বিটিআরসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাবে ৩৭ লাখ টাকা উৎসাহ ভাতা
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সফলতা এবং অন্যান্য প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আর্থিক সুবিধা হিসেবে উৎসাহ ভাতা বা প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই টাকার পরিমাণ ৩৭ লাখ টাকার কিছু বেশি।
২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বিটিআরসি প্রশাসনিক জরিমানা বাবদ আদায় করেছে ৩৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯ হাজার ১১৬ টাকা। এই অর্থের ওপর বিটিআরসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য হয়েছে ৩৭ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৬ টাকা। ওই সময়ের মধ্যে বিটিআরসি কর্মীদের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়মিতকরণসহ বিগত সময়ের প্রাপ্য উৎসাহ ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) এ বিষয়ে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, অনুমোদনের বিষয়টিতে এখনও কোনো ফাইনাল সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের একটি পত্রে (৪/৩/২০১০) বলা হয়, বিটিআরসির আদায়কৃত জরিমানা কমিশনের কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা বিভিন্ন হারে প্রাপ্য হবেন। সেখানে উল্লেখ আছে- বিটিআরসি আদায়কৃত জরিমানা ৫০ লাখ টাকা বা তার নিচে হলে প্রাপ্য পুরস্কারের পরিমাণ হবে আদায়কৃত জরিমানার ৫ শতাংশ, ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে হলে পুরস্কারের পরিমাণ হবে ২৫ হাজার টাকা এবং এর সঙ্গে জরিমানার ২ দশমিক ৫ শতাংশ। আদায়কৃত জরিমানা ১ কোটি টাকার বেশি হলে জরিমানার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার টাকা এবং আদায়কৃত জরিমানার ০ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রশাসনিক জরিমানার ওপরে বিটিআরসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রণোদনা পুরস্কার দেওয়া হলেও ২০১০-১১ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত আদায়কৃত জরিমানার ওপর কোনো ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।
বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে বলা হয়, ‘আদায়কৃত জরিমানা থেকে প্রাপ্য প্রণোদনা ভাতা নিয়মিতভাবে দেওয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ২০১০-১১ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত আদায়কৃত প্রশাসনিক জরিমানার ওপরে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হলো এবং সুবিধাজনক সময়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো’।
২১ বছরে বিটিআরসির আয়
২০০১-০২ অর্থবছরে বিটিআরসির রাজস্ব আদায় ৩ কোটি ৪৫ লাখ, ২০০২-০৩ অর্থবছরে ১২০ কোটির কিছু বেশি, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে আয় ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে আয় ৩৫৭ কোটি ১৪ লাখ, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আয় ৭৩৫ কোটি ৭০ লাখ, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে আয় ৫৬৫ কোটি ৬১ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে আয় ১ হাজার ৬৭৭ কোটি ৮৫ লাখ, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আয় ৩ হাজার ১৯৫ কোটি ৩৮ লাখ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে আয় ২ হাজার ৩৭০ কোটি ৯৮ লাখ, ২০১০-১১ অর্থবছরে আয় ৩ হাজার ৪৭ কোটি ২৮ লাখ, ২০১১-১২ অর্থবছরে আয় ৬ হাজার ৯৫৭ কোটি ৭০ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে আয় ৫ হাজার ৪০৪ কোটি ৬৯ লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আয় ১০ হাজার ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয় ৪ হাজার ২১৯ কোটি ১৯ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় ৪ হাজার ২০৭ কোটি ৯৪ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় ৪ হাজার ৬৬ কোটি ৪৮ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় ৬ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয় ৩ হাজার ৫৮ কোটি ৮৮ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় ৪ হাজার ৭১৯ কোটি ৮২ লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে আয় করেছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকার কিছু বেশি। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিটিআরসি প্রায় ৬৫ হাজার ১৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আয় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
এ ছাড়া সদ্য সমাপ্ত (গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত) তরঙ্গ নিলামে ২.৩ এবং ২.৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ (স্পেক্ট্রাম) বিক্রি করে বিটিআরসি আয় করেছে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা (এরসঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত হবে)। যদিও এই টাকা একবারে পাবে না নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। আগামী ১০ বছরে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর কাছ থেকে কিস্তিতে এই টাকা আদায় করবে প্রতিষ্ঠানটি। এই টাকা যোগ করলে বিটিআরসির মোট আয় আরও বেশি হবে।
টিটি/