শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলে স্বাধীনতার দিনে ছাত্রলীগের খাবার ছিনতাই
লেখা ও ছবি : আসাদুল্লাহ গালিব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
খাবারের বিষয়ে হিন্দু, মুসলমান সব এক। ফলে খাবার ছিনতাইয়ের হল ‘সভাপতি’ ও ‘সাধারণ সম্পাদক’ মিলে গিয়েছেন। অন্যায়টি করেছেন তারা দুজনে-চিরন্তন চন্দ ও মোমিন ইসলাম।
অপকর্মটি করেছেন তারা স্বাধীনতা দিবসে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ শিক্ষক, ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য যিনি জীবন দিয়েছেন, সেই অধ্যাপক ড. শহীদ শামসুজ্জোহা হলে কাজটি করেছেন হল কমিটির এই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সরকারের পক্ষ থেকে হলগুলো ভালো খাওয়ানো হয় ছাত্র, ছাত্রীদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেদিন শনিবার দুপুরের ভাত, তরকারির বদলে মাংস, পোলাও দেওয়া হয়েছে ছাত্রদের। আবাসিক হলটির ছাত্ররা আগে থেকে লাইন দিয়ে টোকেন নিয়েছেন। তবে খাবার সংগ্রহের লাইনটি ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছেন চিরন্তন চন্দ ও মোমিন রহমান। পেছনে তাদের ছাত্রলীগ কর্মীরা।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. একরামুল ইসলাম ও আবাসিক শিক্ষকদের কাউকেই মানেননি তারা দুজনে। দলের তোয়াক্কায় তারা মোট ১শ ১২ প্যাকেট নিয়ে চলে গিয়েছেন হাসতে, হাসতে।
সাধারণ ছাত্ররা কাজগুলো চেয়ে, চেয়ে দেখেছেন। ভয়ে টুঁ শব্দটি করতে পারেননি। একজন ছাত্র সারোয়ার প্রতিবেদককে পরে বলেছেন, ‘আমিও টোকেন হাতে দাঁড়িয়ে। তখন আমাদের হলের ছাত্রলীগের নেতা ও তাদের কর্মীরা আমাদের খাবার নিয়ে গিয়েছেন। খিদেয় ও ভালো খাবারের আশায় আমাদের অপেক্ষা তারা নসাৎ করে দিয়েছেন। এরপর আমার টোকেন জমা দিয়ে অধ্যাপক ড. একরামুল ইসলামের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছি।’
আরেকজন বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী এবং ভালো দলের কাছ থেকে স্বাধীনতার দিনে খাবার ছিনতাই চিন্তাও করা যায় না, কাম্য হতে পারে না।’
শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলের প্রভোষ্ট অধ্যাপক ড. একরামুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা দিবসে খাবারের আয়োজনে কোনো কমতি ছিল না। ঘাটতিও নয়। তবে এই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মীরা আমাদের সাধারণ ছেলেদের খাবারগুলো নিয়ে যাওয়ায় খাবারের সংকট হয়েছে। তারা আমার ও আমাদের সঙ্গে ছাত্র হিসেবে প্রত্যাশিত আচরণ করতে পারেনি। তাতে আমরা বেদনাবোধ করেছি।’
তিনি এই অন্যতম প্রধান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ হলবাসী ছাত্রদের খাবারের কোনো সংকট স্বাধীনতা দিবসে ঘটতে দেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রভোষ্ট স্যার বলেছেন, ‘টোকেনের পরও যারা খাবার পায়নি, তাদের জন্য পরে আমরা বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় খাইয়েছি। ঘটনাটি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছেন।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেছেন, ‘আমাদের শহীদ অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা হলে স্বাধীনতা দিবসের খাবার ছাত্রলীগের ছিনতাই আমার প্রক্টরিয়াল টিম পরিদর্শন করেছে। জড়িতদের বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ আমাদের কাছে রিপোর্ট দিলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব।’
ড. শামসুজ্জোহা হলের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ও খাবার ছিনতাই ঘটনার অন্যতম নেতা মোমিন রহমান বলেছেন, ‘আমরা আগেই আমাদের প্রভোষ্ট স্যারের কাছে ১শ প্যাকেট চেয়েছি। পরে কর্মীরা সম্মিলিতভাবে গিয়ে এই খাবারগুলো নিয়ে এসেছে। এতে খাবারের কিছুটা সংকট হয়েছে তবে আমি খবর নিয়েছি, পরে অধ্যাপক ড. একরামুল ইসলাম ও অন্য শিক্ষকরা সবার খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।’
তবে তিনি দাবী করেছেন তারা কোনো খাবার ছিনতাই করেননি। তার সভাপতি চিরন্তন চন্দ এই ঘটনার পর লুকিয়ে পড়েছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া খাবার ছিনতাই ঘটনা নিয়ে বলেছেন, ‘এই অনিয়মের বিষয়ে আমি জানি না। তবে ছাত্র হিসেবে আমার বক্তব্য, এমন কোনো অনিয়মও সমীচীন নয়। আমরা যে বা যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিপক্ষেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ওএস।