পূর্ণ বয়সীরা ৬৫ বছরের চেয়ে ব্রিটেনে ৭ গুণ কম টিভি দেখেন
তরুণ-তরুণীরা এখন ৬৫ বছর বয়সী ও তার চেয়ে বড়দের চেয়ে ‘সাতগুণ কম’ স্যটেলাইট টিভি দেখেন-অফকমের একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি হলো ‘দি অফিস অব কমিউনিকেশনস’। ব্রিটেনের সরকারীভাবে স্বীকৃত সম্প্রচার, টেলিফোন যোগাযোগ ও ডাক শিল্পের নিয়ন্ত্রক এবং প্রতিযোগিতা কর্তৃপক্ষ।
তাদের সাম্প্রতিক গবেষণা রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ১৬ থেকে ২৪ বছরের ছেলে, মেয়েরা প্রতিদিন গড়ে মোটে ‘৫৩ মিনিট’ সময় টিভি দেখাতে ব্যয় করেন।
এই হার গেল ১০ বছরের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে।
অন্যদিকে যাদের বয়স ৬৫ এবং তার বেশি, তারা প্রতিদিন টিভি দেখতে গড়ে ‘ছয় ঘন্টা’ ব্যয় করেন।
প্রজন্মের মধ্যে এই ব্যবধান দৃষ্টিভঙ্গিগত অভ্যাসগুলোর কারণে হয়েছে, জানিয়েছে অফকম।
আগের যেকোনো সময়ের মধ্যে তাদের পার্থক্য গড়েছে, বলেছে অফকম তাদের দেশের বছর ওয়ারি গণমাধ্যম প্রতিবেদনে।
আরোপিত এই পাথক্য টিভি দেখার ক্ষেত্রে হয়েছে।
এর কারণ হলো কিশোর-তরুণরা টিভির বদলে সময়গুলো স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোতে দিচ্ছেন ও ছোট আকারের ভিডিওগুলো দেখায় কাটাচ্ছেন।
রিপোর্টে অফকম আরো বলেছে, ব্রিটেনের প্রতি পাঁচটি বাড়ির একটিতেই সবচেয়ে বড় স্ট্রিমিং সার্ভিস-‘নেটফ্লিক্স’, ‘ডিজনি+’ ও ‘আমাজন প্রাইম’ আছে।
পুরো দেশে ৫.২ মিলিয়ন বা ৫২ লাখ বাড়িতেই এখন সার্ভিস তিনটি আছে।
ফলে আলাদাভাবে তাদের প্রত্যেকটির জন্য বছরে প্রায় ৩শ পাউন্ড করে ভাড়া দিতে হয় এক একটি বাড়ির মালিককে।
প্রতিবেদনে অবশ্য এও স্বীকার করা হয়েছে, এই খরচের ফিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিনামূল্যে ব্যবহার রয়েছে।
বাড়িগুলোতে ছেলে, মেয়েরা একে, অন্যের অ্যাকাউন্টগুলো শেয়ারও করছেন।
অফকম আরো জানতে পেরেছে, ব্রিটেনে অন্তত একটি বাড়িতে একটি স্ট্রিমিং সার্ভিস ব্যবহার হচ্ছে-এই সংখ্যা হলো ৩ লাখ ৫০ হাজার। অনেক বেড়েছে আগের চেয়ে।
প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছে, এই কারণে বাড়িগুলোর খরচের বাজেট চাপের মধ্যে পড়েছে। তাদের জীবনযাপনের খরচও বেড়েছে।
তবে এও পাওয়া গিয়েছে, যারা তাদের সার্ভিস বা সেবাগুলো বাতিল করেছেন, তিন ভাগের এক ভাগ পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় আবার সার্ভিসগুলো নেবার পরিকল্পনা করেছেন।
‘এই স্ট্রিমিং বিপ্লবের ফলে প্রজন্মের ব্যবধানে টিভি দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়েছে তরুণ ও বয়স্ক মানুষদের মধ্যে’, বলেছেন অফকমের বাজার বুদ্ধিমত্তা বিভাগের পরিচালক ইয়ান ম্যাকক্রেই।
তিনি আরো বলেছেন, ‘ঐতিহ্যবাহী সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছ থেকে পাওয়া প্রবল প্রতিযোগিতার মোকাবেলা করছে। সেগুলো তারা আংশিকভাবে মোকাবেলা করছেন, তাদের জনপ্রিয় প্লেয়ার অ্যাপসগুলোর মাধ্যমে। যদিও সম্প্রচার টিভিগুলো এখনো বড় আয়োজনগুলোর জায়গা, যেগুলো পুরো জাতিকে একসঙ্গে করে। যেমন ইউরো ফাইনাল বা জুবলি উদযাপন।’
২০২১ সালে অফকম খুঁজে পেয়েছে পর্দার সময়-দিনের গড় সময়টিই পূর্ণ বয়স্ক মানে ১৬ থেকে ২৪ বছরের মানুষ সব ধরণের প্রাযুক্তিক ডিভাইসগুলোতে ‘ভিডিও কনটেন্ট’ দেখে ব্যয় করেন। তাদের সময়টি হলো প্রতিদিন ৫ ঘন্টা ৪০ মিনিট। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের কর্ম ঘন্টার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ এভাবে বিনোদনে ব্যয় হয়।
সাম্প্রতিক গবেষণা জরিপে এই সময় সীমা আরো ২৫ মিনিট বেড়েছে তারা জানিয়েছেন।
এই বয়সের মানুষরা এখন গড়ে তাদের পর্দায় কোনোকিছু দেখার সময়ের ৫৯ শতাংশই ক্যাচ-আপ টিভিতে লাইভ দেখায় ব্যয় করেন। ক্যাচ আপ টিভি হলো কম্পিউটার, ফোন ইত্যাদি।
এছাড়াও গ্রেট ব্রিটেনের তিন ভাগের এক ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ছোট আকারের ভিডিও দেখেন বা ১০ মিনিটের কম সময়ে তৈরি ভিডিওগুলোতে সময় কাটান।
১৮ থেকে ২৪ বছরের ৬৫ ভাগ প্রতিদিন এই সার্ভিসগুলোতে সময় দেন।
এই হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে আরো কম বয়সীদের মধ্যে। ১৫ থেকে ১৭ বছরের ছেলে, মেয়েদের ৯৩ ভাগ প্রতিদিন ইউটিউব থেকে ছোট আকারের ভিডিও দেখেন। এই ছেলে, মেয়েদের ৯০ শতাংশ ইনস্ট্রাগ্রামে নানা কিছু দেখেন, ৭৩ শতাংশ টিকটকেও সময় কাটান।
প্রতিবেদনটি অনলাইনে মানুষের দেখা ছোট আকারের ভিডিওগুলোর ধরণের দিকেও নজর দিয়েছে।
তারা জানতে পেরেছেন, ‘হাউ টু’ বা ‘কিভাবে’, ‘রেসিপি’ ও ‘কোনোকিছু তৈরি’র
ভিডিওগুলো সবচেয়ে বেশি দর্শক টেনেছে।
৫৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা অনলাইনে ছোট আকারের ভিডিও খবরগুলোতে ব্যস্ত থেকেছেন।
৩২ শতাংশ জানিয়েছেন তারা ভিডিও গেমস ও এই ধরণের ভিডিওগুলো দেখেছেন।
পূর্ণবয়স্কদের অর্ধেকের সামান্য বেশি জানিয়েছেন, তারা অনলাইনে পরিবার ও বন্ধুদের পোস্ট করা ভিডিওগুলো দেখেছেন।
ওএফএস।