বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

মার্কেটে আগুন: আরও সময় চেয়েছে তদন্ত সংস্থাগুলো

রাজধানীর বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে আগুন ও সিদ্দিক বাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে কোনো তদন্ত কমিটিই প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আরও সময় চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি ঘটনায় পৃথকভাবে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের বিশেষ শাখা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্ত কমিটিগুলোকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এই সময়সীমা বেশ আগেই পার হয়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হয়ে গেছে। নতুন করে আবেদন করা হয়েছে সময় বাড়ানোর জন্য। সবগুলো তদন্ত কমিটিই সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আগুন লাগার ধরন দেখে আমরা নাশকতার বিষয়টিও মাথায় রেখেছি। সেই অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। সেজন্যই একটু সময় লাগছে।

রমজান মাসে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ৫১ ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। এই ঘটনায় সবকিছু পুড়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের কান্নার মাতম না থামতেই নিউ সুপার মার্কেটে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এতে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তারও আগে সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ভবনটি একরকম ধ্বংস হয়ে যায়।

দুটি মার্কেটেই আগুন লাগে ভোরবেলা।এতে মনে করা হচ্ছে নাশকতা হতে পারে। এ ছাড়া সিদ্দিকবাজারের ভবনের বিস্ফোরণের ধরন দেখেও সংশ্লিষ্টদের ধারণা নাশকতা হতে পারে।

যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ রকম বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের পেছনে মানুষের অসাবধানতা ও অজ্ঞতাকে দায়ী করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। কর্মকর্তারা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে (অক্টোবর-এপ্রিল) সারাবিশ্বেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। মানুষ সচেতন হলে এটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ঘনঘন কেন আগুন লাগছে তা ক্ষতিয়ে দেখতে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাজধানীর ৫৮টি বিপণিবিতান পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। তারা তাদের পর্যবেক্ষণে জানায়, ৫৮টি বিপণিবিতানের সব ক'টিই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৪৯টির মধ্যে ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৪টি মাঝারি মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোর অগ্নিঝুঁকির মাত্রা কেমন, সেটি নিরূপণ করা ফায়ার সার্ভিসের নিয়মিত কাজের অংশ। তবে করোনাসহ বেশ কিছু কারণে ২০১৯ সালের পর ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতানের তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস বলছে- এসব বিপণিবিতান অগ্নিঝুঁকিতে থাকলেও ব্যবসায়ীরা বেশ উদাসীন। তারা সারা বছর কোনো কার্যকর উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নেয় না। অগ্নিঝুঁকি কমাতে এসব মার্কেটে নেই নিরাপত্তা সরঞ্জাম, হয় না নিয়মিত মহড়া, নেওয়া হয় না অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ফলে আগুন লেগে গেলে প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।

তবে রমজানের মধ্যে এবার বেশির ভাগ মার্কেটগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ভোরবেলা বা সেহরির পরে। এসব আগুনের ঘটনায় অনেকে আবার রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততার কথাও বলছেন। এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেলে সে বিষয়ে হয়তো জানা যাবে।

বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক বি এম হাবিব অভিযোগ করে বলেন, জমি ফাঁকা করার জন্য অগ্নিসংযোগ নাশকতার ঘটনা হতে পারে। এরই মধ্যে নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগল। এর আগে পুরান ঢাকায় দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন লাগে। এতে আমাদের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আসলেই এই আগুন কিসের আগুন!

অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক স্থানে অনেকটা একই প্যাটার্নে আগুন লাগা কতটা স্বাভাবিক- এমন প্রশ্নের জবাবে অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার (অব.) আলী আহমেদ খান বলেন, আগুনের বিষয়টি একটা চিন্তার বিষয়। তদন্ত ছাড়া এই বিষয়ে কিছু মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আমার মনে হয়, ইন্টেলিজেন্সগুলোর উচিত এটা তদন্ত করে দেখা। যেভাবে মার্কেটগুলোয় আগুন লাগার ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।

এই বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, নাশকতা মনে করলে আগে দেখতে হবে, এ ঘটনায় কে বা কারা লাভবান হচ্ছে। আর যদি কেউ লাভবান না হয় তাহলে এটা নাশকতা নয়।

