রাবির ইনস্টিটিউট অব বায়ো সায়েন্সেসের বিপক্ষে অনেক র্দুনীতির অভিযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
অধ্যাপকদের কয়েক মাসের বেতন বাকি, ইন্সটিটিউট ভবনের ভাড়া বাকি, লাইব্রেরি ও ল্যাবের সরঞ্জাম ক্রয়ের বরাদ্দকৃত টাকা লোপাট, অদক্ষ ও অযোগ্য ঘনিষ্ঠজনদের শিক্ষক ও কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়াসহ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২ বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার চত্ত্বরে অনিয়ম রোধে ৬ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা।
তাদের দাবিগুলো হলো, কার্যকর গভার্নিং বডি গঠন, অবৈধ হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতি রোধ, স্থায়ী ক্যাম্পাস ও স্বাভাবিক এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত, যোগ্য ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, ল্যাব ও লাইব্রেরির পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত, ধারাবাহিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ও সেমিস্টার ফি নিয়ে যারা অনিয়ম- দুর্নীতি করেছেন সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাইমুর রহমান সারুল বলেন, ‘ভর্তির শুরুতে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধার নামে আমাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়ে এই ইন্সটিটিউটে ভর্তি হতে উৎসাহিত করেন তারা। প্রতিষ্ঠানকে আই.বি.এ’র মতো ইন্সটিটিউট হিসেবে উপস্থাপন করেন ও হলব্যতিত সকল সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে ভর্তি কার্যক্রম থেকে শুরু করে আমাদের ভাইভা রাজশাহী ক্যান্সার হাসপাতালের পাশে অবস্থিত একটি ভবন যা বর্তমানে আলো আশা স্কুল নামে পরিচিত, সেখানে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিপরীত পার্শ্বে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে আমাদের ক্লাস শুরু করেন।’
বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বিভিন্ন আশার বাণী শুনিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করেন। যখন আমাদের সামনে তাদের প্রতারণাপূর্ণ আচরণ দৃশ্যমান হয়, তখন আমরা প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদের ফলে তারা আশ্বাস দেন-বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের পাশে জায়গা কেনা হয়েছে। নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করে ইন্সটিটিউটকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করা হবে। বছর পেরোলেও এমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখিনি।’
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘আমাদের ৪ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড.এফ.এম. আলী হায়দার, ড. হাফিজুর রহমান, ড.এম মঞ্জুর হোসেন ও বোটানির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহানের ছেলে মুশফিক সোবহান। তবে ইন্সটিটিউট কার্যক্রমে আমরা ড.এফ. এম. আলী হায়দার ও ড. হাফিজুর রহমান স্যারের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখতে পাচ্ছি।’
সারুল বলেন, ‘অধ্যাপকদের দুর্নীতি ও অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। চলাকালীন সময়েই গভার্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের একটি বিভাগে ড.মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং আরেকটিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই ড. হাফিজুর রহমান ও এফ. এম. আলী হায়দার দুর্নীতির সুযোগ না থাকায়, তাদের অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাঘাত ঘটায় বিভিন্নভাবে পরিচালক ড. হাবিবুর রহমানকে অপমান ও লাঞ্ছিত করে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিতে বাধ্য করেন। ড. হাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই পরিচালকের আসনে বসে পড়েন।’
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালক ড. হাফিজুর রহমান তত্ত্ববধানে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে। শিক্ষকদের কয়েক মাসের বেতন বাকি, নিয়োগ আটকে রাখা, ইন্সটিটিউট ভবনের ভাড়া বাকি রাখা, দক্ষ ও যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও ঘনিষ্ঠজনদের শিক্ষক ও কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া, লাইব্রেরি ও ল্যাবের সরঞ্জামের রশিদ মোতাবেক পর্যাপ্ত পরিমাণে বই ও যন্ত্রপাতি না থাকা অন্যতম।’
তারা জানিয়েছেন, ‘ড. এফ. এম. আলী হায়দার ও ড. হাফিজুর রহমান পরিকল্পনা করে ২০২০-’২১ সেশনে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের আবেদন ফি ব্যক্তিগত একাউন্ট করে টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই তারা বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত একাউন্ট ব্যবহার করে সেমিস্টার ফি গ্রহণ করেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক ড. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবি মিথ্যা বলব না। নতুন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নতুন ব্যাচ ভর্তি করতে প্রশাসন থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এ বছর কোনো নতুন ব্যাচ ভর্তি করিনি।‘
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সুলতান-উল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সেহেতু শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষার সুনিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক পাঠদান কর্মসূচি পালন করে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম সুনিশ্চিত করতে খোঁজ, খবর রাখা আমাদেরও দায়িত্ব। তাই তাদের পাঠদান কার্যক্রম ও আর্থিক বিষয় দেখভালের জন্য ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে।’
ওএফএস।