২৪ জেলার মতো বরিশালে জলবায়ু বাঁচানোর আন্দোলন হলো
‘বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট’র পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল ২৪ মার্চ, বৃহস্পতিবার, সকাল ১০টা থেকে বরিশাল শহরের ১শর বেশি স্কুল শিক্ষাথীসহ তরুণ-তরুণী জলবায়ু সুবিচারের আশায় বগুড়া রোড এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় থেকে সরকারি বালিকা বিদ্যালয় পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন।
বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এই ছাত্র-ছাত্রীরাদের সঙ্গে জলবায়ু ও পরিবেশ অধিকারকর্মীরা ছিলেন। তারা সবাই বৈশ্বিক কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমণ হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনে ঐতিহাসিকভাবে দায়ী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিতে স্বোচার হয়েছেন। দাবীগুলোর প্ল্যাকার্ড বয়ে তারা বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ নামের বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ধর্মঘটের ডাকে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সবাই। বিশ্বের এক হাজারেরও বেশি স্থানে তাদের মতো কিশোর-তরুণ ও সচেতনরা গতকাল রাজপথে ও অনলাইনে ধর্মঘট পালন করেছেন।
বরিশালে জলবায়ু বাঁচাও আন্দোলনের আয়োজন করেছে তাদের স্বেচ্ছাসেবী আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ ও ‘ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’। তারা সভা করেছেন। ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বরিশাল জেলা সমন্বয়কারী আশিকুর রহমান সাকিব সভাপতি। আলোচনা করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেস ক্লাব সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ‘ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’র নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান, প্রতীকী যুব সংসদ’র চেয়ারপারসন আমিনুল ইসলাম, প্রকল্প সমন্বয়ক ময়ূরী আক্তার টুম্পা, দৈনিক দেশ রূপান্তরের বরিশাল প্রতিনিধি সাংবাদিক সাইফুর রহমান মিরন, সমাজকর্মী আরিফুর রহমান শুভ, আল শাহরিয়ার ফাহিম, সনৎকৃষ্ণ ঢালী প্রমুখ। তারা সবাই সংহতি প্রকাশ করেছেন।
সোহানুর রহমান বলেছেন “সহানুভূতি বা ক্ষতিপূরণের বদলে আমরা সবার কাছে ন্যায়বিচার ও দায়িত্ববোধের দাবি করছি। জলবায়ু বাঁচানোর কার্যক্রম ত্বরান্বিত-অভিযোজন ও সহনশীলতা বাড়ানো কঠিন মনে হতে পারে, তবে আবশ্যক। আমাদের দেশে কয়লা বিদ্যুতে বিদেশী অর্থায়ন বন্ধের প্রতিশ্রুতি প্রদানের পরও জাপান ‘মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ফেজ-২’-এ অর্থায়ন বিবেচনা করছে। উন্নত ও সভ্য দেশটির উচিত, কয়লাখাতে অর্থায়ন বন্ধ করে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ। কয়লা বা অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে নয়, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ বাড়াতে আমরা দাবি জানাচ্ছি।”
অন্যরা বলেছেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর বিদ্যুতে উন্নত দেশগুলোসহ বহুজাতিক বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এই জলবায়ু কর্মীরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনরোধে এসব দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো বহুদিন ধরে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। জাপান ও তাদের সুমিটোমো করপোরেশন; যুক্তরাষ্ট্র ও জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, এইচএসবিসি ব্যাংক এই খাতে অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী।’
‘ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস তাদের জলবায়ু দূষণের অন্যতম বৈশ্বিক সংঘ’ উল্লেখ করে দায়ী করছে।
তারা ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ও বাংলাদেশের জন্য বেশি আর্থিক বোঝা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। নতুন বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যানে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লা পাওয়ার প্ল্যান্ট ফেজ-২ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন সবাই।
উল্লেখ্য, এই বছর বাংলাদেশের ২৫টি জেলায় একত্রে ও এক সময়ে বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। সেগুলো হলো-ঢাকা গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, বান্দরবান, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, নড়াইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও গাইবান্ধা।
প্রতিটি জেলায় একসময়, একসঙ্গে সারা বিশ্বের মতো এ দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীরা কালো শোকের পোষাক পরেছেন। তারা জীবাশ্ম জ্বালানীর ক্ষতিকর প্রভাব, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডে বহন করেছেন। জলবায়ু বাঁচাতে মানববন্ধন, পদযাত্রা ও নাটকে করেছেন।
ওএস।