রে জানা যায়, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের বারান্দা, ডাইনিং, অফিস, করিডোরসহ মোট ১২টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। যার ফুটেজ হল প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা রয়েছে। তদন্তে ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী সেদিন রাতে ডাইনিংয়ে নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে কমিটি। সেই হিসেবে ডাইনিংয়ের সিসিটিভিতে ভিডিও ফুটেজ থাকার কথা।
বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি হল কমিটির কাছে ফুটেজ চাইলে তা সরবরাহ করতে পারেনি। হল থেকে জানানো হয়, টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে হল কর্তৃপক্ষ ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারিনি। সেজন্য হল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলকে দায়িত্ব দিয়েছিল। আইসিটি সেলও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসানুল আম্বিয়া বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার মতো এমন প্রত্যেকটি ডিভাইসে বায়োসের ব্যাটারি লাগানো থাকে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরও যেন ক্যামেরা সচল থাকে এজন্য এটা লাগানো হয়। হলের ওই সিসিটিভি ক্যামেরায় লাগানো বায়োসের ব্যাটারিটা আগেই নষ্ট হয়ে গেছে, যেটা হয়তো হলের কেউ লক্ষ্য করেনি। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিশিয়ান দিয়ে এই সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা সম্ভব নয়। বাইরে থেকে অভিজ্ঞদের আনলে হয়তো সম্ভব হতে পারে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনাপত্রের পূর্ণাঙ্গ কপি আমরা হাতে পেয়েছি। কপি পেয়ে রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। ক্যাম্পাস খুললে অফিসিয়ালি বিষয়টি জানা যাবে।
আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছে সবগুলো যথাযথভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সে অনুযায়ী কাজ করছি। আদালতের নির্দেশ পালনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
উল্লেখ্য, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে র্যাগিংয়ের নামে ফুলপরীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গত ১ মার্চ সানজিদা অন্তরাসহ পাঁচ অভিযুক্তকে ক্যাম্পাস থেকে সাময়িক বহিষ্কার, হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার, ভুক্তভোগী ফুলপরীর নিরাপত্তা ও তার পছন্দের হলে উঠানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে সেদিনই হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করে প্রশাসন। এ ছাড়াও গত ৪ মার্চ পাঁচ অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না-এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে তাদের হল ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া ফুলপরীকে তার পছন্দের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সিটের ব্যবস্থাও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এসআইএইচ