বিশ্ব পর্যটক কাজী আসমা আজমেরী এখন মরিশাসে
১৩০ দেশ ভ্রমণ শেষ করে বিশ্ব পর্যটক কাজী আসমা আজমেরী ১৩১তম দেশে পা রাখলেন। তিনি এখন মরিশাসে। গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পাসপোর্টে মরিশাস ১৩১তম দেশ হিসেবে আরও একটি স্বর্ণ উজ্জ্বল ভিসা লাগালেন তিনি। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা শহর থেকে আবারও বিশ্ব ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন কাজী আসমা আজমেরী। খুলনা ট্রেন স্টেশন থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। কলকাতায় নিজের কিছু কাজ করে ১০ সেপ্টেম্বর মুম্বাই হয়ে এয়ার মরিশাসে মরিশাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।
এর মাঝে ৯ সেপ্টেম্বর সকালে কলকাতা থেকে আফ্রিকার জন্যে তৃতীয়বারের মতো yellow fever Vaccine সংগ্রহ করে নেন তিনি। এর আগে সাউথ আফ্রিকার ডাকাতের কবলে পড়ে সবকিছু খুইয়েছিলেন তিনি। এর মাঝে এই ভ্যাকসিনও ছিল। কলকাতায় অনলাইন সুবিধা না থাকায় ভ্যাকসিন সংগ্রহে অনেকটাই ভোগান্তি পোহাতে হয় তাকে।
দেশের সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে মরিশাসে একাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। প্রথম দুই দিন সেন্ট লুইস থাকলেও ১৩ লাখ মানুষের ছোট্ট এই দেশটিতে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন শহর ও গ্রামে। সেই সঙ্গে সেখানকার স্কুল কলেজে তার ভ্রমণের গল্প শোনাচ্ছেন এবং মোটিভেশন স্পিক দিচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। সেখানকার ইউনিভার্সেল কলেজে প্রায় তিনটি সেশনে প্রায় ২৫০ জন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তার ভ্রমণের গল্প ও ছেলে মেয়েদেরকে স্বপ্নবাজ হয়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
আজমেরীকে মরিশাসের কথা জিজ্ঞেস করলেই তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই মরিশাস আমার অনেক পছন্দের একটি দেশ ছিল। যেখানে আমার হানিমুনে যাওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে একাই রওনা হয়েছি।
দেশটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ভারত থেকে এসে মনে হয়েছিল আমি আরেকটি ভারতের কমিউনিটিতে এসে পড়েছি, কিন্তু তারা অত্যন্ত আধুনিক চিন্তা চেতনার। অনেক উন্নত একটি দেশ। এই দেশে ফ্রান্স, ইংরেজি এবং হিন্দিসহ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা যায়।
মরিশাসে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে। ভারতের মুম্বাই থেকে মাত্র সাড়ে ৬ ঘণ্টার দূরত্বের এই দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য তুলে আনতে পারে অনেক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। মরিশাস যদিও ট্যুরিজম নির্ভর একটি দেশ কিন্তু কোভিডের কারণে এখানকার ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি বেশ একটি ধাক্কা খেয়েছে। মরিশাস ট্যুরিজম আবারও উঠে আসবে ইউরোপ-আমেরিকার চমৎকার ডেস্টিনেশন হিসেবে।
এখানে ৬০ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়, ২০ শতাংশ মুসলিম ও ২০ শতাংশ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। ব্রিটিশ সময়ে আখ চাষের উদ্দেশ্যে ভারত থেকে জাহাজে করে ভারতীয়দেরকে নিয়ে আসা হয়। তখন থেকেই ভারতীয়দের আধিপত্য রয়েছে এখানে। হয়তোবা তাই অনেক বাংলাদেশি টুরিস্টদের কাছেই মরিশাসকে ভারত ভারত লাগতে পারে। পোর্ট লুইস (Port Louis) শহর থেকে অনেকটা দূরে এয়ারপোর্ট হলেও এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ চমৎকার। এখানে রয়েছে বাস ও ট্যাক্সি সেবা। পোর্ট লুইস (Port Louis) রয়েছে মোটামুটি আধুনিকতার ছোঁয়া। ব্যাংক, অফিস-আদালত সবকিছুই রয়েছে এখানে।
এবার জানা যাক কীভাবে মরিশাসের ভিসা পাওয়া যায় বাংলাদেশি পাসপোর্টে?
