দুর্গাপূজার আমেজ নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে
আর মাত্র কয়েকদিন। এরপরই পালিত হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। নানা অনুষ্ঠানে পুরান ঢাকার মানুষের উৎসবের অন্যতম কেন্দ্র হলেও এবার পূজায় রংহীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। এবারও জবিতে আয়োজন করা হচ্ছে না দুর্গোৎসব। সময় ও বাজেট স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে এবার দুর্গাপূজা আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আগামী বছর ক্যাম্পাসে দুর্গাপূজার আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা কমিটি।
এ বছর ক্যাম্পাসে পূজা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মন্ডল।
তিনি বলেন, ‘দুর্গাপূজার অল্প কিছু দিন রয়েছে। এত অল্প সময়ে আসলে পূজার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আর বাজেটেরও একটা বিষয় রয়েছে। এই স্বল্প সময়ে ফান্ডিংটাও সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে এসেছিল, পূজা উদযাপনের বিষয়ে কথা বলেছে। আমরা তাদের জানিয়েছি এ বছর আসলে সম্ভব নয়। পরবর্তী বছর থেকে আমরা সময় নিয়ে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নেব।’
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজেদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত না হওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন ভিন্ন কথা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দুর্গাপূজা শুরুর এক মাস ১০ দিন আগে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ পূজা উদযাপন কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাজেট আনতে না পারায় এবার ক্যাম্পাসে পূজা হচ্ছে না। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
অমিত পাল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের কাছে দুর্গাপূজা অনেক বড় একটা উৎসব। হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা থাকার পরেও সময় স্বল্পতার কারণে এ বছরও দেবীর চরণে ফুল দেওয়ার সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পূজার পরেই অনেক বিভাগ ও অনুষদেও পরীক্ষা হবে। পরীক্ষা চলার সময় বা সন্নিকটে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর পূজা হওয়াটা হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য জরুরি ছিল। পূজা উদযাপন করা সম্ভব না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী হতাশ হয়েছেন।’
মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘২০১৯ সালে আমাদের ক্যাম্পাসে সর্বশেষ পূজা হয়েছিল। করোনা মহামারির পর একটা উৎসব ক্যাম্পাসের স্বরূপ ফেরানোর জন্য খুবই দরকার ছিল। এই মহামারিতে আমরা আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের অনেকটা সময় বাসায় বসেই কাটিয়ে দিয়েছি। তাই এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠা যেত।’
বারখা দেবী নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এবার পূজার মধ্যে আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমরা অনেকেই পূজা করতে বাসায় যেতে পারছি না। কারণ অনেকের বাসা অনেক দূরে। এই অবস্থায় ক্যাম্পাসে যদি একটা পূজার আয়োজন করা হতো, তাহলে ব্যাপারটা খুব ভালো হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা শুরু হওয়ায় পূজায় এবার আমরা বাসায়ও যেতে পারব না। আবার ক্যাম্পাসও আমাদের একটা ছোট আনন্দ করার সুযোগ করে দিল না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’
দুর্গাপূজা উপলক্ষে ২রা অক্টোবর থেকে ৪ঠা অক্টোবর পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। পহেলা অক্টোবর মহালয়া দিয়ে শুরু হচ্ছে এবারের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ৫ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
এসজি