বর্ষার সিগ্ধরূপ: পুষ্পসাজে ববি
আষাঢ় মাস শুরু হতে না হতেই যেনো গ্রীষ্মের দাবদাহের দগ্ধ জ্বালা কাটিয়ে স্নিগ্ধ সরল রূপ যেনো ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছে। সজল বর্ষা ঋতুর আগমনে ববি ক্যাম্পাস সেজেছে পুষ্পশোভিত সাজে।
ঋতু রঙ্গময়ী রূপসী বর্ষাকাল। প্রকৃতির মঞ্চে তার কি ছন্দময়-সংগীতময় অনুপম রূপবিস্তার। কবি গেয়ে উঠেন
'এসেছে বরষা, এসেছে নবীন বরষা,
গগন ভরিয়া এসেছে ভুবন ভরসা'
বর্ষা মানেই প্রিয় ক্যাম্পাসের মেঘলা আকাশ আর অবিরাম বৃষ্টির ফোটায় সবুজ পাতার লুটোপুটি খাওয়া। নৈসর্গিক সুন্দর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আষাঢ়ে বৃষ্টির আগমনী বার্তা দিয়ে গেলো হিজল তলায়, জারুল বনে, সোনালো ফুলের হলুদ আভায়। সবুজ পাতায় বৃষ্টির ফোটা পড়ে সবুজ যেনো ঠিকরে বেড়িয়ে আসবে!
কাঠফাটা রোদের পর বাদল-বৃষ্টি তার কোমল-শীতল রূপ যেনো বিলিয়ে দিয়েছে প্রিয় ক্যাম্পাসের আঙিনায়। চুপিসারে আসা বর্ষায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস সেজেছে নতুন রূপে। বর্ষায় অনিন্দ্য সুন্দর ক্যাম্পাসের কোন এক অংশ সেজেছে সোনালুর হলুদ আভায় আবার কোথাও বেগুনি জারুলের রূপে। সকাল বেলা হিজল গাছের নিচে লাল লাল ফুলের চাদরে বৃষ্টির সতেজ ফোঁটা, সে এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। বর্ষা কাল আসবে আর কদম ফুটবে না তা কি হয়। ক্যাম্পাসের সর্বত্র রয়েছে বেশ কিছু কদম গাছ। এবারের কোলাহল মুক্ত ক্যাম্পাসেও বর্ষার আগমনী গান গেয়েছে কদম ফুল।
আষাঢ়-শ্রাবণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কদম, হিজল, জারুলের সাথে প্রতিযোগিতায় নামে আরো একটি ফুল নাম তার বোগেনভিলিয়া বা বাগানবিলাস। বারোমাসি এই ফুলটি বর্ষায় তার সব রূপ ঢেলে দেয়। কালো মেঘে আকাশ ঢেকে গেলে রূপ তার লাল রক্তিম আবার মেঘের ফাঁকে সূর্য হেসে উঠলেই রং পাল্টে প্রকৃতিতে নিয়ে আসে গোলাপি আভা। লাল-গোলাপি আভায় সেও গেয়েছে বর্ষার আগমনী গান।
নান্দনিক কিছু ফুলের সমারোহ চোখে পড়ে ভিসির বাংলোর সামনে। এছাড়াও প্রধান ফটক, মুক্তমঞ্চ মুড়ে আছে চমৎকার সুশোভিত ফুলেল দৃশ্যে। ক্যাফেরিয়া ইটের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দুপাশের ঝাউবনের ভেজাপাতা যেনো সিগ্ধ-সজীবতার পরশ বুলিয়ে যায় সকলের মনে। আর নিচের উঁচুনিচু সর্পিল রাস্তায় স্নিগ্ধ সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয় হাজার হাজার সোনালু ফুলের পাপড়ি। এক রাশ ঝিরিঝিরি শব্দের বাতাস দূর করে সারা বছরের জমে থাকা ক্লান্তি।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইন্দ্রাণী ক্যাম্পাসে বর্ষার মুখরতা নিয়ে বলেন, 'প্রকৃতির এক আশির্বাদ হচ্ছে বৃষ্টি। বাদল দিনে ক্যাম্পাস সাজে নতুন এক রূপে। মন চাইলে বৃষ্টিতে ভেজা, বর্ষার মধ্যে পুরো ক্যাম্পাস ঘোরা, ভিজে ভিজে টং এর দোকানে চা খাওয়া মনকে প্রশান্তি দেয়, কেমন যেন তৃপ্ত লাগে! বৃষ্টির মাঝে ক্লাসে মন বসতে চায় না। জানালা দিয়ে সবুজ গাছের ওপর পড়া টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা আনমনা হয়ে যাই!'
বর্ষাদিনের গল্পগুলো প্রতিটি ববিয়ানের অন্তরে ফিরে আসে ভালোলাগার স্মৃতি হয়ে। শেষ কবে ছুঁয়ে দিয়েছিল সবুজ ক্যাম্পাসের এমন বাদল দিন?
কানে গোঁজা হেডফোনে বেজে ওঠে দিব্যাঙ্গনার কণ্ঠে গান- ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে, কিছুত কেনো যে মন লাগে না...’।
মনে করিয়ে দেয় রবীঠাকুরের সেই পরিচিত লাইন- ‘এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরিষায়...’
টানা বৃষ্টিতে ক্যাম্পাসের পিচঢালা কংক্রিটের বুকে জলমগ্ন উঠোন থেকে ভেসে আসা ব্যাঙের ডাক, শরীর বাকিয়ে দ্রুত ছুটে চলা অচেনা সাপ আর নাম না জানা বিচিত্র পাখির কন্ঠের প্রতিটি শব্দ যেনো একেকটা ভিন্ন চরিত্রের মতো।
লেখক: সায়ন্তনী রাখী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়