এসব বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থাদের পরামর্শ দিয়ে অপরাধ বিশ্লেষকদের দাবি, যেসব মার্কেটের জমি দখল বা মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেসব বিষয়ে জোরদার তদন্ত করে অপরাধী যদি কেউ থাকে তা খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আবার নাশকতার অভিযোগে কোনো দল বা গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা যদি পাওয়া যায়, তবে তাদেরও বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। তাদের দাবি, তদন্ত যেন না হয় কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। নচেৎ এ আগুনের লেলিহান শিখায় একদিন পুড়তে হবে নিজেকেই।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, হঠৎ সারাদেশে আগুনের ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনা নাশকতা না কি সেই বিষয়টি বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলে। এমন ভাবে আলোচনার কারণ হল যে কোনো আগুনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে অনেক সময় লাগে। যার কারণে মানুষ আগে ভাগে নানা ধরনের আলোচনা করে। মার্কেটগুলোতে ঘনঘন আগুন কেন? নাকশতার গন্ধ নেই তো? হয়তো কিছু ঘটনায় নাশকতার চিত্র থাকতে পারে। ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। তারা ফাইনাল প্রতিবেদন জমা দিলে এই বিষয়ে আরও ভালোভাবে জানা যাবে।

আরইউ/এসএন

Header Ad

গাজায় আরো এক গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মরদেহ উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত

টানা সাত মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। ইসরায়েলি বর্বর এই হামলা নিরলসভাবে চলছে এবং এরই মধ্যে গাজার আল-শিফা হাসপাতালে মিলেছে তৃতীয় গণকবরের সন্ধান।

এই গণকবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বাতাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি মেডিকেল দলগুলো গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবর আবিষ্কার করেছে বলে বুধবার গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে।

মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ জনের লাশ গণকবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে এবং আরও লাশের খোঁজে অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা এখনও চলছে।

আনাদোলু বলছে, গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে সাতটি গণকবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে গত সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

ইসরায়েলি এই আক্রমণের ফলে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ৩৪ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং আরও ৭৮ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালে তিনটি গণকবর, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে তিনটি এবং উত্তর গাজার কামেল আদওয়ান হাসপাতালে একটি গণকবর পাওয়া গেছে। এতে আরও বলা হয়, সাতটি গণকবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫২০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলের মারাত্মক আক্রমণ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে গাজা উপত্যকা শাসনকারী দল হামাস।

গোষ্ঠীটি এক বিবৃতিতে বলেছে, নতুন গণকবরের আবিষ্কার ‘আমাদের জনগণ এবং চিকিৎসাখাতের বিরুদ্ধে অপরাধী দখলদার সেনাবাহিনীর বর্বরতার নতুন প্রমাণ’।

হামাস আরও বলেছে, (ইসরায়েলি) দখলদারিত্ব তাদের নির্মূল ও বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা অর্জনের জন্য (গাজায়) মানুষের জীবনের ভিত্তি ধ্বংস করতে চায়।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি সমস্ত মানবাধিকার গোষ্ঠীকে ইসরায়েলের এই অপরাধ নথিভুক্ত করার পাশাপাশি দেশটির দুর্বৃত্ত সত্তা ও অপরাধী নেতাদের জবাবদিহি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং অন্যান্য উপযুক্ত আদালতে সেগুলো পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েল গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন এক রায়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে।

সেসময় ওই রায়ে ইসরায়েলকে এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মংডুতে তুমুল সংঘর্ষ, টেকনাফ সীমান্তে ফের আতঙ্ক

ছবি: সংগৃহীত

টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ চলছে। মংডুর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে দুই পক্ষই বোমা ও মর্টার শেল হামলা বাড়াচ্ছে। এতে সেখানে রোহিঙ্গা বসতিতে হতাহতের ঘটনা বাড়ায় পালাচ্ছে মানুষ।

সংঘাত বাড়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিঘাটে মানুষ চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া টেকনাফের কায়ুকখালী ঘাট এলাকায় ট্রলারে মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে নাফনদ জেটিঘাট জনশূন্য পড়েছে।

মঙ্গলবার (৭ মে) বিকাল ৫টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জালিয়াপাড়া গ্রামের ওপারে সুদারপাড়া থেকে থেমে থেমে আসা গোলার শব্দে এপার কেঁপে উঠছে। সীমান্তে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের ঘটনায় এপারে বসবাসকারীদের মাঝে অস্তিত্ব বাড়ছে।

