১ জুলাই থেকে স্বাস্থ্য ও জীবনবীমা চালু হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে
লেখা ও ছবি : আসিফ আহমেদ, প্রতিনিধি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
১ জুলাই থেকে বাংলাদেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ, সেরা ও প্রাচীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র, ছাত্রীকে স্বাস্থ্য ও জীবনবীমা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসছেন শিক্ষকরা।
বাৎসরিক ২৫০ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে তারা মৃত্যুজনিত দাবিবাবদ ২ লক্ষ টাকা পাবেন।
গুরুতর চিকিৎসার সময় এক, একজন পাবেন ৮০ হাজার টাকা।
আজ মঙ্গলবার, ২৮ জুন, দুপুরে সিনেট ভবনে আয়োজিত উন্মুক্ত আলোচনা সভায় বীমা প্রকল্প চালুর ঘোষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এই বিশেষ ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সভার বিষয়ে আসিফ আহমেদ আরো জানিয়েছেন, ‘২ বছর মেয়াদী এই বীমাগুলোর আওতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার অধ্যয়নরত নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা চালু করছে।’
‘নিজ, নিজ বিভাগে ভর্তিকালীন সময়েই বাৎসরিক ২৫০ টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে তাদের সবাইকে। এর ফলে তারা স্বাস্থ্য ও জীবনবীমা লাভ করবেন।’
‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বীমা প্রকল্প বাধ্যতামূলক।’
‘অধ্যয়নরত অবস্থায় কোন শিক্ষার্থী কোনো অনভিপ্রেত কারণে মারা গেলে অথবা তাদের ছাত্রত্ব শেষ হলে বীমা প্রকল্প পরিসমাপ্ত হবে।’
বীমাকৃত শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত সুবিধাসমূহের মধ্যে রয়েছে-বাৎসরিক প্রিমিয়াম, জনপ্রতি মৃত্যু দাবী বাবদ ২ লাখ টাকা প্রাপ্তি, হাসপাতালে ভর্তিকালীন চিকিৎসার জন্য মোট ৮০ হাজার টাকা লাভ। প্রতি ৩ মাস পর, পর বছরে ৪ বার পেতে পারেন তারা। তবে বহির্বিভাগে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বছরে ২০ হাজার টাকা পাবেন জনপ্রতি গুরুতর অসুস্থ ছাত্র বা ছাত্রী।
তাদের প্রতিমাসে একাধিকবার চিকিৎসা কনসালটেন্সি ফি, মেডিক্যাল ফি, প্যাথলজি ফি ইত্যাদি বাবদও পাওয়া অর্থাদিও এই কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বীমা ব্যবস্থা চালু হলে সকল নিয়মিত শিক্ষার্থীকে ডাচ- বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং ‘রকেট’ এ্যাকাউন্টে একটি আলাদা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত এই সভায় বীমা কম্পানি জেনিথ ইন্স্যুরেন্সের ডেপুটি ভাইস-প্রেসিডেন্ট আনোয়ার হোসেন সরকার বলেছেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গুগল প্লেস্টোর থেকে ‘জনিথ ইসলামী লাইফ ইনসুরেন্স লিমিটেড’ আ্যাপটি ডাউনলোড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে বীমা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। তাদের শিক্ষক ও আমাদের সাহায্যে বীমাগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।”
তিনি জানিয়েছেন, ‘জীবন বীমার আওতায় কোনো শিক্ষার্থী মারা গেলে তার পরিবার এককালীন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পাবেন।’
‘স্বাস্থ্যবীমার আওতায় কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বীমা সুবিধা পাবেন।’
‘বীমার আওতায় অসুস্থ হওয়া কোনো শিক্ষার্থী যদি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চিকিৎসা নেন, সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুবিধা পাবেন।’
‘এক দিনের চিকিৎসা ব্যয় ২০ হাজার হলেও দাবী করতে পারবেন তারা যে কেউ। তবে যথাযথ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন, হাসপাতালের বিলের কপি বা ভাউচার জমা দিতে হবে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বীমা চালুর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের সভায় বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে ২ বছর মেয়াদী স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে।’
ভিসি স্যার জানিয়েছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে অর্থের অভাবে যাতে সে কোনো খারাপ পরিণতির শিকার না হয় এজন্য আমাদের এই কার্যক্রম। আমরা সবাই জানি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দরিদ্র পরিবারের অনেক ছাত্র, ছাত্রী পড়ালেখা করে। শিক্ষক হিসেবে আমরা কেউ চাই না, আমাদের কোনো ছাত্র বা ছাত্রী টাকার অভাবে চিকিৎসার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হোক, অর্থের অভাবে চিকিৎসায় কষ্ট পাক।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমার কোন শিক্ষার্থীর এমন কোনো অবস্থা হোক, আমি চাই না। আমি চাই, আমার সকল শিক্ষার্থী সুস্থ থাকুক। সুন্দরভাবে পড়ালেখা শেষ করুক ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করুক।’
উপাচার্য বলেছেন, ‘এই বীমা প্রকল্পগুলোর সকল কার্যক্রম অনলাইন প্রক্রিয়ায় হবে। শতভাগ নিরাপদ ও জবাবদিহিতা থাকবে। এখানে কোনো ধরণের দুর্নীতির সুযোগ নেই। তাই সকল শিক্ষার্থীকে বীমা গ্রহণ করতে ও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সহায়তার আহ্বান জানাই।’
এই বিশেষ সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক (অব.) ড. মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম. তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডেসহ সকল অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি ও বিপুল শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
ওএস।