এবার ভারত কৃষ্ণগহ্বর পর্যবেক্ষণে মিশন পাঠাল
ছবি সংগৃহিত
নতুন বছরের প্রথম দিনে আবারও মহাকাশ মিশন পাঠিয়েছে ভারত। এবার দেশটি এক্সপোস্যাট বা এক্স-পোলারিমিটার স্যাটেলাইট নামে পাঠিয়েছে যা, মহাশূন্যে কৃষ্ণগহ্বর পর্যবেক্ষণ করবে। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীহরিকোটা উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে এই স্যাটেলাইট পাঠানো হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেলের সাহায্যে এই এক্সপোস্যাট বা এক্স-পোলারিমিটার স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো এই স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে।
কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণ বিবর মহাবিশ্বের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি বিষয়ক একটি বহুল প্রচলিত ধারণা। এই ধারণা অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের এমন একটি বস্তু যা এত ঘন সন্নিবিষ্ট বা অতি ক্ষুদ্র আয়তনে এর ভর এত বেশি যে এর মহাকর্ষীয় শক্তি কোন কিছুকেই তার ভিতর থেকে বের হতে দেয় না, এমনকি তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকেও নয়। প্রকৃতপক্ষে এই স্থানে সাধারণ মহাকর্ষীয় বলের মান এত বেশি হয়ে যায় যে এটি মহাবিশ্বের অন্য সকল বলকে অতিক্রম করে। ফলে এ থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম তৎকালীন মহাকর্ষের ধারণার ভিত্তিতে কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বের বিষয়টি উত্থাপিত হয়।
ইসরো জানিয়েছে, মূলত কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল এবং নিউট্রন তারকা পর্যবেক্ষণ করবে এই এক্সপোস্যাট বা এক্স-পোলারিমিটার স্যাটেলাইট। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারত দ্বিতীয় দেশ হিসেবে মহাশূন্যে কৃষ্ণগহ্বর পর্যবেক্ষণকারী মিশন পাঠানো দেশের গৌরব অর্জন করল।
এক্সপোস্যাট বা এক্স-পোলারিমিটার স্যাটেলাইটের দুটি অংশ—পোলিক্স বা পোলারিমিটার ইনস্ট্রুমেন্ট যা এক্স-রে পর্যবেক্ষণ করবে এবং এক্সস্পেক্ট যা এক্সের বর্ণালি ও এর সময়কাল পর্যবেক্ষণ করবে। সম্মিলিতভাবে এই দুটি অংশ নিউট্রন তারকা ও কৃষ্ণগহ্বরের কাছের বিভিন্ন বিকিরণ নিয়ে গবেষণা করবে।
ইসরো আরও জানাচ্ছে, ভারতের এই মিশনটি থমসন স্পেক্ট্রোমিটারের সাহায্যে কৃষ্ণগহ্বর বা নিউট্রন তারকা থেকে নির্গত ৮-৩০ কিলোইলেক্ট্রন ভোল্টের মধ্যে থাকা এক্স-রে বর্ণালির মেরুকরণ এবং মহাজাগতিক এক্স-রে উৎসগুলোর দীর্ঘমেয়াদি বর্ণালির বিষয়েও গবেষণা চালাবে।
ভারতের এই স্যাটেলাইট বা মিশনটি পাঠাতের খরচ হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি রুপি বা ৩০ মিলিয়ন ডলার। অথচ একই ধরনের মিশন—আইএক্সপিই—পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হয়েছিল ১৮৮ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে পাঠানো নাসার মিশনটির আয়ুষ্কাল ছিল যেখানে মাত্র ২ বছর, ভারতের দাবি—তাদের মিশনটির আয়ু হবে ৫ বছরেরও বেশি।
মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নিউট্রন তারা বা নিউট্রন স্টারেরা ভর ও আকারে সূর্যের চেয়েও বহুগুণ বড় হয়। এদের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্ল্যাকহোলদের মধ্যে অনেকেরই ভর সূর্যের ভরের চেয়ে প্রায় ২৩ গুণ বেশি।
মহাকাশের বিশালাকৃতি মহাজাগতিক বস্তুদের মধ্যে নিরন্তর সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয় তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ যা ঢেউয়ের মতো কম্পন তুলে ছড়িয়ে পড়ছে মহাশূন্যে। এই ঢেউয়ের কম্পনকেই বলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। আইনস্টাইন তার সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে এমন মহাকর্ষীয় তরঙ্গের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এবার এরই খোঁজে মহাকাশে চোখ রাখতে চলেছে ইসরো।