সীমান্তে বসবাসকারীরা বলছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া আরাকান আর্মি ও সরকারি সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান গোলা হামলার ঘটনায় এপারে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, খোনকারপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। আগের দিনের তুলনার এপারে গোলার শব্দ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এতে লোকজনের মাঝে অস্বস্তি বাড়ছে।

দুপুরে জালিয়াপাড়া বেড়িবাঁধে উদ্বিগ্ন চোখে বসে ছিলেন বৃদ্ধ শফিক চৌধুরী। দিনমজুর শফিক জানালেন, ‘সীমান্তে গোলাবারুদের ব্যাপক শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ওপারের গোলার শব্দে বাড়িঘর কাঁপছে। মনে হচ্ছে এখুনি সব তছনছ হয়ে যাবে। অস্বস্তি নিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। রাতের তুলনায় দিনে আরও ব্যাপক গোলাবর্ষণ হচ্ছে। সীমান্তের লোকজন খুবই চিন্তিত। এই ভিটা-মাটি ছাড়া আর কোনও আশ্রয়স্থল আমাদের নেই। এটা ছেড়ে যাবো কোথায়? এখনও মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ হচ্ছে। বিশেষ করে রাত হলে পরিবারের লোকজন নিয়ে ভয়-ভীতিতে থাকতে হচ্ছে। অনেক সময় গোলার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়।

মুন্ডারডেইল সীমান্তের বাসিন্দা জলিল মিয়া বলেন, আমাদের সীমান্তে নাফনদ না থাকলে পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হতো। নাফনদের কারণে সীমান্তে দূরত্ব রয়েছে। না হয় যেভাবে গোলাবর্ষণ চলছে, এপারে হতাহত এড়ানো যেতো না। কিন্তু সীমান্তে এখন যে পরিস্থিতি তাতে আমরা খুব ভয়ে আছি। ওপারের গোলার শব্দ এত তীব্র যে এপারে আমরা আতঙ্কে চমকে উঠি। তবে মিয়ানমারে এভাবে যুদ্ধ চলমান থাকলে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।

ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মতে, গত কয়েকদিন ধরে মংডু টাউনশিপে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১ নম্বর সেক্টরে হামলা চালায় আরাকান আর্মি। বিজিপির ক্যাম্প দখলে নেয় তারা। কিন্তু বেদখল হয়ে যাওয়া বিজিপির সেক্টরটি পুনরুদ্ধারে হামলা শুরু করে সরকারি বাহিনী। এতে মংডুর রোহিঙ্গাদের আটটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঘরবাড়ি হারিয়ে আবার অনেকে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রাখে।

তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-২) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, রাখাইনের সংঘাত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবু সীমান্তে ও নাফনদ জেটিতে প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে ঘুরাঘুরি করতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে ওপারে চলমান সংঘাতের কারণে যেন কোনভাবে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পরে সেজন্য বিজিবি শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

টেকনাফ পৌরসভার নাফনদের কাছাকাছি বসবাসকারী মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে বড় ধরনের গোলার শব্দ এপারে পাওয়া যাচ্ছে। ভয়াবহ শব্দে আতঙ্কে অনেকের ঘুম ভাঙছে। এই সীমান্তের ওপারে মংডুতে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে আরকান আর্মি এবং জান্তা সরকারের মধ্য। গোলার বিকট শব্দে আমাদের ঘরবাড়ি কাঁপছে। অনেক সময় মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে।

এদিকে দিন দিন সংঘাত বাড়ার কারণে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভা সংলগ্ন নাফনদে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাটে মানুষ চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ কায়ুকখালী ঘাটে ট্রলারে মাছ শিকার আপাতত বন্ধ রাখা রয়েছে।

সীমান্তের নাফ নদের ওপারে থেমে থেমে গুলিবর্ষণের কারণে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়েছেন টেকনাফ কায়ুকখালী বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম। তিনি বলেন, সীমান্তে পরিস্থিতি উত্তাল হওয়ায় আপাতত মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। তবে মাছ শিকার বন্ধে এই ঘাটের মাঝিমল্লাররা খুব কষ্টের জীবনযাপন করছেন।

