ভালোবাসা-কবর জেয়ারতে বঙ্গমাতাকে স্মরণ করলো তার বিশ্ববিদ্যালয়
লেখা ও ছবি : বশেফমুবিপ্রবি প্রতিনিধি।
‘রেনু’ নামের এই মেয়েটির জীবন দু:খে গড়া। জন্মেছেন ১৯৩০ সালে। মোটে পাঁচ বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়েছেন। এতিম মেয়েটি শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো বোন। ফলে তারাও শেখ পরিবার। ৮ বছরের শিশু ১৮ বছরের মুজিবরের স্ত্রী হলেন, ১৯৩৮ সাল। তার ঘর আলো করেছে তিনটি ছেলে ও দুটি মেয়ে। বড় দুই মেয়ে হলেন শেখ হাসিনা (বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী), শেখ রেহানা। শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো জেল জীবন তাকে ভয়ে, শংকায় ও পরিবার পালনের কঠোর সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১২ মে থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মৃত্যু পরোয়ানা মোকাবেলা করতে হয়েছে বন্দীদশায় দুই মেয়ে ও শিশুপুত্র রাসেলকে নিয়ে। মেয়ে দুটি বাদে আর সবাই তার সঙ্গে সেদিন-১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হয়েছেন। মোটে ৪৫ বছরে মারা গিয়েছেন তিনি প্রাণপ্রিয় স্বামী, ততোধিক প্রিয় সন্তানদের নিয়ে। তাদের পুত্রবধুরা (সুলতানা কামাল এবং রোজী জামাল)ও যুবতী শ্বাশুড়ির সঙ্গে বাঙালির মহত্তম সংগ্রামকে বাঁচিয়ে দিতে।
এই মহিয়সী মায়ের নামে তার বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিলের উপজেলা জামালপুরের মেলান্দহে গড়ে দিয়েছেন একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল আগামীর, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।
ইতিহাসের সেই নায়িকা আর আর নেই। তার নামে গড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পালন করা হয়েছে আজ জন্মদিন। তার ৯২ বছরের আলোচনা সভায় এই ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেফমুবিপ্রবি)’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছে।
জন্মস্থান ও সমাধি টুঙ্গি পাড়াতে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগ পরিচালক কর্ণেল (অব:) অধ্যাপক কাজী শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কবর জেয়ারত করেছে।
সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে নিয়ে তাদের একটি বিশেষ র্যালি পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে গোবিন্দগঞ্জ বাজারের প্রধান ফটকে থেমেছে।
মাতৃস্মৃতির আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সকল আন্দোলন, সংগ্রামের মূল অনুপ্রেরণা ও উৎসাহদাতা এবং উৎস ছিলেন ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’। এই মহীয়সী নারীর স্বাধীনতার আকাংখা ছিল অত্যন্ত তীব্র। বাঙালি জাতির প্রতি, তাদের মুক্তিসংগ্রামের জন্য তার অবদান ছিল অকৃত্রিম ও অকুণ্ঠ। সেজন্যই অনালোকিত নারী-বঙ্গমাতা।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও খনিবিদ্যার সাবেক এই কৃতি অধ্যাপক ও গবেষক আরো জানিয়েছেন তার ছাত্র, ছাত্রী, অধ্যাপক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের, ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী ও তার সন্তানদের মা ছিলেন। তিনি নিরব রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়কের। অন্যতম সহযোদ্ধা ছিলেন মুক্তি সংগ্রামের। ছিলেন বাংলাদেশের জন্য নিরব প্রধান সংগঠক। তার জীবন থেকে যেকোনো মানুষ পাঠ নিয়ে ধন্য হবেন।’
ইতিহাসের বিস্তৃতপ্রায় মহানায়িকার জীবনের ওপর আলোচনা সভায় ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ’র সভাপতি ড. এ. এইচ. এম. মাহবুবুর রহমান উপস্থাপনা করেছেন।
সভাপতি ছিলেন রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফারুক হোসেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুশান্ত কুমার ভট্টাচার্য।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন ও সহকারী রেজিস্ট্রার আনিসুজ্জামান আনিস আলোচনা করেছেন।
অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মীর্জা আবদুল হালীম প্রমুখ।
ওএফএস।