নতুন ফাইভ জি ফোন আনছে পিছিয়ে পড়া নোকিয়া
অ্যান্ড্রোয়েড স্মার্টফোন জগতে নোকিয়া যেন এক কালো অধ্যায়। এক সময় পৃথিবী কাঁপানো এই স্মার্টফোন কোম্পানি আজ যেন কোনোভাবেই বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এর কারন হিসাবে প্রযুক্তি বাজার বিশেষজ্ঞরা নোকিয়ার অদূরদর্শীতা ও অপরিণামদর্শীতা কে দায়ী করছেন।
তবে যাই হোক দেরিতে হলেও নোকিয়া তাদের ভুল বুঝতে পেরেছিল এবং বাজারে টিকে থাকতে অ্যান্ড্রোয়েডের ছায়াতলে নিজেদের দাঁড় করিয়েছিল। ২০১৪ সালে এক্স এবং এক্সএল এ দুটো স্মার্টফোনের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে অ্যান্ড্রোয়েড জগতে প্রবেশ করে নোকিয়া। তবে সম্পূর্ণভাবে বাজারে নামে ২০১৭ সালে নোকিয়া সিক্স স্মার্টফোনটির মাধ্যমে। সেই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রায় ৬৫ টির বেশি মডেলের স্মার্টফোন বাজারে ছেড়েছে নোকিয়া। কিন্তু তাদের কোনো স্মার্টফোনই অন্য কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে পারছেনা এবং বাজারে খুব একটা সাড়াও ফেলছে না। যার কারনে নোকিয়া এখনও প্রযুক্তি বাজারকে ব্যবসা সফল কোনো স্মার্টফোন উপহার দিতে পারেনি।
এজন্যও অবশ্য নোকিয়াকে দুষছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অ্যান্ড্রোয়েড জগতে প্রবেশ করলেও বাজারের সাথে তাল মিলাতে পারছে না নোকিয়া। হয়তো নোকিয়া বাজার নিয়ে গবেষণা করছে না অথবা নোকিয়ার প্রযুক্তি সম্পর্কিত সীমাবদ্ধতা রয়েছে যেটার মানোন্নয়ন নিয়ে তারা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমনকি হতে পারে ভোক্তাদের চাহিদারও মূল্যায়ন করছে না নোকিয়া।
তবে আপাত দৃষ্টিতে নোকিয়ার কার্যক্রম দেখে যা মনে হচ্ছে তাতে বলা যায়, স্মার্টফোন বাজারে প্রতিযোগিতা ও সিস্টেমের মানোন্নয়নের চেয়ে ডিভাইসের সংখ্যা বাড়ানোতেই নোকিয়া বেশি আগ্রহী। তাইতো একের পর এক নতুন নতুন ল্যাপটপ, টিভি, স্মার্টফোন, ফিচার ফোন, স্ট্রিমিং ডিভাইস, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, হেডফোন, রোবট প্রভৃতি বাজারে ছেড়েই চলছে নোকিয়া।
এসকল তর্ক বিতর্কের মাঝেই নতুন স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে নোকিয়ার বৈশ্বিক বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবাল। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো ঘোষণা না দিলেও ইতোমধ্যেই বিভিন্ন টেক লিক থেকে জানা গেছে স্মার্টফোনটির ব্র্যান্ডিং নাম হবে নোকিয়া স্টাইল প্লাস ফাইভ জি। ধারণা করা হচ্ছে নোকিয়ার পূর্ব ঘোষিত লাইন আপে থাকা জি ৪০০ মডেলটিই এই নামে ব্র্যান্ডিং করা হবে। আবার চীনে লঞ্চ হওয়া প্রাথমিক মডেলটির এক নাম আর বিশ্ব বাজারে লঞ্চ হওয়া ফোনটির ভিন্ন নাম হতে পারে। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এটি খুবই সাধারণ চর্চা। স্মার্টফোনটি ইতোমধ্যেই চীনের কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন (সিকিউসি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি) কর্তৃক ছাড়পত্রও পেয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কনজিউমার টেকনলজি অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সিইএস সম্মেলনে নোকিয়ার ঘোষণা অনুযায়ী জি ৪০০ স্মার্টফোনটিতে প্রসেসর হিসাবে ব্যবহার করা হবে স্ন্যাপড্রাগন ৪৮০ চিপসেট। ৮ ন্যানোমিটার প্ল্যাটফরমের ফাইভ জি এই প্রসেসরটির সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা ২ গিগাহার্জ। সহায়ক হিসাবে থাকবে ৬ গিগাবাইট র্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ সুবিধা। ফোনটি চলবে অ্যান্ড্রোয়েড টুয়েলভ অপারেটিং সিস্টেমে তবে ইউজার ইন্টারফেস বা ইউআই সম্পর্কে জানা যায়নি।
ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হবে ৬.৬ ইঞ্চির এলসিডি মনিটর যা ৯০ বা ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে অপারেট করা যাবে। ডিসপ্লের রেজুলেশন ১০৮০বাই২৪০০ (ফুল এইচডি)। ডিসপ্লের সুরক্ষা স্ক্রিন সম্পর্কে জানা যায়নি।
স্মার্টফোনটির পিছনের ক্যামেরা প্যানেলে ৩টি ক্যামেরা দেওয়া হবে। প্রাইমারি ক্যামেরা হিসাবে থাকবে ৪৮ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সরের ওয়াইড লেন্স। সেকেন্ডারি ক্যামেরা হিসাবে থাকবে ৫ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সরের আল্ট্রাওয়াইড লেন্স এবং তৃতীয় ক্যামেরা হিসাবে থাকবে ২ মেগাপিক্সেল ডেপথ সেন্সর বা ম্যাক্রো লেন্স। আর সেলফি ক্যামেরা হিসাবে থাকবে ১৬ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর।
ফোনটি সচল রাখতে ব্যবহার করা হবে ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলি ব্যাটারি। যা ২০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড। ফোনের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হবে পাওয়ার বাটনে ইনভার্ট করা ফিঙ্গারপ্রিন্ট। এর বাইরে স্পেসিফিকেশন সম্পর্কিত আর কোনো তথ্য জানা যায়নি।
তবে বাজারে আসার আগেই স্মার্টফোনটি প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের সমালোচনার মুখে পড়েছে, এবং সেটি দামের কারণে। যদিও নোকিয়া চূড়ান্তভাবে কিছুই জানায়নি। কিন্তু সেই সিইএস সম্মেলনে নোকিয়া জানিয়েছিল স্মার্টফোনটির আনুমানিক দাম হতে পারে ২৪০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য দাঁড়াবে ২২ হাজার ৩০০ টাকা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্যাটাগরির একটা স্মার্টফোনের জন্য ২৪০ ডলার খরচ করা ঠিক কতটা যুক্তিসম্মত এবং নোকিয়া আসলে বাজারের সাথে তাল মেলানোর জন্য কতটা গবেষণা করে মাঠে নামছে সেটাই দেখার বিষয়। সেটা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে স্মার্টফোনটির পূর্ণ বিস্তারিত ঘোষণা আসা পর্যন্ত।
/এএস