রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : খাবারের মান বাড়েনি, দাম বেড়েছে
লেখা ও ছবি : আসাদুল্লাহ গালিব
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানের ভাসমান খাবারের দোকানগুলোর মালিকেরা ইচ্ছেমতো, লাগামহীনভাবে দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র, ছাত্রীরা।
সরেজমিনে এই প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর, সিলসিলা, স্টেশন বাজার ও জিয়া হলের সামনের দোকানগুলো ঘুরে খাবারের দামের তারতম্য জেনেছেন। এতে সাধারণ ছাত্র, ছাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে তার কাছে অভিযোগ করেছেন। তারা আরো অভিযোগ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। আর কোনো খাবারেরই মান বাড়েনি দাম বাড়ার পরেও।
টুকিটাকি চত্বরের বিভিন্ন দোকানে ভাতের প্লেটের দাম ১৫ টাকা। বটতলার মিজানের দোকানে ১০ টাকা। টুকিটাকিতে দুটি পরটা আর এক প্লেট ভাজির দাম ২৪ টাকা। জিয়া হলের বাবুর দোকানে একই খাবারের দাম ১৫ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের স্টেশন বাজারে সিস্টেম মিল ২৫ টাকা, পাঁচ পদের সবজি দেওয়া হয়। তবে টুকিটাকিতে এই সিস্টেম ভাজিই আরো অনেক কম ভালো মানের খাবারে পাতলা ডাল, এক টুকরো বেগুন ভাজি আর আলু ভাজির পদে ৩৫ টাকা রাখা হয়। সিলসিলাতে এক প্লেট ভাতের দাম ১৫, অন্য জায়গাতে ১০ টাকা।
স্টেশন বাজার, জিয়া হলের সামনের দোকানগুলোতে একটি পুরি ও চপের দাম পাঁচ। সিলসলিা ও টুকিটাকিতে আট টাকা। কটি দোকানে খিুঁচড়ি মেলে ২০টা প্লেটে। তবে পরিমাণে খুব কম থাকে। এই যে দামের তারতম্য তাতে কোনো বিকার নেই প্রশাসনের। মান বাড়েনি কোথাও। তবে খাবার কিনে খাওয়ার সময় ছাত্র, ছাত্রী ও দোকানদার, কর্মচারীদের মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া হচ্ছে।
ছাত্রদের পক্ষ থেকে মতামত চাইতে গেলে আইনের তৌফিক বলেছেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরের খাবারের দাম অন্যান্য জায়গার চেয়ে বেশি। এই জায়গা ও সিরাজি ভবনের সামনের দোকানদাররা বলেছেন, খাবারের জন্য উপকরণগুলোর দাম বড়েছে। তবে আমাদের মতে, তারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফায়দা লুটেছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও কোনো খাবারের জন্য নির্ধারিত মূল্য তালিকা প্রদান করেননি। ফলে এই দাম বাড়া ও সেভাবে টাকা আদায় চলছে।’
‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোথাও কোনো মনিটরিং বা নজরদারির ব্যবস্থা চালু করেননি’-এই অভিযোগ করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার ছাত্র আশিকুল ইসলাম ধ্রুব। তিনি আরো বলেছেন, ‘অধ্যাপকরা নিয়মিত প্রশাসনিকভাবে দোকানগগুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে দাম যেমন কমতো, তেমনি খাবারগুলোর মানও অনেক ভালো হতো। আমাদের সব কষ্ট দূর হতো।’
তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গিয়েছে, একবেলা ভালো ভাবে খেতে গেলে একজন ছাত্র ও ছাত্রীর ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ হয়। মাসে ১৫শ টাকা। তিনবেলা থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা অন্তত দিতে হয় তাকে। এটি কোনোভাবেই সম্ভব হয় না কোনো ছাত্র, ছাত্রীর জন্য। ধ্রুব আরো জানিয়েছেন, ‘আমাদের কারো পরিবারেরই মাসের আয় বাড়েনি। রাজশাহীতে আয়ের অবস্থা ভালো নয়। ফলে আমাদের প্রায় সব ছাত্র, ছাত্রীরই বাড়তি কোনো রোজগার নেই।’
বিভিন্ন জায়গার দোকানদারদের সঙ্গে কথা বললে তারা হোটেল মালিক থেকে খুচরো দোকানদার পযন্ত একটি কথাই বলেছেন, আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তির সময়ে প্রদান করা খাবারের তালিকার নির্ধারিত দামে খাবার বিক্রি করছি। অনেকে জানিয়েছেন, তারা এই তালিকার চেয়েও কম দামে খাবার বিক্রি করছেন। রুটি ও পুরির দাম বাড়ানো হয়েছে বলেছেন। এর কারণ হলো বাজারে তেল, গ্যাসের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। ফলে তারা দুই একটি টাকা করে খাবারের আইটেমপ্রতি দাম বাড়িয়েছেন জানিয়েছেন। তারা অঙ্গীকার করেছেন সবাই, বাজারে আমাদের ব্যবসা পণ্যগুলোর দাম কমলে আমরা কম দাম রাখবো। বাড়লে সেভাবে ছাত্র, ছাত্রীদের কাছ থেকে দাম বেশি রাখতে হয়।
কনজ্যুমার ইয়ুথ নামের ভোক্তাদের তরুণ সংঘের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জেড এম. তৌহিদুর নূর প্রীতম বলেছেন, ‘আমরা এই বিষয়ে কাজ করে চলেছি। আমাদের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হকের সঙ্গে দেখা করেছি। স্যারকে লিখিতভাবে আমাদের পাঁচদফা দাবী জানিয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচায প্রশাসন অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলামের সঙ্গে দেখা করবো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেসব দোকান পরিচালিত হচ্ছে প্রশাসনের মাধ্যমে সেগুলোতে খাবারের মূল্য তালিকা সংযোজন ও সমন্বয়ের জন্য কাজ কবর। তাকে গিয়ে আমাদের প্রস্তাব জানাবো। কনজ্যুমার ইয়ুথ আশা করে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের অনিয়ন্ত্রিত দামগুলো কমানো ও খাবারের মান বাড়াতে প্রশাসন শীঘ্রই কাজ শুরু করবেন।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক তার ক্যাম্পাসের ভাসমান দোকানগুলোতে খাবারের দামের হেরফের ও বাড়া নিয়ে বলেছেন, ‘এটি আমাদের নজরে আছে। প্রক্টরিয়াল বডি এর মধ্যে স্টেট দপ্তরকে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছে। খুব দ্রুত দোকানগুলোতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য তালিকা প্রয়োগ ও টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হবে। এরপরও খাবারের দাম কেউ বাড়ালে, খারাপ খাওয়ালে আমরা তুলে দেব, ব্যবস্থা নেব।’
ওএস।