ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জাবিতে রমরমা শিট ব্যবসা

রবিবার (৩১ জুলাই) কলা ও মানবিকী অনুষদ এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে শুরু হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বই ও শিট বিক্রির রমরমা ব্যবসা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেট) ও তার আশেপাশে, সমাজবিজ্ঞানের সামনে, অমর একুশের পাদদেশে, শহীদ মিনার, মুরাদ চত্ত্বর, সিএসই ভবন, জীববিজ্ঞান অনুষদ, পুরান কলা ভবন, জাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশকিছু জায়গায় ভ্রাম্যমাণ শিট ও বইয়ের দোকান বসেছে। এসব দোকানে বইয়ের পাশাপাশি ৫-১০ পৃষ্ঠার হাতে তৈরি শিটও বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এসব বইয়ের কভার পৃষ্ঠায় লেখা আছে ‘শিওর চান্স’, ‘পড়লেই চান্স’, ১০০ পার্সেন্ট কমনের নিশ্চয়তাসহ নানা প্রলোভন। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব লেখা থাকলেও এসব শিট-বই তৈরি করা হয় মূলত বিভিন্ন গাইড থেকে হুবহু কপি করে।
এসব বই প্রস্তুতে ১০-২০ টাকা ব্যয় হলেও ভর্তিচ্ছুদের কাছে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। চাহিদা বেড়ে গেলে টাকার অঙ্ক বেড়ে ১৫০ পর্যন্ত হয়ে যায়। আকর্ষণীয় উপস্থাপনা ও প্রলোভনে পড়ে ভর্তিচ্ছুরাও শেষ সময়ের প্রস্তুতি হিসেবে এসব শিটকে নির্ভরযোগ্য ভেবে কিনতে আগ্রহী হয়। তবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এসব শিট কিনে কোনো লাভ হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
বগুড়া থেকে 'বি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা নিয়ামুল ইসলাম এক দোকান থেকে এসব শিট কিনছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'বিক্রেতা ভাইয়েরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা বলছে পরীক্ষায় আসা অধিকাংশ প্রশ্নই এখান থেকে আসবে। তাই এই শিট বইটা ৭০ টাকায় কিনলাম।'
ইংরেজি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রবিউল হাসান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, 'গতবছর ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছিলাম। পরীক্ষার দিন ভোর ৬টার দিকে ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেখি কয়েকজন ভাই শিট বিক্রি করছেন। পরীক্ষা ৯টা থেকে হওয়ায় ৯০ টাকা দিয়ে ১৬ পৃষ্ঠার একটি শিট বই কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো এ বই থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে। এ বই থেকে পরীক্ষায় ১-২টি প্রশ্ন এসেছে। তবে সেগুলো আগে পড়া ছিল।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিট বিক্রেতা বলেন, 'ভর্তিচ্ছুরা যাতে ভর্তি পরীক্ষার সময় স্বল্প সময়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিতে পারেন সেজন্য ভর্তি পরীক্ষার আগে থেকে অনেকে এসব শিট তৈরি করেন। ভর্তিচ্ছুদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে এটা করেন তারা। তবে এক শ্রেণির অর্থলোভী শিক্ষার্থী ভর্তিচ্ছুদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করে।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (এস্টেট) মো. আ. রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এ ব্যবসাকে ‘আধুনিক ভিক্ষাবৃত্তি’ বলেও অভিহিত করেছেন।
এসজি/
