দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মাছ-মাংস খাওয়া কমিয়েছে শিক্ষার্থীরা
দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। সংকট ও সাফল্যকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রীদের জন্য একটিমাত্র আবাসিক হল থাকলেও ছাত্রদের জন্য নেই কোনো আবাসন সুবিধা।
বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মেসে থেকে পড়ালেখা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবাসন সুবিধা না থাকায় থাকা ও খাওয়ার বাবধ খরচ বহন করতে শিক্ষার্থীদের নিজেরই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পর সেই ব্যয় বহনে হিমশিম খাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে বাজারে বেড়েছে সবকিছুর দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার ফলে মেসের থাকা ও খাবার খরচ চালাতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। অনেক বাড়িওয়ালা বাড়িয়েছেন বাড়ির ভাড়া। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। আগে মেসে প্রতি বেলা খাবার খর ৩৫-৪০ টাকার মধ্যে থাকলেও বর্তমানে দাম বাড়ার ফলে প্রতিবেলা খরচ পড়ে ৪৭-৫৫ টাকা। অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়েছে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা। মাস-মাংস খেতে খরচ বেশি তাই ভর্তা কিংবা সবজি দিয়েই খাবার চালাচ্ছে অনেক মেসের শিক্ষার্থীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই টিউশন ও পার্ট টাইম চাকরি করে থাকা খাওয়ার খরচ বহন করে। বর্তমানে বাস ভাড়া বাড়ার ফলে জালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে বেড়েছে পাবলিক বাসের ভাড়া সেজন্য টিউশনিতে যেতেও গুণতে হচ্ছে বেশি টাকা। তবে বাড়েনি শিক্ষার্থীদের আয়। টিউশন কিংবা কোচিংয়ের বেতন না বাড়লেও বেড়েছে সকল ধরনের খরচ তাই বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন ক্যাম্পাসে হল স্থাপনের কাজ দ্রুত দাবি করে বাস সার্ভিস দেওয়ার কথা বলেন। এ ছাড়াও বেশিরভাগ দরিদ্র শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, মাসিক উপবৃত্তির।
শিক্ষার্থীরা জানান, নতুন ক্যাম্পাসে যদি দ্রুত হলগুলো করে দেওয়া হয় আমাদের আবাসন ব্যয় কমে আসবে। সেখান থেকে বাস দিলেই আমরা এই ক্যাম্পাসে এসে পড়তে পারব। আমাদের যদি মাসিক দুইহাজার টাকা দেওয়া হয় দরিদ্র বৃত্তি হিসেবে তবুও আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে।
জানা যায়, ২০১৬ সালে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। নতুন ক্যাম্পাসের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে নতুন ক্যাম্পাসের নকশাও দেখানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ওই বছরের জুলাইয়ে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার চেক পায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সরেজমিনে দেখা যায় নতুন ক্যাম্পাসের কাজের অগ্রগতি নেই , চারপাশে বাউন্ডারির কাজ চলছে, শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য নির্মিত হয়েছে মাঠ। এই নতুন ক্যাম্পাস কত বছরে নির্মাণ হবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুজছে শিক্ষার্থীরা। তবে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই কারোর কাছেই।
এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২য় বর্ষের আকাশ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এমনিতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হল নেই। সকল ছাত্রদেরই মেসে কোনোরকম দিন কাটাতে হয়। আগে প্রতিমাসে মিল রেট হতো ৩২/৩৫ টাকা। এখন তেল, গ্যাস, মুরগি, চাল ডাল সব কিছুর দাম বাড়তি। এ মাসে মিল খরচ গিয়ে দাড়িয়েছে ৪৬ টাকায়। এ ভাবে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলে ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করে টিকা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় পড়াশোনা ছেড়ে বাড়ি চলে যাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মেসের মিলরেট ৩০-৩৫ থেকে বর্তমানে ৪৫-৫০ হয়, সকালের নাস্তা (পরোটা-ভাজি) ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা হয়, সিঙাড়া-সমুচার পিস ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা হয়! সব খরচই বাড়ে। শুধু বাড়ে না আমাদের বাবা-ভাইয়ের আয় আর আমাদের টিউশনির স্যালারি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দ্রব্যমূল্যের অনেক দাম, এই দামে খরচ অনেক বেড়েছে। এভাবে চললে টিকে থাকা কঠিন। আগে টিউশন করাতে ১০ টাকা ভাড়া লাগত এখন সেই ভাড়া ২০ টাকা কিন্ত আমার টিউশন ফি বাড়ে না। চাইলেই প্রশাসন নতুন ক্যাম্পাসে হলের ব্যবস্থা করে দিতে পারে কিন্ত সেই গতিও মন্থর গতি। ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তায় রয়েছি।
এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আইনুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই সংকট আমাদের শিক্ষার্থী সহ সবারই। বিষয় ও দাবিগুলো যৌক্তিক তবে এসব উপর থেকে নির্ধারণ করার বিষয়। এসব ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।
এ বিষয়ে কথা বলতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হককে বারবার ফোন দেওয়া হলেও ঢাকাপ্রকাশ প্রতিবেদকের ফোনে সারা দেননি তিনি।
এমএমএ/