ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের বাসায় চুরি
লেখা ও ছবি : রায়হান মাহবুব, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি আবাসিক ভবনের গ্রিল কেটে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা ঘটেছে।
‘যমুনা ’ভবনের নীচতলায় ঘটনাটি ঘটেছে। বাসাটিতে ধর্মতত্ব ধর্মতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও কলা অনুষদের ডিন এইচ. এন. এম. এরশাদ উল্লাহ ও তার পরিবারের বসবাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি ইনচার্জ আবদুস সালাম সেলিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঈদের ছুটিতে এই শিক্ষকের পরিবার গ্রামের বাড়ি খুলনায় অবস্থান করছিলেন। এই সুযোগে চোর ব্যালকনির গ্রিল কেটে ও ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পড়ে। নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার চুরি করে। পানির ট্যাপগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে পুরো বাসায় পানি ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভবনে পানির সংকট হলে ও নিচতলায় পানি দেখা গেলে বিষয়টি অন্যদের নজরে আসে বলে জানা গেছে।
চুরির খবর পেয়ে শিক্ষকের স্ত্রীসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য ক্যাম্পাসে এসেছেন। তারা জানান, নগদ বিশ হাজার টাকা ও তিন ভরি স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন সামগ্রী চুরি হয়েছে।
যমুনা ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিশ্ববিদ্যালয় সিকিউরিটি ইনচার্জ আবদুস সালাম সেলিম ও চতুর্থ তলায় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম থাকেন। তারা থাকার পরও চুরির ঘটনায় ক্যাম্পাস এবং আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্য আবাসিক শিক্ষকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী অধ্যাপক এরশাদ উল্লাহ বলেছেন, ‘আমি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জেনেছি। বুধবার আমার স্ত্রী দেখতে গিয়েছে। আমরা তো ভাড়া দিয়ে থাকি। এরকম ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ক্যাম্পাসে ফিরে আইনি পদক্ষেপ নেব।’
রিফাত ইয়ামিন নামের তার পরিবারের এক সদস্য বলেছেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটি সংঘবদ্ধ চুরি। ভবনের দেয়াল ও ব্যালকনিগুলো এতই দুর্বল, চোরের খুব কষ্টও করতে হয়নি। প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপর তলায় থাকতেও এমন ঘটনায় বোঝা যায় ক্যাম্পাসে কতটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।’
৩ জুলাই ক্যাম্পাস থেকে চোর সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় নেওয়া হয়। থানা কর্তৃপক্ষ তাদের নামে মামলা করতে চান। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের উপস্থিতিতে তাদের বয়স কম হওয়ায় মামলা না দিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ধারণা, ছাড়া পেয়ে তারাই চুরি করেছে।
এই প্রতিবেদককে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম এই বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য আবাসিক হল ও অন্য দিকগুলোতে বেশি ফোকাস করেছি। এর মাঝেই আবাসিক এলাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেল। বিষয়টি আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমদের মাঝেও শঙ্কা রয়েছে। আবাসিক এলাকার ভবনগুলো খুব পুরাতন এবং দুর্বল। এখানে আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। ফলে কিছুটা নিরাপত্তা ঘাটতিও আছে। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
সন্দেহভাজনদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের একজন ক্যাম্পাসের এক দোকানদারের ছেলে অন্যজন ভ্যানচালক। ক্যাম্পাসে তারা পরিচিত। তাদের বিষয়ে আমাদের কাছে কোন ডকুমেন্ট ছিল না। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বাররা এসে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘আটককৃতদের নামে মামলা হওয়ার কথা ছিল। পরে প্রক্টরিয়াল বড়ির চারজন এসে মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আবাসিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুনুর রহমান এই নিয়ে বলেছেন, ‘আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তাকর্মী কম এবং ভবনগুলোও অনেকটা পরিত্যক্ত হওয়ার মতো। চুরির ঘটনার পর আমরা মিটিং করেছি। নতুন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
২ জুলাই থেকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মাইকিং করে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলেও নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
ওএস।