নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় গাড়ি চাপায় এক নারীর নিহতের ঘটনার পর নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (৪ ডিসেম্বর) টিএসসি সংলগ্ন সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ইনিস্টিটিউটের কয়েক শ শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা মুখ ও চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে এক মিনিট নীরবতা পালন করে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিকী বিক্ষোভ করেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
বিক্ষোভকারীরা এ সময় তারা কর্মসূচিতে ‘দাবি মোদের একটাই নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘অনিয়মের ঠাঁই নাই’, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরে, প্রশাসন কী করে?’, ‘বিবেককে প্রশ্ন করি, এবার যদি আমরা মরি’– ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। সমাবেশ থেকে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীরা।
দাবি আদায়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দিয়ে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
মূল সড়কগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন শিক্ষার্থীরা
বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্যাম্পাসের কয়েকটি প্রবেশমুখে বাঁশের ব্যারিকেড বসিয়ে দেয়। ক্যাম্পাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কারও গাড়ি তারা ক্যাম্পাসের ভেতর ঢুকতে দিচ্ছে না। হ্যান্ড মাইক দিয়ে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করছে, টিএসসিতে কোনো বহিরাগত থাকতে পারবে না। আজকের টিএসসি হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য।
এ সময় এলাকাগুলো অনেকটা যানবাহন শূন্য দেখা যায়। শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন নামে এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে লিখেছেন, এটা এই মুহূর্তের টিএসসি। শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতিতে রাস্তা ব্লক করে বহিরাগত কোনো গাড়ি, মোটরসাইকেল প্রবেশ রোধ করা হয়েছে। এভাবে ক্যাম্পাস হোক যানজট মুক্ত, শব্দদূষণ মুক্ত। আর কোনো প্রাণ এই ক্যাম্পাসে ঝরবেনা...!
বহিরাগত শূন্য ক্যাম্পাস সম্পর্কে আইরিন আখি নামে আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ক্যাম্পাস অলরেডি ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত; শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব দিলে ২৪ ঘণ্টায় সম্ভব।
আহমেদ উল্লাহ সিয়াম নামে এক শিক্ষার্থী বলেছেন, আজকে ভিসি ও প্রক্টর স্যারের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখা করে এক ঘন্টা আলোচনা করি৷ উনারা আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন, আমরা আপাতত বাস্তবায়নের প্রতি দৃষ্টি রাখছি৷ বাস্তবায়ন হতে না দেখলে আমরা আবার মাঠে নামতে বাধ্য হব৷
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকালে রুবিনা আক্তার মোটরসাইকেলে করে হাজারীবাগ যাওয়ার পথে শাহবাগ থানা পার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলামের মাজার এলাকায় এলে একটি প্রাইভেটকার পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে রুবিনা আক্তার গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। এ সময় গাড়ির বাম্পারে তার পোশাক আটকে যায়।
পরে ওই চালক গাড়ি না থামিয়ে রুবিনাকে নিয়েই বেপরোয়া গতিতে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেতের দিকে যেতে থাকেন। এরপর সাধারণ জনতা নীলক্ষেত মোড়ে ঢাবির মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ এলাকায় গাড়িটি আটকিয়ে রুবিনাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে তিনি মারা যান।
এমএমএ/