নেতারা ১৫০ থেকে ২শ প্যাকেট নিয়ে গেলেন
লেখা ও ছবি : শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
২৬ মার্চ, ২০২২-বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার একমাত্র সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-‘শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’র আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র, ছাত্রীদের দেওয়া সরকারি খাবারগুলো নিয়ে অনিয়ম ও দুনীতির অভিযোগ করা হয়েছে। তারা সবাই নিম্মমানের খাবার খেয়েছেন বিশেষ দিবসে। অনেকে খাবার পাননি, পিকআপে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ ২৪.কমের বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রাকিব লিখেছেন, ‘ছাত্র, ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করা এই বিশেষ খাবারগুলো রান্না করা হয়েছে। এরপর টোকেনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে বিলি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে খাবারের প্যাকেটগুলোর মধ্যে গড়ে ১শ ৫০টি থেকে ২শটি প্রতিটি হলের ছাত্রলীগের নেতাদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা ফ্রিতে এই খাবারগুলো নিয়ে গিয়েছেন।’
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট হল আছে সাতটি। ছেলেদের চারটি-শের-ই-বাংলা, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ও শেখ লুৎফর রহমান হল। মেয়েদের আছে তিনটি-বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ সায়েরা খাতুন ও শেখ হাসিনা হল। এই সাতটি হলের শত, শত ছাত্র, ছাত্রীর অনেকে ভালো খাবার খেতে পারেননি।
এছাড়াও এই খাবারগুলো সাবেক হল প্রভোস্টদের প্রদান করা হয়েছে। হল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে ছাত্র, ছাত্রীদের জন্য উপহার হিসেবে দেওয়া বিশেষ খাবারের প্যাকেটগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্র অভিযোগ করেছে, “এর বাদেও আমি একটি সমস্যায় দুপুরে খাবার আনতে যেতে পারিনি। ফলে সন্ধ্যায় টোকেন আনতে গেলে প্রভোস্ট স্যার বলেছেন, আর টিকেট নেই। শেষ হয়ে গিয়েছে’। আমি খাবার পাইনি। খেতে পারিনি।”
‘আমার প্রশ্ন হলো, ছাত্র, ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করা খাবারের চেয়ে অনেক অতিরিক্ত খাবার থাকলেও সেগুলো কোথায় গিয়েছে?’
তারা অভিযোগ করেছেন, ‘পিকআপে ভতি করে স্বাধীনতা দিবসের খাবার নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলো থেকে।’
এই বিষয়তে নিয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেছেন, ‘এই স্বাধীনতা দিবসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের প্রতিটি হল থেকে ১শ ৫০টি থেকে ২টি করে গড়ে প্যাকেট খাবার প্রদান করা হয়েছে।’ তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘এছাড়াও প্রতিটি হলের সাবেক প্রভোস্ট, আবাসিক অধ্যাপক, অধ্যাপক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হল থেকে দিবসের খাবার দেওয়া হয়েছে। এই রীতি অনেক আগে থেকে চলে আসছে এখানে।’
এই নিয়ে ছাত্র, ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ‘জনগণের বা আমাদের টাকায় অতিরিক্ত খাবার তৈরি করার পরও আমাদেরকে নিম্মমানের খাবার কেন দেওয়া হলো? আর তারা সবাই কেন ফ্রিতে আমাদের খাবার খাবেন?’ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা আলোচনায় বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন। তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন।
ছাত্র, ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছেন আমাদের শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। তাকে শেখ হাসিনা হলের একজন ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শতে জানিয়েছেন, ‘আমাদেরকে দেওয়া খাবার নিয়ে এসে খেতে বসে দেখলাম খাসির মাংসে দুগন্ধ ছুটেছে।’ তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘অনেক হলে মাংসের পদের সঙ্গে সবজির তরকারি দেওয়া হলেও আমাদের হলটিতে দেওয়া হয়নি। আমরা অন্যদের মতো কমলাও কেন পেলাম না? সবাই তো সমান টাকা ভর্তি হয়েছি। সমান বেতন প্রদান করে যাচ্ছি।’
আরেকজন অভিযোগ করেছেন, “কোনো সমস্যা নিয়ে হলের কর্তৃপক্ষদের ফোন করলে তারা প্রায়শই ফোন ধরেন না। বাজতে থাকে। কোনো কারণে বা দয়া দেখিয়ে ফোন ধরলে না ধরার বিষয়ে বলেন, ‘আমাদেরও ব্যক্তিগত জীবন আছে। সারাদিন ফোন নিয়ে বসে থাকতে পারব না’।”
ফেইসবুকে ছাত্র, ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের স্বাধীনতা দিবসের খাবার প্যাকেট আকারে টোকেনের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি খাবারের প্যাকেটের দাম ধরা হয়েছে ৩শ ৭৫ টাকা। তবে আমরা খাবারগুলো খুলে ও খেয়ে দেখেছি, কোনো প্যাকেটের খাবারের দাম ২শ টাকার বেশি নয়। ফলে আমাদের জনপ্রতি বরাদ্দ ১৭৫ টাকা কেন বেশি রাখা হলো? এত টাকা কোথায় গেল? কে নিয়েছেন? এই প্রশ্ন নিয়ে নবাব সিরাজ উদ-দৌলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম খানের কাছে গেলে তিনি বলেছেন, ‘আমি কোনো মন্তব্য করব না।’
ওএস।