নতুন ফাইভ জি প্রসেসর দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টায় এইচটিসি
এইচটিসি, একসময়ের বিশ্ব কাঁপানো স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। গুণে ও মাণে যার খ্যাতি ছিল বিশ্ব জোড়া। খোদ বাংলাদেশেই এই ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন একসময় ছিল চাহিদার শীর্ষে। কিন্তু সুখ যেমন ক্ষণস্থায়ী ঠিক তেমনি একসময় বহুজাতিক ব্র্যান্ডগুলোর ভিড়ে হারিয়ে যায় এই কোম্পানির স্মার্টফোন। মূলত চীন-তাইওয়ান দ্বন্দ্ব আর বাজারজাতকরণের কৌশলে দুর্বলতা এর মূল কারন।
এইচটিসি মূলত ছিল তাইওয়ান ভিত্তিক ডিভাইসের নকশাকারী ও ল্যাপটপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। তাইওয়ানের জিনডিয়ান জেলার নিউ তাইপেই শহরে ১৯৯৭ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। কেবল ল্যাপটপই নয় নোটবুক কম্পিউটার, পামটপ কম্পিউটার, মাইক্রোসফট এর উইন্ডোজ মোবাইল এবং বিশ্বের প্রথম টাচ ও ওয়্যারলেস বেশ কিছু ডিভাইসও এসেছে এইচটিসির হাত ধরে। এমনকি বিশ্বের প্রথম অ্যান্ড্রোয়েড স্মার্টফোনটিও ছিল এইচটিসির। ২০০৮ সালে এইচটিসি ড্রিম নামে স্মার্টফোনটি বাজারে আসে।
২০১১ সালে বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসে এইচটিসিকে বছরের সেরা ডিভাইস প্রস্তুতকারীর খেতাবে ভূষিত করে জিএসএম অ্যাসোসিয়েশন। সেই বছরে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই এইচটিসির মার্কেট শেয়ার ছিল ২৪ শতাংশ, যেখানে স্যামসাংয়ের ছিল ২১ শতাংশ, অ্যাপলের ২০ শতাংশ এবং হারিয়ে যাওয়া আরেক স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ব্ল্যাকবেরির ৯ শতাংশ। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পরের বছরেই অর্থাৎ ২০১২ সালে স্যামসাং এবং অ্যাপলের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এইচটিসি। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মার্কেট শেয়ার নেমে আসে মাত্র ৯ দশমিক ৩ শতাংশে অর্থাৎ দুই বছরে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ মার্কেট শেয়ার কমে যায়।
এই অবস্থায় কোম্পানির সিইও পিটার চু ঘোষণা করেন যে তাদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোন এইচটিসি ওয়ান যদি বিক্রয় বাড়াতে অক্ষম হয় তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে তা আর করতে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এইচটিসি ওয়ান ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এবং প্রচুর পরিমাণে বিক্রয়ও হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে খুব একটা ব্যবসা সফল হতে পারেনি এইচটিসি।
ব্যবসায়িক মন্দার ভিতরে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গুগল ঘোষণা করে যে এইচটিসিতে কর্মরত চার হাজার কর্মীর প্রায় অর্ধেক তারা নিয়ে নিবে। এর পাশাপাশি এইচটিসির বেশ কিছু মেধাস্বত্বও কিনে নেয় গুগল। তারপর থেকে দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ে এইচটিসি। যদিও বাজারে এইচটিসি এখনও টিকে আছে কিন্তু আগের মত আর প্রতিযোগিতার দৌড়ে দাঁড়াতে পারেনি।
গেল বছরগুলোতে বাজারে বেশ কয়েকটি স্মার্টফোন ছাড়লেও সেগুলো খুব একটা সাড়া ফেলেনি। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ এইচটিসি। তাইতো সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে ভোক্তার চাহিদা মাথায় রেখে এবং বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ২৮ জুন তারা লঞ্চ করলো এইচটিসি ডিজায়ার টুয়েন্টি টু প্রো।
স্মার্টফোনটিতে প্রসেসর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগনের ছয় মিলিমিটার প্ল্যাটফরমের '৬৯৫' চিপসেট। আট কোরের এই প্রসেসরটি ২.২ গিগাহার্জ পর্যন্ত স্পিড আপ করতে সক্ষম। সহায়ক হিসাবে থাকছে ৮ গিগাবাইট র্যাম। গ্রাফিক্স কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাড্রিনো ৬১৯। আরও থাকছে ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজ সুবিধা। ফোনটি চলবে অ্যান্ড্রোয়েড টুয়েলভ অপারেটিং সিস্টেমে। তবে ইউজার ইন্টারফেস সম্পর্কে জানা যায়নি।
ফোনটিতে ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হয়েছে ৬.৬ ইঞ্চির আইপিএস মনিটর যা ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে অপারেট করা যাবে। ডিসপ্লের রেজুলেশন ১০৮০বাই২৪১২ (ফুল এইচডি)। ডিসপ্লের সুরক্ষায় স্ক্রিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস তবে তার গ্রেড সম্পর্কে জানায়নি এইচটিসি।
ফোনটির পিছনের ক্যামেরা প্যানেলে ৩টি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। প্রাইমারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৮ অ্যাপারচারের ৬৪ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ওয়াইড। সেকেন্ডারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.৪ অ্যাপারচারের ১৩ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ১১৮ ডিগ্রি আল্ট্রা ওয়াইড। তৃতীয় ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ২.৪ অ্যাপারচারের ৫ মেগাপিক্সেল ডেপথ সেন্সর। ভিডিও ধারণ করা যাবে ফুল এইচডি ফরম্যাটে। সেলফি ক্যামেরা হিসাবে থাকছে ২ অ্যাপারচারের ৩২ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর।
ফোনটি আইপি ৬৭ স্প্ল্যাশ প্রুফ। ফোনটি সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪৫২০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলি ব্যাটারি যা ১৮ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং ও ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্টেড। ক্যাবল-টাইপ সি। সাউন্ড সিস্টেম হিসাবে থাকছে স্টেরিও স্পিকার এবং থাকছেনা কোনো হেডফোন জ্যাক। আলাদা মেমোরি কার্ডের জন্য থাকছে হাইব্রিড স্লট। ফোনের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হয়েছে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর ইনভার্টেড অন পাওয়ার বাটন। ফোনটি পাওয়া যাবে সোনালি ও কালো দুটো রঙে। ফোনটির ওজন ২০৬ গ্রাম।
এইচটিসি জানিয়েছে আগামী জুলাই মাস থেকে স্মার্টফোনটি বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে। বর্তমানে ফোনটির প্রি বুক অর্ডার চলছে। ফোনটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬০ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার দাম দাঁড়ায় প্রায় ৪৬ হাজার টাকা।
এখন দেখার বিষয় ফোনটি বিশ্ববাজারে কতটা ব্যবসাসফল হয় নাকি ফের মুখ থুবড়ে পড়ে এইচটিসি।
/এএস