৩.৫০ ও প্রথম থেকে সপ্তম হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক
লেখা ও ছবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক হতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে। এ ছাড়া মেধাতালিকায় আবেদনকারীর অবস্থান হতে হবে প্রথম থেকে সপ্তম স্থানের মধ্যে।
গতকাল বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ডিকেট সদস্য মো. একরামুল ইসলাম ও সাদিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে ২০১৭ সালে প্রণয়ন করা নীতিমালা অনুযায়ী-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকায় অবস্থানের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না।
এছাড়া অনুষদভেদে প্রার্থীর ন্যূনতম সিজিপিএ ৩ দশমিক ২৫ ও সিজিপিএ ৩.০০ করা হয়েছিল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রণয়ন করা শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য গত বছরের অক্টোবরে ৫শ৭তম সিন্ডিকেট সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়।
১০ সদস্যের কমিটিতে অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলামকে আহবায়ক ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুস সালামকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
তাদের কমিটির প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে কিছু সংশোধনীতে নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সিন্ডিকেট সদস্য মো. একরামুল ইসলাম বলেন, ‘গত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা নিয়ে দেশব্যাপী নানা সমালোচনা হয়েছে। নতুন এ নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষক পদে আবেদনের জন্য সব বিভাগে প্রার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে। এমনকি সংশ্লিষ্ট বিভাগে মেধাতালিকায় প্রথম থেকে সপ্তম স্থানের মধ্যে থাকতে হবে।’
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ‘শিক্ষক হওয়ার জন্য এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় ন্যূনতম জিপিএ ৪ সহ মোট জিপিএ ৮ দশমিক ৫ প্রয়োজন হবে। বিজ্ঞানের জন্য ন্যূনতম ৪ সহ জিপিএ ৯ প্রয়োজন।’
সিন্ডিকেট সদস্য সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে কোনো প্রার্থীরই সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫ না থাকলে প্ল্যানিং কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ করে সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে যোগ্যতা শিথিল করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যাবে।’
‘এই নীতিমালায় চাকরিপ্রার্থী প্রত্যেকের থিসিস থাকতে হবে।’ ‘তবে কোনো বিভাগে থিসিস না থাকলে সেসব বিভাগের নন-থিসিসের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।’
২০১৫ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, কলা ও চারুকলা অনুষদের বিভাগগুলো এবং ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজে (আইবিএস) প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে স্নাতক পর্যায়ে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩ দশমিক শূন্য ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩ দশমিক ২৫ করা হয়েছিল।
সামাজিক বিজ্ঞান, আইন ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের বিভাগগুলো এবং ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটে (আইবিএ) শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ে সিজিপিএ ৩ দশমিক ২৫ এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩ দশমিক ৫০ ছিল।
কেবল বিজ্ঞান, জীব ও ভূবিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল অনুষদের বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ন্যূনতম সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫০ রাখা হয়েছিল।
শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা কমানোয় ওই নীতিমালা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে।
এর মধ্যেই ওই নীতিমালা অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহানের মেয়ে, জামাতাসহ বিভিন্ন বিভাগে ৩৪ জন কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলন করেছেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও সাবেক উপাচার্যের অনিয়ম ও দুর্নীতির উপাত্ত তারা জমা দিয়েছেন।
পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অভিজ্ঞদের মতে, নতুন নীতিমালার সঙ্গে ২০১৫ সালের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালার মিল রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘ইউজিসি থেকে আমাদের একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই গাইডলাইনের নিচে শিক্ষক নীতিমালা করা যাবে না। আমি যতদূর জানি, তারা এটাকেই অনুসরণ করেছেন।’
ওএফএস/