কড়া নিরাপত্তায় ইবি ক্যাম্পাসে ভুক্তভোগী, তদন্ত শুরু
ঘড়ির কাটা সাড়ে বারোটা ছুঁই ছুঁই। হঠাৎ সা' করে মেইন গেট ক্রস করল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের ব্যবহৃত মাইক্রোবাস। ভেতরে বসে আছেন ভুক্তভোগী ফুলপরি খাতুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর জয়শ্রী সেন, ভুক্তভোগীর বাবা ও মামা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে কড়া নিরাপত্তায় পুলিশ প্রশাসন। তড়িৎ গতিতে মাইক্রোবাস টিএসসিসি পার হয়ে বিবিএ ফ্যাকাল্টি হয়ে পশ্চিম দিকে চলে গেল। পরে শেষমেশ গাড়ি থামলো দেশব্যাপী আলোচিত ছাত্রলীগ নেত্রী কর্তৃক রোমহর্ষক নির্যাতনের ঘটনাস্থল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে।
আজ শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এসময় তদন্তের স্বার্থে ভুক্তভোগী ছাত্রী তার অভিভাবকসহ ঘটনার বর্ণনা দিতেই ক্যাম্পাসে ফিরেছেন বলে নিশ্চিত করেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, 'তদন্তের স্বার্থে আমরা তাকে হলে ডেকেছি।'
পরে প্রভোস্টের কার্যালয়ে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পৃথক পৃথকভাবে ভুক্তভোগীর বক্তব্য শোনেন। তার থেকে লিখিত অভিযোগও নেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া ভুক্তভোগীকে নিয়ে যেসব রুমে তাকে নির্যাতন করা হয় সেখানে, ৩০৬ নং রুম এবং হল ডাইনিং পরিদর্শন করেন তদন্তে থাকা সদস্যরা। পরে তদন্ত কমিটির সঙ্গে বিকেল পাঁচটার দিকে হল থেকে বের হন ভুক্তভোগী ও তার অভিভাবক।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, সদস্য অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী ও ড. মুর্শিদ আলম।
এছাড়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। হল কর্তৃক গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ড. আহসানুল হক, সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যান্য সদস্যরা। এছাড়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদসহ প্রক্টরিয়াল বডির অন্যান্য সদস্যরা।
এ বিষয়ে হল কর্তৃক গঠিত কমিটির আহবায়ক আহসানুল হক বলেন, আমরা আজ তদন্তের প্রথমদিন ভুক্তভোগীর সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি, তার বক্তব্য শুনেছি এবং তাকে নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এছাড়া ঘটনা সম্পর্কে গণরুমগুলোতে অবস্থানকৃত মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি।
এদিকে ঘটনার রাতের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। হল কর্তৃপক্ষের কাছে এ ফুটেজ সংগ্রহের কথা জানতে চাইলে তারা তা প্রদানে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে হলের হাউজ টিউটর ও হল কমিটির আহবায়ক আহসানুল হক বলেন, মূলত ঘটনাস্থলের সামনে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো নেই। হলের রুমগুলোর বাইরে এবং অফিসের দিকে নিরাপত্তার খাতিরে সিসিটিভি বসানো আছে। তবে ডাইনিংয়ের পাশে একটি সিসিটিভি আছে। টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে তা এখনও হাতে পাইনি। এ বিষয়ে আইসিটি সেলকে অবহিত করা হয়েছে।
এ দিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা হলের উদ্ভুত ঘটনার বিষয়ে কারোর নিকট কোনো তথ্য প্রমাণাদি থাকলে তা লিখিত আকারে বা সশরীরে কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলের অফিসে সোমবার সকাল ১১ টার মধ্যে জমা দেয়ার জন্য বলা হলো। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি মিটিং শুরু করেছি সকাল ৯টায়। তদন্তের সাপেক্ষে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি। প্রশাসন থেকে তদন্তের স্বার্থে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। আমরা সরেজমিনে তদন্ত করতে হলে এসেছি। ঘটনাস্থলসহ চার জায়গায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি।
ভুক্তভোগীর বক্তব্য ঘন্টাব্যাপী শুনেছি। এছাড়া গণরুমের মেয়েদের বক্তব্য শুনেছি। সোমবার সকাল ১০ টায় তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের ডেকেছি। প্রক্টরিয়াল বডিকে ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা প্রদানে সর্বোচ্চ নির্দেশনা দিয়েছি। সবমিলিয়ে তদন্তের কাজে অনেকদূর এগিয়েছি।
ভুক্তভোগী ফুলপরি খাতুন বলেন, আমি এখন নিরাপদে আছি। তদন্ত কমিটি সেদিনের ঘটনার বর্ণনা শুনেছে এবং ৪-৫ পেজের আমার স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ নিয়েছে। আজ আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। পরবর্তীতে তদন্তের স্বার্থে আবার ডাকলে আসবো। আমি দোষীদের সর্বোচ্চ বিচার চাই।
ভুক্তভোগীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সুষ্ঠু তদন্তের পর ন্যায়বিচার করা হবে। আমরা এখন বাড়ি পৌছানো পর্যন্ত নিরাপদে আছি। আমি চাই দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক যেন এমন ঘটনা দেশে তথা সমস্ত বিশ্বে আর না ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, সারাদিন ভুক্তভোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানে যা যা করণীয় আমরা তাই করেছি। দুপুরে মেয়েটি তার পরিবারসহ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার আগে বক্তব্য প্রদান শেষে তিনি ও তার পরিবার নিরাপদে বাড়ি ফিরে গেছেন। হাইকোর্টের তদন্ত কমিটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আইন প্রশাসন দেখবেন।
এএজেড