জবিতে সুপেয় পানির সংকট!
এখন বর্ষাকাল। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেলেও রোদের খরতাপ এবং সঙ্গে বইছে গরম হাওয়া। গরমে জীবন হয়ে উঠছে অতিষ্ঠ। শরীর ঘেমে বের হয়ে যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পানি। শরীরে পানির অভাব পূরণে দরকার বিশুদ্ধ সুপেয় পানি। কিন্তু সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেশ কিছু বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কারণ হিসেবে বিভাগগুলো দুষছেন অর্থের দুষ্প্রাপ্যতাকে, প্রশাসন বলছে বিভাগগুলো তাদের চাহিদা দেখিয়ে আবেদন করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষাসহ অন্যান্য কাজে আসেন। কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন বিভিন্ন কাজে কিন্তু সঙ্গে অতিরিক্ত গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজন পড়ছে প্রচুর পরিমাণে পানি। বিভাগ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে সাধ্যমতো। যে সকল বিভাগ গুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়াটার ফিল্টার রয়েছে তারা খুব সহজেই সুপেয় পানি পেয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু যে বিভাগে এখনো ওয়াটার ফিল্টার বা পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি এবং থাকলেও তা অকার্যকর, পুরাতন বা নষ্ট সে বিভাগে বোতলে পানি সরবরাহ করে বা কর্মচারীদের দিয়ে জগে করে পানি পৌঁছে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় লোক-প্রশাসন, নৃবিজ্ঞান, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, ইতিহাসসহ যে সকল বিভাগ পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা নেই শিক্ষার্থীরা বলছে তাদের পানি খেতে যেতে হয় ক্যাফেটেরিয়াতে। সেখানে প্রায় সময়ই ভিড় লেগে থাকে। তা ছাড়া এক বিভাগের শিক্ষার্থীরা নির্ভর করে অন্য বিভাগের উপর।
এ ছাড়া, যে সকল বিভাগে ওয়াটার ফিল্টার রয়েছে তা নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং তার জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার জানান, আমাদের বিভাগে কোনো সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। পাশেই ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের পানির ফিল্টার থেকে প্রয়োজন মেটাই।
নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শাকিল আহমেদ এ নিয়ে বলেন, পানি বিশুদ্ধকরণ কোনো মেশিন আমাদের নেই। মাঝে মধ্যে আমরা ট্যাপ থেকে পানি খাই, যেখানে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।
সুপেয় পানি নিয়ে ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, আমি উত্তরা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। ক্লাস শেষে সেমিনারে পড়ার জন্য বসি। পানির জন্য ক্যাফেটেরিয়াতে যাওয়া খুবই বিরক্ত লাগে, দীর্ঘ লাইন থাকে ওখানে। আমাদের নিজস্ব একটি সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকলে সবাই উপকৃত হতো।
ঢাকায় প্রায় দিনই সর্বচ্চো ৩৫° থেকে ৩৭° সেলসিয়াস তাপমাত্রা যাচ্ছে। বাতাসে আর্দ্রতা অনেক বেশি। রোদের তেজ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে গরমের তীব্রতা। যা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলছে।
সুপেয় পানির গুরুত্ব নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের মেডিকেল অফিসার বলেন, পানির অভাবে ডি-হাইড্রেশন হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বেশি ঘামলে পেশার কমে যায়, দুর্বল লাগে সেক্ষেত্রে কাছে পানি রাখা এবং বিশুদ্ধ পানি পান করা, খোলা পানি পান করা থেকে বিরত খাকা।
তিনি আরও বলেন, একজন হয়তো কাছে অল্প পরিমাণ পানি রাখতে পারেন কিন্তু পুরো সময় তা যথেষ্ট নয় এজন্য ব্যবস্থা নেওয়া।
শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সানজিদা ফারহানা বলেন, বিভাগে কোনো ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টার নেই। কারণ, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা নেই। তবে আমরা সর্বচ্চো চেষ্টা করছি এমনকি কর্মচারী দিয়ে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিনারে পানির ব্যবস্থা থাকলেও বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে এ নিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী সাখাওয়াত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সেমিনারে কোনো কর্মচারী ছিল না। তখন মালি, পিয়ন, ল্যাব সহকারী দিয়ে চালিয়েছি। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। আমরা গর্ব করে বলতে পারি আমাদের পর্যাপ্ত সুপেয় পানি আছে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ওয়াটার ফিল্টারগুলোয় শ্যাওলা পড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলে এ নিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দেড়মাস আগে নতুন ফিল্টার লাগানো হয়েছে। ছাত্ররা যাতে অসুস্থ বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা আমরা দেখি। এ নিয়ে তোমাদের চেয়ে আমাদের মাথা ব্যথা বেশি।
বিষয়টি নিয়ে ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম বলেন, আমি ক্যাফেটেরিয়া এবং ছাত্রী কমন রুমে সর্বক্ষণ তদারকি করছি। যে সকল বিভাগগুলোতে পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা নেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ছাড়া আমি বিভাগগুলোর সঙ্গে কথা বলে দেখব।
সুপেয় পানির কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা নিয়ে প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, সবাই কম বেশি ব্যবস্থা নিচ্ছে। তা ছাড়া নতুন ক্যাম্পাস হবে এখন কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা নেওয়া অপ্রয়োজনীয় বলেই মনে হচ্ছে।
এমএমএ/