জাবিতে বন্ধই হচ্ছে না ‘র্যাগিং’
রাতে নামলেই আতঙ্ক ভর করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলোর নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে। ‘র্যাগিং’ নামক ভয়ংকর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় অনেককেই। আদব-কায়দা শেখানোর নামে চলে এসব নির্যাতন। দীর্ঘদিন ধরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অপসংস্কৃতির অভিযোগ রয়েছে। বারবার এমন অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনিক নীরবতার কারণে কোনো সুরাহা হচ্ছে না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
ঘড়ির কাটায় তখন রাত ১০টা। জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী ছোট একটা রুমে। অপেক্ষা করছেন সিনিয়ররা আসবেন, কথা বলবেন তাদের সঙ্গে। নবীন শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ভয়ের চাপ। সিনিয়রদের সামনে কোনো ধরনের ভুল করলেই সম্মুখীন হতে হবে কান ধরে উঠ-বস, জানালার সঙ্গে ঝুলে থাকা, একনাগাড়ে লাফালাফি করাসহ নানা ধরনের নির্যাতনের। ভুক্তভোগীদের বর্ণনায় এমন দৃশ্য উঠে এসেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আবাসিক হলের গণরুমে থাকা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা রাতভর র্যাগিং নামক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের বিরুদ্ধে। যদিও তারা এসব অস্বীকার করেছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সিট সংকটের কারণে গণরুমে রাখা এসব শিক্ষার্থী প্রথম দিন থেকেই র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গণরুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। কোনো কোনো হলে ব্লকভেদে (সভাপতি-সেক্রেটারি) দুইবার করেও গণরুমে এসে র্যাগ ফাঁপর চালাচ্ছেন শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা।
পরিচিত হওয়া, পরিচয় দিতে শেখানো, আদব-কায়দা শেখানো, খোঁজখবর নেওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে তারা গণরুমে যান। এসব সিনিয়র রাত ১০টা থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত গণরুমে অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন করেন। পান থেকে চুন খসলেই শাস্তি। কান ধরে উঠাবসা করানো, জানালার সঙ্গে ঝুলানো, একনাগাড়ে লাফাতে বাধ্য করাসহ নানা ধরনের শারীরিক শাস্তি দিচ্ছেন তারা।
গণরুমে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কোথাও থাকার জায়গা নেই, তাই বাধ্য হয়ে গণরুমে থাকছেন তারা। সিনিয়ররা প্রতি রাতেই আদব-কায়দা শেখানোর নামে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেন।
এক শিক্ষার্থী বলেণ, ‘বিভিন্ন দোষ খুঁজে বের করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতন চালান ভোর পর্যন্ত। সারাদিন ক্লাস করে রাতে যদি ঘুমাতে না পারি তাহলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেব কীভাবে।’
হলে র্যাগিংয়ের ভয়াবহতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে মেসে থেকে কিংবা ঢাকা থেকে এসে ক্লাস করছেন বলেও তারা জানান।
এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, 'ছাত্রলীগের কোনো কর্মী যদি এধরনের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকে। র্যাগ ফাঁপর ছাত্রলীগ সমর্থন করে না।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, এখন অব্দি যেসব হল থেকে অভিযোগ পেয়েছি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। অভিযোগটা যার বিরুদ্ধেই হোক।
এসএন