১০ বছরেও অনার্স শেষ করতে পারেননি ছাত্রলীগ নেত্রী
২০১২-১৩ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করেন ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যও। কিন্তু ৯ বছর ১০ মাস পার হতে চললেও এখনও তিনি তৃতীয় বর্ষের গণ্ডি পেরুতে পারেননি। যদিও তার বিভাগের সহপাঠীরা ২০১৮ সালে অনার্স শেষ করেছেন। জানা যায়, সম্প্রতি তিনি ৫৩তম সমাবর্তনের গাউন পড়ে অংশগ্রহণ করেছেন। এর একটি ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। অবশ্য সেটা তিনি অস্বীকার করে বলেন, ছবি তো যে কেউ তুলতে পারেন।
ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থীরাই ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের প্রথম ব্যাচ। আর সেই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিলোত্তমা শিকদার। এক বছরের সেশনজটসহ সেই ব্যাচের নিয়মিত অনার্স শেষ হয় ২০১৮ সালে। আর তিলোত্তমা সেই ব্যাচের সঙ্গে সর্বশেষ ২০১৬ সালে তৃতীয় বর্ষের পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু পঞ্চম সেমিস্টারের রেজাল্ট শিটে তার নাম না আসায় তিনি ষষ্ঠ সেমিস্টারের চুড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের একটি আদেশে বলা আছে, আট বছরের বেশি কোনো শিক্ষার্থী ঢাবির নিয়মিত ছাত্র হিসেবে অধ্যয়ন করতে পারবে না। এই আট বছরের ভেতর ছয় বছরে স্নাতক ও দুই বছরের মধ্যে স্নাতকোত্তর করতে হবে। কিন্তু তিলোত্তমা এখনো অনার্সের গণ্ডিও পার হতে পারেননি।
এ বিষয়ে বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বিভাগ সেমিস্টার সিস্টেম। দুই সেমিস্টার মিলিয়ে একটা ইয়ার। প্রতি ইয়ারের দুই সেমিস্টারের কোনও একটির যেকোনো কোর্সে ফেল হলেও যদি কারো গড় জিপিএ ২.২৫ এর উপরে হয় তাহলে সে পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারবে। আর যে কোর্সগুলোতে সে ফেল করেছে পরবর্তী দুইটা ব্যাচের সঙ্গে সেই কোর্সগুলোর ইমপ্রুভমেন্ট দিতে পারবে। আর যদি দুইটা ব্যাচ ওভার করে ফেলে তাহলে তাকে স্পেশাল অনুমতি নিয়ে সেই কোর্সের পরীক্ষা দিতে হবে।‘
তিনি বলেন, ‘তিলোত্তমার প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের গড় জিপিএ ২.২৫ এর উপরে না আসায় তার নাম রেজাল্ট শিটে আসেনি। তার প্রথম সেমিস্টারের ১টি, দ্বিতীয় সেমিস্টারের দুইটি আর চতুর্থ সেমিস্টারে একটি কোর্সে ফেল আছে। সুতরাং গড় জিপিএ ২.২৫ এর উপরে না আসার এটাও একটা কারণ হতে পারে। এখন তিনি যদি চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হতে চান তাহলে তাকে পূর্বের বাকি থাকা চার কোর্সের ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে হবে। এসব পরীক্ষা দিয়ে সেসব পরীক্ষার রেজাল্ট মিলিয়ে যদি তার সিজিপিএ ২.২৫ এর উপরে হয় তাহলে তিনি চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পারবেন।’
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট শিটে যখন তিলোত্তমার নাম আসেনি সেই সময় থেকে চলতি বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি বাকি থাকা চার কোর্সের কোনও ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দেননি এবং পরীক্ষার জন্য আবেদনও করেননি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, এখন কেউ যদি ফলোন্নয়নের জন্য আবেদন না করেন তাহলে তো আমরা কিছু করতে পারি না। শিক্ষার্থীই তো সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি পরীক্ষা দেবেন কী দেবেন না।
জানা গেছে, সর্বশেষ গত মাসের শেষ সপ্তাহে চার কোর্সের ফলোন্নয়ন পরীক্ষার জন্য স্পেশাল অনুমোদনের আবেদন করেন তিলোত্তমা শিকদার। সেই সময় অনুষ্ঠিত হওয়া ডিনস কমিটির সভায় এটি অনুমোদন হয়।
বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, তার আবেদন এপ্রুভ হয়েছে। এখন তার এই পরীক্ষাগুলো কবে নেওয়া হবে সেটি বিভাগের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একটা নিয়মিত পরীক্ষার যত কার্যক্রম স্পেশাল পরীক্ষারও তত কার্যক্রম। সেই স্পেশাল পরীক্ষা একজন দিলেও। এখন তার জন্য আমাদের পরীক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে, রুটিন প্রণয়ন করতে হবে। তার পরীক্ষা নেওয়ার পর দুইজন শিক্ষক ট্যাবুলেশন করবে। এরপর রেজাল্ট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিলোত্তমা শিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ২০১২-১৩ সেশনে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু বিভাগের প্রথম ব্যাচ হওয়ায় আমাদের দুই বছর লেট হয়েছে। আমি অনার্সের সব পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু দুই সেমিস্টারে ফেল থাকায় সার্টিফিকেট তুলতে পারিনি। তৃতীয় ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে আমার ফেল আছে। এখন এসব পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমি আবেদন করেছি এবং অনুমতি পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে আরও ৬ জন আছে তারাও পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। লেট হলেও বিশেষ বিবেচনায় এবং নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। প্রতি কোর্সের জন্য ১২ হাজার টাকা করে লাগছে।
একজন শিক্ষার্থী কত বছরের মধ্যে অনার্স শেষ করতে পারে জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৬ বছরের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী অনার্স কমপ্লিট করতে হবে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক কিছু হয়। অনেক সময় বিভাগ থেকে পরীক্ষা নিতে দেরি হয় কিংবা করোনার কারণে লস হলে সেখানে তো শিক্ষার্থীর দোষ নেই। সেক্ষেত্রে তো তাকে সুযোগ দিতে হবে। তবে বিস্তারিত আমার জানা নেই, দেখে জানাতে হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে ছয় বছরের মধ্যে অনার্স শেষ করতে হয়। তার পরীক্ষার অনুমোদনের বিষয়টা কবে এপ্রুভ হয়েছে সেটি আমার মনে পড়ছে না। সর্বশেষ ডিনস কমিটিতে এ রকম কিছু এপ্রুভ হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না।
১০ বছর পর্যন্ত ছাত্রত্ব থাকার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে মাকসুদ কামাল বলেন, কারও কারও ক্ষেত্রে যদি টাইমবার্ড না হয় কিন্তু ফেল করা কোনও একটা কোর্সের পরীক্ষা দিলে যদি তার সিজিপিএ ২.২৫ এর উপরে এসে উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে আমরা সেটির অনুমোদন দেই। আর টাইমবার্ড হয়ে গেলে তো এ রকম অনুমোদন আমরা দেই না। এক্ষেত্রে কী হয়েছে সেটি আমার জানা নেই।
উল্লেখ্য, তিলোত্তমা শিকদার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
কেএম/এসআইএইচ