রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রাম্যমান দোকাগুলো উচ্ছেদ

লেখা ও ছবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অনুমোদনহীন ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ কার্যক্রমে আজ সকাল থেকে সব দোকান-পাট বন্ধ করা হয়েছে। তবে কোনো দোকানীর দাবি, কোনো ধরনের নতুন ব্যবস্থাপনা ছাড়াই দোকান উচ্ছেদ নির্দেশনার প্রতিবাদে সব দোকান বন্ধ রেখেছে তারা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, পরিবহনের চায়ের দোকান, টুকিটাকির খাবার, চা ও ফাস্টফুডের দোকান, ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনের আমতলা চত্বরের চা ও ফাস্টফুডের দোকান বন্ধ রয়েছে। এদিকে দোকান বন্ধ করে দেওয়ায় উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন দোকানীরা।
শিক্ষার্থীরা দোকান বন্ধ হওয়ায় অনেকেই পছন্দের খাবার না খেয়ে ক্লাসে চলে গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তরের নির্দেশনা সূত্রে জানা যায়, কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে চা-পানি, হোটেল, ফাস্টফুড, জুস, সবজি, মুদি, কাপড়ের দোকান পরিচালনা করছেন।
তাই ২৫ আগস্টের মধ্যে সকল জিনিসপত্র নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, জানিয়েছিলেন তারা।
গতকাল দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দোকানীদের অভিযোগ, কোনো ধরনের নতুন ব্যবস্থাপনা ছাড়াই প্রশাসনের এমন উদ্যোগে আমরা ও শিক্ষার্থীরা উভয়ই বিপাকে পড়েছি। প্রশাসন কিছুদিন পরে পরেই দোকান উচ্ছেদ নির্দেশনা দেন কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কোন পদক্ষেপ নেন না। প্রশাসনের এমন ব্যবস্থাপনা আমাদের পেটে লাথি মারার মতো।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে হল ও ক্যাফেটেরিয়া দূরে হওয়ায় সেখানে গিয়ে খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় থাকে না। তাই বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসের ফাঁকে টুকিটাকিতেই খাবার খান এবং আড্ডা দেন। আজকে ক্যাম্পাসে সব ভ্রাম্যমাণ দোকান বন্ধ হওয়ায় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, অ্যাকাডেমির ভবনের পাশে নতুন ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের আগে দোকানগুলো ওঠানোর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। উচ্ছেদের পূর্বে ও পরে সঠিক ব্যবস্থাপনা বেশি জরুরি।
তাদের আড্ডার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো দোকানগুলো। ফলে উচ্ছেদ করলে আড্ডাও বন্ধ হয়ে যাবে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুব বলেছেন, ‘আমি প্রতিদিন সকালে টুকিটাকি চত্বরে খাওয়া, দাওয়া করি। আজকে সকাল ৯টায় ক্লাস থাকায় তাড়াতাড়ি করে ক্যাম্পাসে আসি। এসে দেখি ক্যাম্পাসের সকল দোকান বন্ধ। ক্লাসের সময় হয়ে যাওয়ায় বাইরে গিয়ে খাওয়া সম্ভব হয়নি। না খেয়েই ক্লাসে চলে যাই।’
বাংলার মাসুদ রানা বলেন, ‘ক্লাসের ফাঁকে আমরা ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে বসে চা খেতে, খেতে আড্ডা দেই। দুপুরের খাবার বেশিরভাগ সময় টুকিটাকিতে খাওয়া হয়। আজ দোকানগুলো বন্ধ থাকায় বসতেও পারছি না। আড্ডাও দিতে পারছি না। ভিন্ন ব্যবস্থা না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেছেন, ‘ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রতিনিয়ত দোকান বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো নির্দেশনা না মেনেই ফাঁকা জায়গা দেখে তারা দোকান বসিয়ে দিচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতেই মূলত এই উদ্যোগ।’
ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এস্টেট দপ্তর বিষয়গুলো দেখাশোনা করে বলে জানান।
জানতে চাইলে এস্টেট দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার জাহেদ আলী বলেন, ‘আমরা দোকানের সংখ্যা কমাতেই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
তবে দোকানগুলোর নতুন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি।
ছবি : রায়হানুল রানা ও মাহমুদুল হাসান।
ওএফএস।
