চার ছাত্রের সিট বাতিলের বিপক্ষে, নানা দাবীতে অগ্নিবীণার প্রভোস্টের রুমে তালা
লেখা ও ছবি : আতোয়ার রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের প্রাধ্যক্ষ বা প্রভোস্ট অধ্যাপক কল্যাণাংশু নাহার বিপক্ষে নানা অভিযোগ করে আবাসিক ছাত্ররা তার অফিস রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনা ঘটেছে ২১ মার্চ সোমবার। রবিবার ২৭ মার্চ বিকেল ৪টায়ও তার রুমটি বন্ধ রয়েছে। সাতটি দিন এই রিপোট লেখা পর্যন্ত প্রভোস্ট স্যার রুমে বসে অফিস করতে পারেননি।
অগ্নিবীণা হলে স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন করলেও তিনি তাই তার রুমে বসতে পারেননি। হল সুপারের রুমে বসেই কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করেছেন ও অংশ নিয়েছেন অধ্যাপক কল্যাণাংশু নাহা।
তার বিপক্ষে হলের আবসিক ছাত্রদের অভিযোগ, যে চারজন ছাত্রের আসন বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো অযৌক্তিক। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃংখলা কমিটির অন্যতম সদস্য তিনি, হলের প্রধান হিসেবে তদন্তে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখতে হয়েছে।
২০ মার্চ তার হলেই সঙ্গীত বিভাগের ছাত্র সাগরচন্দ্র দে’কে র্যাগিংয়ের মাধ্যমে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এই ঘটনায় চারুকলার সৌমিক জাহানকে সাময়িক বহিস্কার ও তার অভিভাবকদের হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে স্থায়ী বহিস্কারের বিপক্ষে কারণ জানানোর নিদেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে সাগরের চিকিৎসার খরচ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাগরকে তাদের মারার ঘটনাস্থল ২০৪ নম্বর রুমের চার আবাসিক ছাত্র লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যার রাজু মিয়া, অর্থনীতির নাজমুল হুদা দেওয়ানী ও চারুকলার আফজাল হোসাইন শান্ত ও খন্দকার রিফাদুল হাসানের সিটগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। দুঃখজনক ঘটনাটির তদন্ত কমিটির সভাপতি তিনি। হলের ছাত্রদের একটি অংশ তার বিপক্ষে তদন্তের প্রতিবেদনে ঘটনাটি যথাথ প্রতিফলন না ঘটনার অভিযোগ এনেছে ও আন্দোলনে নেমেছে। সেটির অংশ হিসেবে তার রুমে তালা দিয়েছে। তার বিপক্ষে হল প্রশাসনের প্রধানের দায়িত্ব পালনের অনীহার অভিযোগ আছে বরাবর আবাসিক ছাত্রদের। তারা অনেক সমস্যার সমাধানে তিনি উদ্যোগী নন বলে জানিয়েছেন।
তানজীম হাসান বলেছেন, ‘প্রাধ্যক্ষ হিসেবে স্যারের নিয়োগপত্রে ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২৪ ঘন্টা থাকার কথা আছে। তবে তিনি ময়মনসিংহ শহরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। কিছুদিন ধরে স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছেন। আমাদের ডাইনিংয়ের খাবারের মান ভালো নয়। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেন না। প্রায়ই পানি থাকে না বাথরুমে। দুর্গন্ধে যাওয়া যায় না। রান্নার গ্যাসের সংকট প্রকট হচ্ছে। তার হল প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই।’
কল্যাণাংশু নাহা উত্তরে বলেছেন, ‘আবাসিক ছাত্ররা কটি দাবী নিয়ে আমার হলের অফিসে তালা দিয়েছে। যদিও তাদের কাছ থেকে কোনো দাবী আমি পাইনি। নিজে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ১২ মার্চ এই হলের সাগরকে র্যাগিংয়ের নামে মারধর ও গুরুতর আহত করার দায়ে আমাদের শৃংখলা কমিটি ২০ মার্চ তদন্তের মাধ্যমে কটি সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। এই প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন করেছে তারা। তারা শৃংখলা কমিটিকে চার ছাত্রের আসন বাতিলে সিদ্ধান্ত থেকে সরার জন্য দাবী করেছে। কেন সেটি আমি জানি না। তবে হল প্রশাসন তো এই নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে। বড়জোড় জানাতে পারে। আমরা জানিয়েছি।’
এই অধ্যাপক ও অন্যতম প্রভোস্ট বলেছেন, ‘আমার হলের রুমে ওরা তালা দিয়েছে, সেটিও প্রশাসনকে বলেছি। তারা কতদূর এগিয়েছেন আমি এখনো জানি না।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেছেন, ‘অধ্যাপক কল্যাণাংশু নাহার বিষয়টি সমাধানে হল প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারেন।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেছেন, ‘হলের ভেতরের বিষয় হল প্রশাসনের, আমাদের প্রক্টরিয়াল বডির প্রধান হিসেবে আমার কোনো বক্তব্য এই বিষয়ে নেই।’
ওএস।