আবরার ফাহাদের স্মরণসভা পণ্ড করতে ছাত্রলীগের হামলা!
ছাত্রলীগের হামলায় নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত স্মরণসভায় ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা বলেন, আবরার ফাহাদের স্মরণসভা পণ্ড করতেই মূলত ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্তত ৪০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত এক সমাবেশে হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। এ কারণে আবরার ফাহাদের স্মরণসভা পণ্ড হয়ে যায়। ছাত্রলীগ চায় না আবরার ফাহাদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হোক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী স্মরণ সভা শুরুর পরপরই প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতে আমাদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আমাদের অন্তত ২০-২৫ জন আহত ও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা কোনো দলীয় ব্যানারে এ প্রোগ্রাম করিনি। আমরা প্রোগ্রাম করেছি আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে। আমরা এই ন্যাক্কারজনক হামলায় ধিক্কার জানাই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খানের নেতৃত্বে শতাধিক নেতা-কর্মী হামলা চালায়। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা স্মরণসভা আয়োজকদের সবাই ঢাবি শিক্ষার্থী কি না জানতে চায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে তারা হামলা চালায়। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। স্মরণসভার জন্য আনা অর্ধশতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করা হয় ও ব্যানার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, যারা এখানে এসেছে তারা সবাই বহিরাগত। ঢাবি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা চায় না। আমরা হামলা করিনি। আয়োজকরা ঢাবি শিক্ষার্থী কি না জানতে চাইলে তারা আমাদের উপর হামলা চালায়।
হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এমএম মহিন উদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান, সাংগঠনিক নাজিম উদ্দীন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক আল আমিন রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক শিমুল খান, আব্দুর রাহিম, জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেনসহ কেন্দ্রীয়, ঢাবি ও হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী অংশ নেয়।
সংঘর্ষে ছাত্রলীগেরও বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীরা আহত হন বলে জানান ছাত্রলীগের সহ সভাপতি কামাল খান। তিনি বলেন, ছাত্র অধিকারের নেতা-কর্মীরা আমাদের উপর আগে হামলা করে। পরে ঢাকা মেডিকেল থেকে তাদেরকে পুলিশের সহযোগিতায় শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, ছাত্রলীগের হামলায় আমাদের ১৫ নেতা আহত হয়েছেন। তাদেরকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল আসলে ছাত্রলীগ এখানেও হামলা করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি (অপারেশন) নুর মোহাম্মাদ বলেন, বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়েছে। তবে কতজনকে আটক করা হয়েছে তা জানাননি তিনি।
কেন ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা করছে বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের আমরা আটক করেছি।
কেএম/এসজি