দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাকিবের ‘না’ !
নতুন করে সংশয় দেখা দেয়েছে সাকিব আল হাসানের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে। তিনি এখন ক্রিকেট খেলার মত পরিস্থিতি নেই বলে আপাতত ক্রিকেট থেকে দূরে সরে থাকতে চাচ্ছেন। যার অর্থ দাঁড়ায় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চাচ্ছেন না।
রবিবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় মোহামেডানের স্পোর্টিং ক্লাবের নতুন জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাকিব। সেখানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে কিছু বলেননি। মোহামেডান ক্লাবের অনুষ্ঠান শেষ করে রাতে তিনি ব্যক্তিগত কাজে দুবাই রওয়াান হন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে বলতে হয়, আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে যে অবস্থায় আছি, মনে হয় না আমার পক্ষে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব। এ কারণেই আমার মনে হয়, আমি যদি একটা বিরতি পাই, যদি ওই আগ্রহটা ফিরে পাই, তাহলে আমার জন্য খেলাটা সহজ হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই দলেই সাকিব রেখে নির্বাচকরা দল ঘোষণা করেন। সাকিবকে টেস্ট দলে রাখা হয়েছিল আইপিএলে কোনো দল না পাওয়াতে। আইপিএলে দল পাবেন-এই আত্মবিশ্বাস থেকেই তিনি আগে থেকেই বিসিবির সঙ্গে আলাপ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শুধু ওয়ানডে খেলবেন বলে জানান। বিসিবিও তা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু আইপিএলে দল না পাওয়াতে আবার তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলার বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ নিয়ে সাকিব প্রকাশ্যে কখনোই কিছু বলেননি। কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষে সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলবেন বলে নিশ্চিত করে জানান। কিন্তু আজ তার কথায় সব উল্টো হয়ে গেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে না যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে সাকিব আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজের প্রসঙ্গটিও টেসে আনেন। যেখানে তিনি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। ওয়ানডেতে রান করেছিলেন ১০, ২০, ৩০। টি-টোয়েন্টির দুই ম্যাচ রান ছিল ৫ ও ৯। বল হাতে দু্ সিরিজে উিইকেট পেয়েছিলেন ৭টি। এই সিরিজ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান সিরিজে আমার মনে হয়েছে আমি একজন “প্যাসেঞ্জার।” যেটা কখনোই থাকতে চাই না। খেলাটা একদমই উপভোগ করতে পারিনি, পুরো সিরিজটাই—টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে। চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি।’ তাই সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এমন মানসিকতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলাটা ঠিক হবে। আমি এই কথা জালাল ভাইয়ের (বিসিবির ক্রিকেট অপরেশনস কমিটির চেয়ারম্যান) সঙ্গেও আলাপ করেছি। জালাল ভাই বলেছেন দুই দিন উনিও চিন্তা করবেন। আমাকেও চিন্তা করার সময় দিয়েছেন। এরপরই আসলে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, ‘তখন (সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত) পর্যন্ত যদি আমার মন-মানসিকতা এমন থাকে, শারীরিক অবস্থাও এমন থাকে, তাহলে এটা (দক্ষিণ আফ্রিকা সফর) দলের জন্যই ক্ষতি হবে। যেটা আগেও বললাম, আমার নিজের প্রতি নিজের যে প্রত্যাশা, মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটা যদি আমি পূরণ করতে না পারি, তাহলে দলে থাকাটা খুবই দুঃখজনক হবে। এটা সতীর্থদের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো হবে।’
এভাবে খেলাটাকে সাকিব গাদ্দারি বলেও মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‘দলের সঙ্গে প্রতারণা—এই জিনিসটা আমি অবশ্যই চাই না। আমি চাই নিজের প্রতি নিজের যে প্রত্যাশা, দল আমাকে যেভাবে চিন্তা করে, সেভাবে যেন পারফর্ম করতে পারি, সেই অবস্থাতে থাকা। হ্যাঁ, এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, আমি পারফর্ম করব। তবে অন্তত জানতে পারব যে আমি আমার সেরা অবস্থানে আছি—দেশের হয়ে পারফর্ম করার মতো অবস্থানে আছি। কিন্তু আমি যদি জানি যে আমি সেই অবস্থায় নেই, তাহলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই। অন্য একটা জায়গা নষ্ট করা। দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে গাদ্দারি করা ঠিক হবে বলে মনে করি না।’
সাকিব আবার একেবারে না খেলার কথাও উড়িয়ে দেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যে কোন একটি তার খেলা হতে পারে বলেও জানান। সে ক্ষেত্রে তিনি টেস্ট খেলার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি পাপন ভাইয়ের (নাজমুল হাসান পাপন) সঙ্গে কথা বলেছি। খেলব বলে রাজিও হয়েছি। কিন্তু এখন আমি যে মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় আছ, তাতে এমন হতে পারে যে ওয়ানডেটা না খেলে টেস্ট সিরিজটা খেলতে পারি। তাহলে হয়তো ভালো মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় থাকতে পারব। সেটা হতে পারে। এগুলো আসলে আলোচনার ওপর নির্ভর করবে।’
এমপি/এএস