এক যুগেও সম্পূর্ণ হয়নি বেরোবির স্বাধীনতা স্বারকের কাজ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ও অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধাদের প্রতিকৃতি সম্বলিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত 'স্বাধীনতা স্বারক' এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের এক যুগেও সম্পন্ন হয়নি। এখনো অসম্পন্ন অবস্থায় কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে থাকা স্বাধীনতা স্মারকটি। বিভিন্ন দিবসে অপূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা স্মারকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের দক্ষিণ পার্শ্বে নির্মাণ অসম্পন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা স্মারকটি। ১১ হাজার ৬৯৬ বর্গফুট আয়তনের বেদির উপর তিনটি স্তম্ভ দ্বারা তৈরি হয়েছে স্মারকটি। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ স্তম্ভের উচ্চতা ৫৫ ফুট। দ্বিতীয়টির ৩৫ ও তৃতীয়টির উচ্চতা ২৫ ফুট। এই গুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে বুঝানো হয়েছে। ফ্রিঞ্জ গুলোকে একত্রিত করার জন্য ২০ ফুট উচ্চতায় একটি শুরম্ন ছাঁদ হবে। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করেছে তা বুঝানো হয়েছে।
এখনো স্বাধীনতা স্মারকের দুই দিকেই মাটি ভরাটের কাজ বাকি। মেঝেতে বসানো হয়নি মার্বেল পাথর। ভাস্কর্যে স্তম্ভের গায়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিসহ পোড়ামাটি দিয়ে কারুকার্যের কাজও সম্পন্ন হয়নি। তিন স্তম্ভের পেছনের দেয়ালের গায়ে নেই টাইলস ম্যুরাল। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য স্বাধীনতা স্মারকের গায়ে অযত্নে কালো শ্যাওলার দাগও পড়েছে। বিভিন্ন দিবসে বাধ্য হয়েই অপূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা স্মারকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হয়।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মু. আব্দুল জলিল মিয়ার আমলে জনতা ব্যাংকের অনুদানে স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বরে স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী। কিন্তু কিছুদিন পর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ আসলে পুনরায় এর নির্মাণ কাজ শুরু করলেও আবারও তা বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. হসিবুর রশীদ আমলে এখনো নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগের ১২তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন- স্বাধীনতার স্মারকটির উপযুক্তভাবে সম্মান করা হচ্ছে না, অসম্পূর্ণ কাজের কারণে। অনেকেই জুতা পায়ে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করে। স্মারক সব সময় ময়লা আবর্জনায় অপরিষ্কার থাকে, এটা আমাদের স্বাধীনতা চেতনাকে অপমান করা হয়। কাজটি সম্পন্ন হলে এভাবে কেউ অবহেলা করতো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আফিয়া আজাদ বলেন- স্বাধীনতা স্মারকের কাজটি সম্পন্ন হলে ক্যাম্পাসটি আলরো গোছালো থাকতো আমাদের কাছে ভালো লাগতো। যেই রকম কাজ হওয়ার কথা ছিল সেই রকম কাজ হচ্ছে না। কাজটি সম্পন্ন হলে ক্যাম্পাসের ভিতরটি পরিবর্তন হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে আসা দর্শনার্থী রহিম উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতা স্মারকটি যদি সম্পূর্ণ কাজ হয়, তাহলে এটা দেখতে ভালো লাগতো এবং সম্মানের একটা জায়গা হতো। বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছুই ভালো স্বাধীনতার চেতনার জন্যে তৈরি এই স্মারকটি সম্পূর্ণভাবে ফেলে রাখা অসম্মানজনক।
বেরোবির বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেছেন, স্বাধীনতা স্মারকজাতীয় চিন্তা চেতনার প্রতীক। এই স্বাধীনতা স্মারক এভাবে অসম্পন্ন কাজ করে রাখা ঠিক না। স্বাধীনতা স্মারকটি কাজ অতিদ্রুত সম্পূর্ণ করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মোঃ শাহরিয়ার আকিফ বলেন, স্বাধীনতা স্মারকটি ইউজিসি প্রতিনিধি সরোজমিনে এসেছে একবার তদন্ত করে গেছেন। আমাদের নতুন উপাচার্য যোগদান করার পর তাদেরকে বারবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ইউজিসি এখনো পর্যন্ত চিঠির কোন উত্তর দেয়নি।
এএজেড