জবি ছাত্রলীগে বিভক্তি, মাঠে সরব ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত হওয়ার পরেই বিভক্ত হয়ে পড়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। স্থগিত কমিটির শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা। কমিটি স্থগিত হওয়ার পরেই ক্যাম্পাসে নিয়মিত শোডাউন দিচ্ছেন এই অমূল্যায়িত নেতা-কর্মীরা।
এর আগে গত ১ জুলাই কমিটি স্থগিত হওয়ার পরেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা নিয়মিত ক্যাম্পাসে শোডাউন দিলেও বিদ্রোহীদের ক্যাম্পাসে দেখা যেত না। কয়েকদিন পরেই পাল্টাতে থাকে চিত্র। কমতে থাকে স্থগিত কমিটির সভাপতি গ্রুপের কর্মী সংখ্যাও। গত কয়েকদিন ধরে ঝিমিয়ে পড়েছেন সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নেতা হওয়ার পরেই ইব্রাহিম ফরাজি ও এসএম আক্তার হোসেনের চাল-চলনে অনেক পরিবর্তন আসে। কমিটি হওয়ার পর থেকেই তারা চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির দিকে ঝুঁকে পড়ে। প্রতিদিন প্রকৌশল দপ্তর আর উপাচার্য ভবনে দৌড়াদৌড়ি করে তাদের কর্মকাণ্ড শেষ করতেন। স্বার্থ হাসিল না হলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করতেন। এদিকে নিয়মিত প্রোগ্রামে না আসলে সবার সামনে কর্মীদের চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ আছে ইব্রাহিম আক্তারের বিরুদ্ধে। কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ না দেওয়ার হুমকি দিতেন সরাসরি। কমিটির অন্যান্য নেতাদের মূল্যায়নই করতেন না।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কথা না শুনলে কেউ ছাত্র রাজনীতি করতে পারবে না বলে হুঙ্কার দিতেন এসএম আক্তার হোসেন। ছাত্রলীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের সালাম দিতেও বারণ করেন বলে অভিযোগ আছে ইব্রাহিম-আক্তারের বিরুদ্ধে। এতে দিন দিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন অমূল্যায়িত নেতা-কর্মীরা।
এখন নিয়মিতই ক্যাম্পাসে শোডাউন দিচ্ছে অমূল্যায়িত নেতারা। প্রায় প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে এসে শতাধিক কর্মী নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন তারা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গ্রিন সিগনাল পেয়েই নিয়মিত মহড়া দিচ্ছেন ছাত্রলীগের অমূল্যায়িত নেতারা। স্থগিত হওয়া কমিটির শীর্ষ দুই পদে নতুন কেউ আসার সম্ভাবনা বেড়েই চলছে। আবার অমূল্যায়িত নেতাদের নিয়মিত মহড়ার সঙ্গে বাড়ছে কর্মীদের উপস্থিতিও। স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনেক কর্মীও যোগ দিচ্ছে নেতাদের শোডাউনে। দিন দিন স্থগিত কমিটির শীর্ষ দুই নেতার ফিরে আসার সম্ভাবনা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা আর হতাশায় ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে তাদের।
এদিকে স্থগিত কমিটির সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন বিভিন্নভাবে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে অসাংগঠিনক আচরণের কারণে বেশ কয়েকবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের রোষানলে পড়েছিলেন স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম আক্তার হোসেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সাথেও ভালো সম্পর্ক নেই ইব্রাহীম ফরাজির।
স্থগিত কমিটির সহ-সভাপতি কামরুল হোসাইন বলেন, 'বর্তমান কমিটির ইব্রাহীম-আকতারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো সত্য হলে তাদের বাদ দেওয়া হোক। আর মিথ্যা হলে যারা অপপ্রচার ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।'
ক্যাম্পাসে মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'ক্যাম্পাস তো সবার। সেজন্যই আমরা সবাই যাই, দেখা সাক্ষাৎ করি। এমন তো না ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম করতেছি। একসঙ্গে বসতেছি, এটা তো স্বাভাবিকভাবে চলবেই।'
স্থগিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া আফরিন প্রিয়ন্তী বলেন, 'আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জানাব। কেন্দ্রের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছি, লিখিতভাবেও জানাব। এই কমিটির অধীনে আমরা থাকতে চাই না।'
স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাত সাঈদ বলেন, 'কোনো ব্যক্তির কর্মের দায়, কখনো সংগঠন নিবে না। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তার জন্য কেন্দ্র উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক আমরা সেটাই চাই।'
ক্যাম্পাসে মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সবারই ক্যাম্পাসে আসার, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার অধিকার আছে। আমরা তো এখানে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি না। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি।'
এ বিষয়ে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন বলেন, 'জগন্নাথ ছাত্রলীগের আলাদা কোনো গ্রুপ নেই। যারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায় তারা ছাত্রলীগের কেউ না। অনেকে আছে আবার ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশকারী। তারা ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে চায়।'
কবে নাগাদ আবার ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে সুসংগঠিত হয়ে ফিরবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো এখন বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা সেটাই মেনে নিব।
স্থগিত কমিটির সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজি বলেন, 'জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা তাই মেনে নিব।'
ক্যাম্পাসে মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। এটা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে না। যদি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত, সেটা আলাদা কথা।'
এসজি/