ভুলে ভরা সনদ দেয় ববি’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস

লেখা : প্রতিনিধি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)’র ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর’-এর কার্যক্রম ভুলে ভরা। প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট, মার্কশিট ইত্যাদি উত্তোলন করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক ছাত্র, ছাত্রী।
ববিতে এই অভিযোগ নতুন নয়। মার্কশিট ও সনদগুলোতে বানান ভুল থাকে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়া এবং গ্রহণের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কখনো পাওয়া যায় না কর্মকর্তা, কর্মচারীদের। পেলেও অতি ধীর গতিতে তারা কাজ করেন। কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে অশোভন আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র, ছাত্রীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘আমাদের পড়ালেখার পর অনার্স ও মাস্টার্সের সার্টিফিকেটগুলো উত্তোলনের জন্যও দিনের পর দিন টেবিলে টেবিলে ঘুরতে হয়।’
উদ্ভিদবিজ্ঞানের সাবেক ছাত্র মিশাল বিন সলিম অভিযোগ করেছেন, ‘আমার সনদপত্র ও ফাইনাল মার্কশিট তুলতে গিয়েছিল এক বন্ধু। তাকে প্রতিনিধি হিসেবে তারা গ্রহণ করলেন না। প্রথমে জানালেন, বন্ধুর আইডি কার্ডের ফটোকপিতে আমি ও বিভাগের চেয়ারম্যান স্বাক্ষর দিতে হবে। যোগাড় করে নিয়ে যাবার পর তারা আগের প্রিন্ট করা আবেদনপত্র তারা বাতিল করে দিলেন। বললেন, হাতে লিখে আবেদন জমা দিতে হবে। আমি দূরে থাকায় লিখে দ্রুত কুরিয়ার করলাম। এরপর তারা আরো দুটি স্বাক্ষর সেখানে প্রয়োজন বলে জানালেন। আগে বলেননি কেন? এরপর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিজেই গেলাম। তখন তারা একবারও চেক করলেন না আমি কী সে জন? পেমেন্ট রসিদ দিলাম। তারপর তারা আমার প্রয়োজনীয় সনদগুলো প্রদান করলেন।’
সার্টিফিকেটে ভুল নতুন নয়। আইনের একজন ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “আমার অনার্সের মার্কশিটে এল.এল.বি’র স্থলে তারা বিবিএ কেন লিখেছেন? সেটি আবার ঘুরে, ঘুরে ঠিক করতে হলো।”
এই নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান উত্তর দিয়েছেন ‘আমাদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র, ছাত্রী প্রায় ৯ হাজার। তাদের জন্য এই দপ্তরের সম্বল একটি মোটে ডেস্ক। কর্মকর্তা মাত্র দুইজন। ফলে বিপুল ছাত্র, ছাত্রীর চাপ সামলাতে মাঝে, মধ্যে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও বিদ্যুৎ সংকট আছে। সেজন্যও ভোগান্তি হয়।’
এরপর সমস্যা হলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পূর্ণকালীন কোনো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এখনো নেই। ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সাজ্জাদ উল্লাহ মোহাম্মদ ফয়সাল প্রশ্নের উত্তরে ‘জনবল সংকট’ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। এমন কোনো সংকট নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। আর ছাত্র, ছাত্রীদের অভিযোগ বানান ভুলে ভরা সাটিফিকেটগুলো দেওয়া হয় এবং সেগুলো ঠিক করতে আবেদন করতে হয় এবং দিনের পর দিন ঘুরতে হয়-এই বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেছেন, ‘অনেক কাজ করলে দু-একটি ভুল হতেই পারে। তবে সেটি আমাদের কাছে পরবর্তীতে নিয়ে এলে ঠিক করে দেই।’
ছাত্র, ছাত্রীদের নিত্যদিনের ভোগান্তি তিনি অস্বীকার করেছেন প্রথমে। তবে বলেছেন, 'এরকম কিছু হলে ছাত্র, ছাত্রীরা আমাকে অবশ্যই এসে জানাত।’
সাজ্জাদ উল্লাহ মোহাম্মদ ফয়সাল কথা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বিপ্লব নামে যে ছেলেটি এখানে আছে, তার বিষয়ে আমি কয়েকবার অভিযোগ পেয়েছি। তাকে অতি দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হবে।’
ওএফএস।
