এক বছরেও জবি শিক্ষার্থী আকবর হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়নি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১২তম ব্যাচের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আকবর হোসাইন খান রাব্বি হত্যার এক বছর পেরিয়ে গেলেও রহস্য উন্মোচন হয়নি। মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আকবরের পরিবার ও সহপাঠীরা।
আকবর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন আকবরের বড় বোন মোছা. লাবনী খানম আঁখি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের মানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আকবর হুসাইন খান রাব্বি ২০২১ সালের ২৭ আগস্ট পুরান ঢাকার মেস থেকে বেরিয়ে যান। তার সহপাঠীরা ওই দিন একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করলে আশপাশেই আছেন বলে তিনি তাদের জানান। সবশেষ রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে বড় বোন আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে একটু পরই বাসায় ফিরবেন বলে জানান। পরে রাত ৮টা ৫৩ মিনিটে জানা যায় আকবরকে চট্টগ্রামের একটি ফ্লাইওভার থেকে কে বা কারা নিচে ফেলে দিয়েছে। প্রতক্ষ্যদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। তার কোমরের বাম পাশে ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে আঘাতের গভীর ক্ষত ছিল। ফ্লাইওভার থেকে ফেলে দেওয়ায় তার মাথার অনেকাংশ থেতলে যায়। ব্রেইনে রক্তক্ষরণ হয়ে টানা পাঁচ দিন হাসপাতালে আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ১ সেপ্টেম্বর ভোরে আকবরের মৃত্যু হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘ এক বছর পার হয়ে গেলেও অপরাধীরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ দীর্ঘদিন সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে না পারায় তদন্তভার চট্টগ্রাম পিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম পিবিআই এখনো কোনো অগ্রগতি করতে পারছে না বলে জানান। কে বা কারা পরিকল্পনা করে আকবরকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে তা এখনো রহস্য রয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘটনার এক দুইদিনের মধ্যেই আকবরের মোবাইল ফোনটি থানা থেকে লক খুলতে গিয়ে হার্ড রিসেট দেওয়া হয়। ফলে তার ফোন থেকে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে আকবরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে হঠাৎ একটিভিটি লক্ষ্য করেন তার একাধিক বন্ধু ও পরিবারের সদস্যরা। যেমন- পুরাতন স্ট্যাটাস, ছবির প্রাইভেসি চেঞ্জ করা, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লক করা ইত্যাদি।
সম্মেলনে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রকল্যাণের সভাপতি ওয়াহিদ ডেনি বলেন, মৃত্যুর এক বছর পার হলেও আকবর কীভাবে চট্টগ্রাম গেল সেটাও জানা গেল না। অথচ তার ফোন রিসেট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন দেওয়া হয়েছে তার সৎ উত্তর তদন্তকারীরা দিতে পারেনি। আকবরের ফেসবুক আইডি বর্তমান কে চালাচ্ছে সে বিষয়েও তারা বলতে পারছে না। আকবরের হত্যা রহস্য যদি দ্রুত উন্মোচন না হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।
এসময় আকবরের বড় বোন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোছা. লাবনী খানম আঁখি বলেন, এক বছর পেরিয়ে গেলেও আমার ভাইয়ের হত্যাকারী ও হত্যা রহস্য এখনো জানা যায়নি। এটা আমার ও আমাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। আকবরের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি হওয়ার এবং সে নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করছিল, কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল!
সংবাদ সম্মেলনে আকবরের পরিবারের পক্ষে বড় বোন ও শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে এই নৃশংস হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।
এসজি
