অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে স্বপ্নসিঁড়ি
অধিকার বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের আলোর পথ দেখানোর এক উদীয়মান সূর্য তারুণ্যনির্ভর সংগঠন স্বপ্নসিঁড়ি। কেউ কেউ শহরের আশেপাশে, ফুটপাতে প্লাষ্টিক, বোতল, পলিথিন কুড়াত, ভিক্ষা বৃত্তি, কেউ বা বাসা বাড়িতে কাজ করাসহ এমনকি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তো। এই শিশুদের নিয়ে অক্ষর জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিক বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার এ কাজটি করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পড়ুয়া এক ঝাক তরুণ শিক্ষার্থীরা।
'হাত বাড়াই মানবতার সেবায়, লক্ষ্য মোদের আকাশ ছোঁয়ায়' এই স্লোগান সামনে রেখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় ৩রা মার্চ ২০১৮ সালে পথশিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বপ্নসিড়ি পাঠশালা।
রংপুর বাবুপাড়া রেলস্টেশন এলাকার শুক্রবার এবং শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠশালায় চলে পাঠদান। এই পাঠশালায় বর্তমানে ৮২ জন শিশু শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। ৮২ জন শিশু শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী পাঠদান করাছেন।
এখানে অধিকার বঞ্চিত শিশুদের জন্যে বিনামূল্যে পাঠদানের পাশাপাশি বিনামূল্যে বই, কলম, খাতা ও ব্যাগসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়। পরিক্ষা মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে পুরষ্কার প্রদান এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয় যাতে করে শিশুশিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে দূরে সরে না যায়। পাশাপাশি অভিভাবকদের নিয়ে শিক্ষার গুরুত্ব দিক আলোচনা করা হয়, যাতে করে তাদের শিশুদের পাঠদানের উৎসাহ দেয়।
স্বপ্নসিড়ি পাঠপালার লক্ষ্য হলো অধিকার-বঞ্চিত প্রতিটি শিশু যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ও পরবর্তীতে এই শিশুদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা। স্বপ্নসিঁড়ি পাঠশালার কোন শিশুর যেন আর্থিক অভাবের কারণে পড়ালেখা বন্ধ না হয়ে যায়, সেই ব্যাপারে সচেতন থাকা। একটি আর্থিক তহবিল গঠন করা। অর্থের অভাবে স্বপ্নসিঁড়ি ও স্বপ্নসিঁড়ি এর বাইরের কোন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অনিশ্চিয়তা দেখা দিলে সংগঠন যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে।
শিশুশিক্ষার্থী রোজা বলেন, আমি এখানে এসে অ, আ, ই, ঈ শিখেছি A, B, C, D শিখেছি, ১, ২, ৩, ৪ শিখেছি। এখানে অনেক সুন্দর করে আমাদেরকে পড়ায়। শিশুশিক্ষার্থী ঋতু বলেন, আজ আমি প্রার্থনা কবিতা, নামতা শিখেছি, আপু ও ভাইয়ারা আমার নাম কিভাবে লিখতে হয় তা শিখেছেন। শিশুশিক্ষার্থী মায়শা বলেন, বড়দের দেখলে সালাম দিতে হয়, বড়দের সম্মান করতে হয় এই সব কিছুই ভাইয়া ও আপুরা শিখিয়েছে। আমি প্রতি শুক্রবার ও শনিবার পড়তে আসি, ভাইয়া ও আপুরা আমাদেরকে অনেক আদর করে।
স্বপ্নসিঁড়ির সাধারন সম্পাদক মো: রাশিদুল ইসলাম রিপন জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য স্বপ্নসিঁড়ি সংগঠন প্রসংসার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অধিকার বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে কাজ করে আসছে। এছাড়াও নানা ধরনের স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজ করে থাকে স্বপ্নসিঁড়ি'র স্বেচ্ছাসেবীরা। স্বপ্নসিঁড়ি সর্বদা বিশ্বাস করে মানবিক সমাজ গঠনে সকলের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জেমি আক্তার বলেন, আমার মন খারাপ থাকলেও এখানে এসে বাচ্চাদের পড়ালে মন ভালো হয়ে যায়। মাঝে মাঝে বাচ্চা অনেক দুষ্টমি করে তা পরেও এখানে পড়াতে ভালো লাগে এবং এখানে পড়াতে এসে আমি খুব খুশি। নিজেকে ধন্য মনে করি এই ধরনের সমাজিক কাজ করার সুযোগের জন্যে।
বেরোবির ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ নাজমুস সাকিব বলেন, ভালোলাগা ও ভালোবাসার আরেক নাম স্বপ্নসিঁড়ি পরিবার। এই পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি গর্বিত। স্বপ্নসিঁড়ি এমন একটি জায়গা যেখানে গেলে মানসিক প্রশান্তি ও ভালবাসা মিলে। শত ব্যস্ততা ও ঝামেলার মধ্যেও এই পরিবারে গেলে যে প্রশান্তি পাওয়া যায় তা আসলে আর কোথাও পাওয়া যাবে না আর কোটি টাকা দিয়েও তা কেনা সম্ভব না।
এএজেড