নিরাপত্তাহীনতায় ইবির সেই ছাত্রী, হল ছাড়ছেন গণরুমের ছাত্রীরা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এক নবীন ছাত্রী র্যাগিংয়ের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটছে তার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ক্যাম্পাসে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। আমি শারীরিকভাবেও অসুস্থ্। বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছি।
এদিকে হলে র্যাগিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলের গণরুমে থাকা ছাত্রীরা নিজ নিজ বাড়ি চলে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আতঙ্কে ও পারিবারিক চাপে তারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের একাধিক ছাত্রী বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনায় পরিবার জানতে পেয়ে বাসায় যেতে বলেছে। এছাড়াও হলে একটা আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। পড়াশুনার পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এবিষয়ে শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম বলেন, অনেকেই হয়তো ভয়ে চলে যেতে পারে। আমি এর বেশিকিছু জানিনা। এদিকে ছাত্রীকে (ভিকটিম) নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তদন্ত করে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া তদন্ত চলাকালে নির্যাতনকারী দুই ছাত্রলীগ নেত্রী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী তাবাসসুমকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বিটিআরসিকে ভিডিও অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আজগর হোসেন তুহিন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার পর উপাচার্যের মৌখিক আদেশে অভিযুক্তদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছি। তারা সন্ধ্যার পর হল ছেড়ে চলে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, হাইকোর্টের আদেশ অবগত হয়েছি। আমি ইতোমধ্যে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ প্রশাসনকে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি জানিয়েছি।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েটি কোথায় আছে সেটাই তো আমরা জানিনা। খবর নিয়েছি কিন্ত সে হলে নাই। মেয়েটার পরিবারের সঙ্গে আমাদের দেখা করার দরকার ছিলো। সে কোথায় আছে, না আছে সেটা এখনও জানিনা।
প্রসঙ্গত, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে। এই ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাচ্ছুমসহ আরও ৭/৮ জন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।
এএজেড