মরিশাসের ভিসা নিতে হলে দিল্লি থেকে এপ্লাই করতে হয় যা মোটামুটি এক সপ্তাহ থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। ১০ ডলার থেকে ৩০ ডলার ভিসা ফি। দিল্লিতে দেওয়া হয় স্টিকার ভিসা। খুব সহজেই ফরম ফিলাপ করে তার সাথে কাগজপত্র জমা দিয়ে দিল্লি থেকেই ভিসা করা যায়। বেশ কিছু ট্রাভেল এজেন্সি মরিশাসের ভিসা করে থাকে। আমার জানা মতে, বনানীর এয়ার কনফিডেন্স তার মধ্যে অন্যতম। যদিও সাত থেকে দশ হাজার টাকা তারা ফি নেয়। তাতে দিল্লি আসার ঝামেলা থাকে না।
তবে আমি সাউথ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া থেকে আমার ভিসাটা নিয়েছিলাম। আমার তিন সপ্তাহ সময় লেগেছিল। মাত্র ১০ ডলার খরচ হয়েছিল। তবে মাঝে মাঝে দেশভিত্তিক ভিসা ফি পরিবর্তন হয়ে থাকে। এই ভিসাটা ছিল সম্পূর্ণ পেপার ভিসা, যা মরিসাস মিনিস্ট্রি অব ডিপার্টমেন্ট এপ্রুভাল ছিল।
মরিশাস কেন মানুষের স্বপ্নের জায়গা হতে পারে?
আজমেরী বলেন, নীল সমুদ্র মরিশাসকে ঘিরে তুলেছে অনন্য করে। ওয়েলকাম থেকে শুরু করে বেশ কিছু রোমান্টিক হিন্দি মুভির শুটিং হয়েছে এই মরিশাসে।
মরিশাসের হোটেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা এবং দাম?
তিনি বলেন, নীল সমুদ্রের সঙ্গে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু রিসোর্ট। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান রিসোর্টটি বেশ উল্লেখযোগ্য। র্যাডিসন ব্লু, জে ডাব্লু ম্যারিয়ট থেকে শুরু করে সস্তায় ও অনেক অ্যাপার্টমেন্ট এবং ভিলা ভাড়ায় নিয়ে নেওয়া যায়। বাংলাদেশি টাকায় ২২০০ থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। মোটামুটি একটি এক রুমের সুন্দর ফ্ল্যাট কিংবা রুম ভাড়া করতে ২২০০ টাকা লাগে। যা প্রতিদিনের ভাড়া হিসেবে ধরা হবে। আর ফাইভ স্টার রিসোর্টগুলোতে মোটামুটি ১২০ ডলারে অনেক ভালো রুম পাওয়া যায়, যা কিনা সমুদ্রের তীর ঘেঁষা।
খাওয়া-দাওয়া মরিশাসে?
আজমেরী বলেন, হানিমুনে গিয়ে যারা থাইল্যান্ডে হালাল খাবারের জন্য কষ্ট করেছেন তাদের জন্য মরিশাস চমৎকার একটি জায়গা হতে পারে। ২০ শতাংশ মুসলিম থাকায় হালাল খাবারের অভাব হয় না এখানে। চমৎকার ইন্ডিয়ান কারি এবং সকালে রুটি, পুরি, ভাজি অতুলনীয়। তার সাথেই রয়েছে ফ্রান্স কিচেনের আধিপত্য।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে চমৎকার খাবার পাওয়া যায় পোর্ট লুইসের ফ্রি মার্কেটে। বাংলাদেশি টাকায় ১৫০-৩০০ টাকার মধ্যে চমৎকার লাঞ্চ করা যায়। রেস্টুরেন্টে গেলে কিছুটা বেশি টাকা গুনতে হবে। তবে সাধ্যের মধ্যেই আছে অনেকটা ঢাকার মতন। ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে খুব চমৎকারভাবে এই খাওয়া-দাওয়া করা যায় ভালো ভালো রেস্টুরেন্টগুলোতে। খাবারের মধ্যে চমৎকার এখানকার বিরিয়ানি, চিকেন কারি ও ভুনা।
কোন জায়গাগুলোতে বেড়াতে যাবেন মরিশাসের?
আজমেরী বলেন, সুন্দর নীল সমুদ্রে ঘেরা grand bay, Belle Mare Plage এ ঘুরতে মজাই অন্যরকম। Snokling ও scuba ড্রাইভিং পছন্দ করেন তাদের জন্য তো অনেক মজার।
তিনি আরও বলেন, Black River Gorges National Park, La Cambuse এখানকার নীল বিচ দেখার মজাই আলাদা। Tamarind Waterfalls, পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র এখানেই রয়েছে সুগার মিউজিয়াম যা সত্যি দেখার মতো। পট লুইসের ফ্রি মার্কেট খুবই চমৎকার দেখার জন্য। Chamarel রংয়ের ছোঁয়া দেখা যায়। তবে তা অনেকটাই নির্ভর করে আকাশ কতটা পরিস্কার রয়েছে।
কখন আসবেন?
এ বিষয়ে তিনি বলেন, এপ্রিল-মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যেকোনো সময় আসা যায়। আবহাওয়া অনেক ভালো থাকে।
চলাচলের জন্য যানবাহন?
শেষে তিনি বলেন, পাবলিক বাস রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন ট্যাক্সি।
এএজেড