নাফনদে ট্রানজিট জেটি ঘাটে টোল আদায়কারী ইমাম হোসেন বলেন, গত দুই দিন ধরে মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধে সীমান্ত উত্তাল। এ কারণে জেটি ঘাটে আগের মতো লোকজন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। গতকালের তুলনায় আজকেও সীমান্তে অনেক ভারী গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এতে নাফনদ জেটি ঘাটে শূন্য পড়ে আছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ওপারে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সর্তক অবস্থায় রয়েছে। মানুষ যাতে নির্ভয়ে থাকে সেজন্য সীমান্তে বসবাসকারীদের খোঁজ রাখছি।

এদিকে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপ দখল করে নিয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। দেশটির সরকারি সংস্থা বিজিপির সদস্যদের কেউ কেউ বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। গত দুই দিনে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের ১২৮ জনের মতো বিজিপি সদস্য এ পারে আত্মসমর্পণ করেছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের কাছে। নিরস্ত্র করে সবাইকে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়। বর্তমানে বিজিপির ১২৮ জনকে হ্নীলা উচ্চবিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। এর আগে দুই দফায় পালিয়ে আসা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনাবাহিনীর ৬১৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। এর মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৮৮ জন বিজিপি-সেনা এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও কাস্টমস কর্মকর্তাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।

ভারতে বেড়েছে মুসলিম, কমছে হিন্দুদের সংখ্যা: রিপোর্ট

ছবি: সংগৃহীত

ভারতে গত ৬৫ বছরে হিন্দু জনগোষ্ঠী কমেছে। অন্যদিকে এই সময়ের মধ্যে বেড়েছে সংখ্যালঘু বা মুসলিমদের সংখ্যা। ১৯৫০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ভারতের জনসংখ্যার ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ।

১৯৫০ সালে ভারতে মুসলিম ছিল ৯.৮৪ শতাংশ। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যার ১৪.১৫ শতাংশ মুসলিম। শিখ জনসংখ্যা ১.২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৮৫। বৃদ্ধির হার ৬.৫৮ শতাংশ। এছাড়া খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ৫.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে খ্রিষ্টান জনসংখ্যার হার ২.২৪ থেকে ২.৩৬ শতাংশ হয়েছে।

অন্যদিকে ১৯৫০ সালে ভারতের নাগরিক ছিলেন ৮৪ শতাংশ হিন্দু। পরের ৬৫ বছরে এই চিত্রটা পালটে গেছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ৮ শতাংশ কমেছে হিন্দুর সংখ্যা।

এই সমীক্ষাতে দেখা গেছে, মিয়ানমারেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে, এছাড়া হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে নেপালে। ১৬৭টি দেশের সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার সঙ্গে তুলনা করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর ইকনমিক অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল।

এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় হিন্দুদের সংখ্যা ভারতে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, এই রিপোর্ট প্রমাণ করছে, ভারতে সংখ্যালঘুরা কেবলমাত্র সুরক্ষিতই নয় বরং সংখ্যার হারে ক্রমবর্ধমান।

এদিকে, ভারতেরে উল্টো চিত্র বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে। এই দুই দেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা (হিন্দু) বেড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১৮.৫ শতাংশ হিন্দু নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তানে সংখ্যালঘু বেড়েছে ৩.৭৫ শতাংশ। এই ৬৫ বছরের মধ্যে আফগানিস্তানে হিন্দুদের সংখ্যা বেড়েছে ০.২৯ শতাংশ। সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডিয়া

সর্বশেষ সংবাদ

গাজায় আরো এক গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মরদেহ উদ্ধার
মংডুতে তুমুল সংঘর্ষ, টেকনাফ সীমান্তে ফের আতঙ্ক
ভারতে বেড়েছে মুসলিম, কমছে হিন্দুদের সংখ্যা: রিপোর্ট
নির্বাচনে হেরে গেলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাকের খালাতো ও মামাতো ভাই
শুক্রবার টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
'পুনর্জন্ম'র প্রযোজক রূহানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের যাবজ্জীবন
চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত হওয়া প্রশিক্ষণ বিমানের এক পাইলট নিহত
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক
২১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১২ রানেই অলআউট
পতেঙ্গায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
সন্ধ্যার মধ্যে ৬ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস, কমবে তাপমাত্রা
ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত বেড়ে ১০০, নিখোঁজ শতাধিক
বায়ার্নকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক
হজের প্রথম ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়লেন ৪১৯ হজযাত্রী
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হলেন যারা
বগি লাইনচ্যুত: ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন আবু সাঈদ