ফুরফুরে মেজাজে তদন্ত কমিটির সামনে ইবি ছাত্রলীগ নেত্রী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির ডাকে ক্যাম্পাসে এসেছেন অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী তাবাসসুম খাতুন। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারী) সকালে লোকচক্ষুর অন্তরালে কড়া নিরাপত্তার মাঝে তাদের ক্যাম্পাসে হাজির করেন প্রক্টরিয়াল বডি। অথচ শুধু ভুক্তভোগীকে নিরাপত্তাদানের ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল। পরে সকাল ১০ টার আগেই অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলের আইন বিভাগের ব্যক্তিগত কক্ষে নেওয়া হয়। চার ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর দেড়টার দিকে বের হন তারা।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আজকে দ্বিতীয় দিনের মতো তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশের নিয়ম নেই। আমাদের তদন্ত অনেকটা এগিয়েছে। এখনও প্রক্রিয়া চলমান তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবো।
এছাড়া সিসি টিভির ফুটেজ গায়েব হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমরা প্রভোস্টকে সিসিটিভির ফুটেজ আমাদের কাছে সরবরাহ করার জন্য বলেছি। কিন্তু তারা এখনও দিতে পারেনি। তারা বলছে, সিসিটিভির ব্যাপারটি আইসিটি সেলের টেকনিশিয়ানকে দেখিয়েছেন। ওটাতে কিছু ডিভাইস লাগবে। সেটার জন্য প্রভোস্ট ব্যবস্থা করছেন। দুই এক দিনের মধ্যে আমরা হয়তো তা পাবো।'
এদিকে ফুরফুরে মেজাজে কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের ওই নেত্রীর। সাক্ষাৎকার শেষে ফুরফুরে মেজাজেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি ও তার সহযোগী তাবাসসুম।
এসময় ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, আমার কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। আমার স্বাক্ষরিত চার পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য নিয়েছে। আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের মাধ্যমে আপনারা সবকিছু জানতে পারবেন আর কোন কমেন্ট করতে চাই না।
তার দ্বারা হলে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'তদন্তে রিপোর্ট যা আসবে, সেটাতো সত্যিটাই আসবে। স্যার- ম্যাডামদের তো ভরসা করেই কমিটিতে দেওয়া হয়েছে। তারা তদন্তে যা দিবে সেখান থেকেই আপনারা সত্যটা জেনে নিতে পারবেন।'
পূর্বে কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নিয়েও দলে কিভাবে পদ পেয়েছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কমিটিতে আসা না আসা সেটা তো আমি মন্তব্য করার বিষয় না। আপনারা বড়ভাইদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।' এছাড়া ঘটনার সত্যতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করেননি অভিযুক্ত।
আরেক অভিযুক্ত ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম খাতুন বলেন, আমি সবকিছু তদন্ত কমিটিকে বলেছি। আমি আর কিছু বলতে চাই না। এছাড়া হল ও শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত কমিটিও সোমবার দুই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সোমবার কমিটির সদস্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আ. ন. ম. আবুজর গিফারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালযয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর শাহবুব আলম। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি প্রথমদিনের মতো ক্যাম্পাসে তদন্ত কার্যক্রম শুরুও করেছেন।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) শাহেদ আরমান বলেন, ইবির ঘটনায় রবিবার বিকেলে হাইকোর্টের নির্দেশ স্যারের কাছে এসে পৌঁছায়। তারপর রাতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সোমবার থেকে তদন্ত শুরু। তদন্ত কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহবুব আলম বলেন, 'কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বসে আলাপ করে সোমবার সকাল থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কাজ করছি'।
এদিকে ছাত্রী নির্যাতনের প্রতিবাদে মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। সোমবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে তারা এ কর্মসুচি পালন করেন। এসময় তারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি ইমানুল সোহান, সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান সুইট, সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ওবাইদুর রহমান আনাস। এছাড়াও সংগঠনটির অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ওই দুই অভিযুক্ত ছাড়াও নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও তিন ছাত্রীর নাম অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। তারা হলেন আইন বিভাগের ছাত্রী ইসরাত জাহান মিম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন ঊর্মী ও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাওয়াবিয়া খাতুন। তারা তিনজনই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী। তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তারা। ইসরাত মীম বলেন, আমি নির্যাতনের সময় ছিলাম না। আমি আমার রুমেই ছিলাম। শুধু অন্তরা আপুর নির্দেশে ওই মেয়েকে ৩০৬ নম্বর রুম থেকে দোয়েল-১ নামক গণরুমে রেখে চলে আসি।
এএজেড