ভর্তা-ভাতে অনন্য জাবির বটতলা
ঢাকার অদূরে প্রকৃতির কাছাকাছি মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুড়ি মেলা ভার। এখানকার বটতলা ভর্তা-ভাতসহ হরেক রকম দেশীয় খাবারের জন্য বিখ্যাত। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কর্মব্যস্ত মানুষেরা ছুটে আসেন এ ক্যাম্পাসে।
দিনের পুরোটা সময় এখানে শিক্ষার্থীদের গল্প-আড্ডা-গানে মুখরিত হয়ে থাকে চারপাশ। শুধু শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, অতিথিদের কাছেও জাবির বটতলা এক প্রিয় জায়গা। জাবিতে এসে বটতলার ভর্তা-ভাত না খেলে ভ্রমণটা যেন পূর্ণতা পায় না। জাহাঙ্গীরনগরে ঘুরতে এসেছেন অথচ বটতলায় খাননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে এই বটতলাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিক্ষাথী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে বটতলা প্রাঙ্গন। সেই সঙ্গে চলে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা। এটিই বটতলার প্রাণ। এখানে দোকানগুলোর নামও কি বাহারি। তাজমহল, নূরজাহান, বাংলার স্বাদ, সুজন, বাঙালি হোটেল ইত্যাদি। নামগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতি।
দুপুর না হতেই হরেক রকম ভর্তার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। এখানকার ভর্তা যেমন সুস্বাদু তেমনি রয়েছে স্বাস্থগুণও। ৫ টাকা করে দাম দিয়ে আপনি অত্যন্ত ৩০-৩৩ প্রকারের ভর্তা খেতে পারবেন। কী নেই সেই ভর্তা উৎসবে! কয়েক রকমের মাছ ভর্তা, বিভিন্ন রকমের শুটকি ভর্তা, ডিম ভর্তা, চিকেন ভর্তা, কালিজিরার ভর্তা, আলু ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, শুকনো ডাল ভর্তা, সরিষা ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তাসহ হরেক রকম ভর্তা। বেলা বাড়তেই দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীসহ বাইরের অতিথিদের। শুধু ভর্তায় কি আর পেট ভরে! ভর্তার পাশাপাশি আছে বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ডিম তরকারি, মুরগির মাংস, খাসির মাংস, ইলিশ মাছ, চাপিলা মাছ, রুই মাছসহ আরও কত কি!
জাবিতে বেড়াতে এসেছিলেন একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকতা রাকিব হাসান। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মত জাহাঙ্গীরনগরে বেড়াতে এসেছি। ঢাকার কাছেই এমন নিরিবিলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মিলবে ভাবতে পারিনি। সেই সঙ্গে বটতলায় দুপুরের খাবার খেয়ে সত্যিই ভাল লেগেছে। এর আগে কোথাও হরেক রকম ভর্তার স্বাদ পাইনি। এখানকার মানুষগুলোও খুব অতিথিপরায়ণ।’
জাহাঙ্গীরনগরে বটতলার নামকরণ কীভাবে হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। বলা হয়ে থাকে, পূর্বে এখানে এক বড় বটগাছ ছিল আর সে থেকেই এর নাম বটতলা। ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে আপনিও পরখ করে নিতে পারেন বটতলার ভর্তার রাজ্যের মুখরোচক ও সুস্বাদু ভর্তা। প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মল সৌন্দর্যের সঙ্গে মজাদার খাবার এই সবকিছু মিলিয়ে ভালো একটি সময় কাটবে প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে, জাবি ক্যাম্পাসে।
নিয়মমাফিক জীবনে একঘেয়েমি আসলে আমরা যেমন ঘোরাঘুরি করি জীবনকে আবার চাঙ্গা করতে, তেমনই প্রতিদিনের খাবারে বৈচিত্র আনতে আয়োজন করি ভিন্ন ধাঁচের দেশীয় খাবারের। এ ভাবনা থেকে জাহাঙ্গীরনগরের বটতলা হতে পারে একটি সত্যিকার জায়গা। একদিকে নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ, অন্যদিকে সুস্বাদু নানাপদের মুখরোচক খাবার পাওয়া যায় এখানে।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকার গুলিস্তান থেকে ওয়েলকাম/সাভার পরিবহনে চড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। এছাড়া সায়েন্স ল্যাব বা নিউ মার্কেট থেকে মৌমিতা/নীলাচল পরিবহনেও আসা যায়। ভাড়া ৫০-৬০ টাকা।
লেখক: নোমান বিন হারুন, জাবি