আজ বিশ্বকবির চলে যাওয়ার দিন
আজ (শনিবার) ২২শে শ্রাবণ। এ দিনটি এলেই সাহিত্য পিপাসু মানুষের মনে গভীর এক বিষাদ ভর করে। মহাকালের চেনাপথ ধরেই প্রতিবছর ফিরে আসে এই বাইশে শ্রাবণ।
কারণ, বাইশে শ্রাবণেই চলে গেছেন বাংলা সাহিত্যের সবেচেয়ে শক্তিশালী চর্চার কবি ররীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্র ভক্তদের কাছে শূন্যতার একটি দিন। আজ এই বিশ্বকবির ৮১তম প্রয়াণ দিবস।
১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে অন্তিমযাত্রা করেছিলেন তিনি। দিবসটি ঘিরে ছায়ানট, বাংলা একাডেমি, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নানা আয়োজন করেছে।
শনিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানটের ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে ছায়ানটের বিশেষ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।
১২৬৮ বাংলা সালের পঁচিশে বৈশাখ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদাসুন্দরী দেবী। আট বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। কাব্য, সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, শিশুতোষ রচনাসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখা স্পর্শ করেছেন তিনি।
জীবনের শেষ পর্যায়ে গভীর আগ্রহে চিত্রকলার চর্চাও শুরু করেন এই কবি। সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি সমাজসংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, কৃষি উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মেও অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি।
১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচিতে তার লেখা সংযোজিত হয়েছে। ১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। দুই হাজার গান রচনা করেছেন তিনি। অধিকাংশ গানে সুরারোপও করেছেন নিজেই। তার লেখা গানগুলো সংকলিত হয়েছে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে। কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারত ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতটিও তার লেখা।
রবি ঠাকুরের আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ ৫২টি, উপন্যাস ১৩টি, ছোটগল্পের বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃত্যুর পর ৩৬ খন্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলি’ প্রকাশ হয়। এ ছাড়া ১৯ খন্ডে রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র’।
জীবদ্দশায় মৃত্যুকে তিনি জয় করেছেন বারবার তার সৃষ্টির মাধ্যমে। ৩০ জুলাই, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবির শরীরে অস্ত্রোপাচার হল। তার কিছু পূর্বে শেষ কবিতা রচনা করেন ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি, বিচিত্র ছলনাজালে হে ছলনাময়ী।’ চিকিৎসকরা অস্ত্রোপাচার করলেন তা নিস্ফল হয়। অবস্থা দ্রুত মন্দের দিকে যেতে লাগল। তিনি জ্ঞান হারালেন। শেষ নিশ্বাস পড়ল রাখীপূর্ণিমার দিন মধ্যাহ্নে, বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ, ইংরেজি ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কবি চলে গেলেন চিরপ্রস্থানে।
এএম/এমএমএ/