‘তারা আমার হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছি। তারা আমার হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে। আমি বলেছি আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেবে তাই হবে। তাদের কান্না কান্না ভাব ছিল।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্দেশিত তদন্ত কমিটির ডাকে বেলা ১২টার দিকে বাবাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে যান ফুলপরী খাতুন। পরে প্রক্টরিয়াল বডির নিরাপত্তায় নির্যাতনের ঘটনাস্থল দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে যান। সেখান থেকে একে একে ৩টি কমিটির মুখোমুখি হতে হয় তাকে। বারবার সাক্ষাৎকার দিতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসা-যাওয়ার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টার দিকে পর্যায়ক্রমে হল কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎকার দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। বেলা পৌনে ৩টার দিকে হল থেকে বের হন তিনি। এসময় মীর মশাররফ হোসেন ভবনে অবস্থিত আইন বিভাগে কমিটির আহ্বায়কের নিজ রুমে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। এসময় একই রুমে ভুক্তভোগীসহ ৫ অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অভিযুক্তদের গোপনে ক্যাম্পাসে আনা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর বিকাল ৪টার দিকে তারা কক্ষ ত্যাগ করেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িতে পৃথকভাবে ক্যাম্পাস থেকে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফুলপরী খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, আমি অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিয়েছি। তারা আমার হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে। আমি বলেছি আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেবে তাই হবে। তাদের কান্না কান্না ভাব ছিল।
আপনি তাদের দেখে ভয় পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো ভয় পায়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাকে একাধিক প্রশ্ন করা হলেও তিনি মুখ খুলেননি। অভিযুক্ত তাবাসসুম বলেন, আমি যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলে দিয়েছি। আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। অভিযুক্ত বাকিরাও কিছু বলেননি।
এসময় তদন্ত কমিটির সদস্যরাও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ভুক্তভোগীর নিরাপত্তাদানে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বুধবার অভিযুক্তদের গোপনে ক্যাম্পাসে আনা হয় বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ঘটনার পর আজকেসহ ৪ বার আসলাম। এভাবে আসা-যাওয়া করে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রতিবার আসতে ও যেতে প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এ ছাড়া প্রতিবার ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হয় যা আমার জন্য কষ্টকর। আমি তো আর প্রশাসনকে বলতে পারি না ক্যাম্পাসে থাকার কথা। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে তাহলে ভালো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সাজ্জাদুর রহমান টিটু বলেন, আমরা ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নিরাপত্তা দিয়ে কুষ্টিয়ার আলাউদ্দিন নগর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি। পরে তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাসায় চলে গেছেন।
এসজি