২০০ শিক্ষার্থীর জন্য এক কেজি ডাল, বাসি খাবার!
ছাত্রজীবনে ডালের বাটিতে ভুলে হাত ধোয়া কিংবা থালার ময়লার পানি ফেলার অনেক গল্প চালু আছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) হলের ডাইনিং গুলোতে ডালের অবস্থাও অনেকটা সে রকম। গামলা ভরা পানিতে হলুদ আর তেলের পাতলা স্তর দেখে বোঝার উপায় নেই, তা ডাল নাকি থালা-বাটি ধোয়া পানি। আবার আগের দিনে বেচে যাওয়া খাবার, পরে দিন খাওয়ানো হচ্ছে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা প্রকাশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এক কেজি মসুরা দিয়ে রান্না করা ডাল গড়ে ২০০ জনকে খাওয়ানো হয়। শুধু ডাল নয়, হল ডাইনিং এর অন্য খাবারের অবস্থাও করুণ। মাছ বা মাংসের টুকরোগুলো ২০ থেকে ২৫ গ্রামের। তরকারির স্বাদ এমন যে ক্ষুধা নিবারণের জন্য কোনো রকম মুখে দিয়ে গিলে ফেলতে হয়। ওই দিনের বাজারের তালিকায় দেখা যায়, সারা দিনের জন্য ডাল রান্না করা হয়েছে এক কেজি।
আরো শহীদ মুক্তার এলাহি হলের ডাইনিং এ খেতে গেলে এক গামলা ভাত পরিবেশন করা হয় সেই গামলার ভাত দুর্গন্ধ যুক্ত ছিল, দুর্গন্ধযুক্ত ভাতের গামলা পরিবর্তন করতে বলা হলে ডাইনিং এ কর্মরত কর্মচারী গামলার ভাত পরিবর্তন করে দেয়, পরিবর্তনকৃত নতুন গামলার ভাত খেতে গেলে দেখা যায়, নতুন গাবলার ভাতও দুর্গন্ধ যুক্ত ছিল ।
আবার দেখা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলের ডাইনিং খাবারের দাম পূর্বের তুলনায় বাড়ানো হয়ছে। মুরগী/মাছ-সবজি-ভাত- ৩৫ টাকা যা পূর্বের চেয়ে ৫ টাকা করে বেশি। এতে একজন শিক্ষার্থীর দুইবেলা খেতে ৭০ টাকা খরচ হচ্ছে যা মোটের উপর ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ভার্তা বা শাক নিয়ে খেতে চাইলে আলাদা করে আরো টাকা গুনতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয় না কোন ভূর্তুকি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি ছাত্র হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহিদ মুক্তার এলাহি হল এবং একটি ছাত্রী হল শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। এই সব এক দিনে গড়ে ২১০ থেকে ২২০ জন শিক্ষার্থী খাবার খায়, সারা দিনে ২১০ থেকে ২২০ জনের জন্য ডাল রান্না করা হয়েছে মাত্র এক কেজি।
বাজারের ওই তালিকাগুলো এবং রান্না করা তরকারি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণত ডাইনিং গুলোতে আমিষের উৎস হিসেবে রান্না করা হয় বয়লার মুরগির মাংস, ছোট ছোট পোনা মাছ, ডাল, মাঝে মাঝে বাদাম ভর্তা, লাল শাক যখন বাজার মূল্য কম থাকে আর সবজি হিসাবে আলু আর সাথে বাজারে কম দামি কিছু সবজি মিশিয়ে রান্না করা হয়।
শহীদ মুক্তার এলাহি হলের সম্রাট, রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থী বলেন, ডাইনিং এই খাবার খেয়ে আমাদের শরীর ভেঙে পরতেছে। আমাদেরকে একদিনের খাবার অন্য দিন বাসি করে খাওয়ানো হয়। একদিনের বেচে যাওয়া খাবার যেমন ডাল, ভাত, সবজিসহ তা পরে দিন এই বাসি খাবার হালকা গরম করে আমাদেরকে খাওয়ানো হয়। তাদেরকে জানানো হলে তারা এক দুই দিন বন্ধ থাকে, কয়েক দিন পরেই আবার চালো হয় বাসি খাবার খাওয়ানো। আমিষ বা পুষ্টি বলতে খাবারে কিছুই থাকে না। এই ভাবে চলতে থাকে আমার অতিদ্রুত অসুস্থ হয়ে পরবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, 'ডাইনিংয়ে খাবারের দাম পূর্বে দুপুর এবং রাত ৩০ টাকা ছিল এখন তা প্রতিবলা ৩৫ টাকা হয়েছে। এদিকে খাবারের মান বাড়েনি এই নিম্নমানের খাবার খেতে হয়চ্ছে আমাদের।আমরা খাবারের পূর্বে দামে ফিরিয়ে ও মান বৃদ্ধির জোর দাবি জানিয়েছেন'। এদিকে ডাইনিং এ খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে নিজ নিজ রুমে ব্যাক্তিগত বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহারের প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শিক্ষার্থী রাজু বলেন, অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় হলের ডাইনিং এ খাবারের ভর্তুকি দেয়, সেক্ষেত্রে আমরাও চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল গুলোর ডাইনিং এর ভর্তুকি যেন দেওয়া হয়। এতে করে খাবারে মান বৃদ্ধি হবে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে শিক্ষার্থী তাসলিমা বলেন, হলে খাবারের মান ভালো না, আমি খেতে পারি না। এখন আবার দাম বৃদ্ধি করেছি। তাই আমি নিজেই রান্না করে খাই।
শহীদ মুক্তার এলাহি হলের প্রভোস্ট ড. মো: রশীদুল ইসলাম ঢাকা প্রকাশকে বলেন, বাসি খাবার খাওয়া হয় এর আগেও অভিযোগ এসেছিল। এখন যেহেতু আবার নতুন অভিযোগ এসেছে আমি নিজেরে পর্যবেক্ষণ করবো। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট বিজন মোহন চাকী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে খাবারের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন / ফান্ড থেকে কোন ভর্তুকি দেওয়া হয় না যার কারণে খাবারের আগের মূল্য ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। আশাকরি দ্রুত একটা ব্যবস্থা হবে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে প্রভোস্ট মির তামান্না ছিদ্দিকা বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহার করা নিষেধ, মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়। যদি পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এএজেড