ভোর রাতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অভিষেক হচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েদের
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর রাত ৪টায় নিউ জিল্যান্ডের ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভাল মাঠে মেয়েদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পথ চলা শুরু হবে বাংলাদেশের মেয়েদের। প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা উঠেছে শুক্রবার। যেখানে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে স্বাগতিকদের মাত্র ৩ রানে হারিয়েছে উইন্ডিজ।
ছেলেদের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। ২২ বছর পর মেয়েদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বাদশ আসরে গিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের মঞ্চায়ন করার সুযোগ পেয়েছে। এই পর্যায়ে আসতে তাদের পাড়ি দিতে হয়েছে বাছাইপর্ব। এর আগে তারা বাছাইপর্বের গণ্ডি পার হতে পারত না।
দক্ষিণ আফ্রিকার পথ চলা শুরু ১৯৯৭ সালে ষষ্ট আসর থেকে। এরপর থেকে তারা প্রতিবারই খেলেছে। কিন্তু কখনই জিততে পারেনি শিরোপা। আর জিতবেই কি করে? অস্ট্রেলিয়া একাই জিতেছে ৬ বার। ইংল্যান্ড জিতেছে ৪ বার। ১ বার জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ২০০০ ও ২০১৭ সালে দুইবার সেমিফাইনাল খেলা। এবার অস্ট্রেলিয়ার পরই তারা শিরোপা জোর দাবিদার।
বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচে ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকাই। দুই দেশের মুখোমুখি দেখলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের পাল্লা অনেক ভারী। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত মোট একদিনের ম্যাচ খেলেছে ৪২টি। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই খেলেছে সবচেয়ে বেশি ১৭টি। দক্ষিণ আফ্রিকার ১৫ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় মাত্র দুইটিতে। দুইটিই নিজেদের মাটিতে। আবার সর্বশেষ ৫ ম্যাচে তারা হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। তবে এই পরিসংখ্যানে চোখ বুলাতে রাজি না বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। তিনি চান বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে অভিষেকটা রাঙিয়ে তুলতে।
নিগার সুলতানা বলেন, ‘আমাদের সবার জন্যই প্রথম ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্র্ণ। টুর্নামেন্টে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব সেটা অনেকটা বোঝা যাবে এই ম্যাচে। আমরা জয়ের জন্যই নামব। আমাদের জন্য এটা সুযোগ, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমরা ভালোভাবে জানি। তাই জয় দিয়ে শুরু করার ভালো একটি সম্ভাবনা আমাদের মনে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি খেলাটাকে নিগার সুলতানা প্রতিপক্ষকে ভালোবাবে চেনার একটা সুযোগ হিসেবেও দেখছেন। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমরা অনেক খেলেছি। তাই তাদের শক্তি সম্পর্কে আমাদের জানা আছে। ওদের পেসারদেরও আমরা খেলেছি। তাই কিছু ধারণা আছে। কিছু হোমওয়ার্ক অবশ্যই করেছি আমরা। পরিকল্পনাগুলো আমরা ম্যাচে বাস্তবায়ন করতে চাই।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ ৫ ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও নিজেদের খেলা সর্বশেষ ৫ ম্যাচের ৪টিতেই তারা জিতেছে। জিম্বাবুয়েকে দুইবার এবং পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোর পর দুর্বল থাইল্যান্ডের কাছে বৃষ্টি আইনে হেরে গিয়েছিল।
নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশের মেয়েরা প্রায় এক মাসে আগেই পাড়ি জমিয়েছেন। নিজেদের মানিয়ে নেয়ার পাশাপাশি খেলেছেন দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচ। একটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে হেরে যায় বাংলাদেশ। এই দুইটি ম্যাচ থেকে নিগার সুলতানা ইতিবাচক অনেক কিছু পেয়েছেন। এই ইতিবাচক দিকগুলোকে তিনি এবার মূল আসরে কাজে লাগাতে চান। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, গা গরমের ম্যাচে আমাদের প্রস্তুতি ভালোই হয়েছে। হয়তো ফল আমাদের পক্ষে আসেনি। তবে ইতিবাচক অনেক কিছুই আমরা পেয়েছি। প্রস্তুতি ম্যাচের প্রাপ্তিগুলোকে মূল আসরে আমরা কাজে লাগাতে চাই।’
প্রস্তুতি ম্যাচে জয় না পাওয়াকেও তিনি দেখছেন ইতিবাচক হিসেবে। নিগার সুলতানা বলেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ দুটি জিতলে হয়তো ঘাটতিগুলো আমাদের চোখে পড়ত না। সেদিক থেকে আমি খুশিই। জিতলে অনেক ভুল আড়াল হয়ে যায়। ঘাটতিগুলো ঢাকা পড়ে যায়। এখন আমরা ঘাটতিগুলো নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের দলের জন্য অনেক ভালো হয়েছে এটা।’
এবারের আসর হবে লিগ পদ্ধতিতে। ৮ দলের সবাই সবার বিপক্ষে খেলবে। এরপর সেরা দল খেলবে সেমিফাইনাল। তারপর ফাইনাল। নিগার সুলতানা এগুতে চান ম্যাচ বাই ম্যাচ। তিনি বলেন,
‘আমরা প্রতিটি ম্যাচ ধরে এগোতে চাই। আমাদের প্রথম বিশ্বকাপ আমরা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। আমরা সবাই জানি, শুরুটা ভালো করা জরুরি। তাহলে টুর্নামেন্টের বাকি সময়ের জন্য আরো সাহস ও আত্মবিশ্বাস পাব আমরা। মেয়েদেরকে আমি সেই বিশ্বাসই দেওয়ার চেষ্টা করছি যে আমরা প্রতিপক্ষের নাম দেখব না। দক্ষিণ আফ্রিকা হোক বা যে কোনো দল, আমরা নিজেদের শক্তির জায়গা দেখাব, দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি সেই প্রমাণ দিব।
এমপি/এসআইএইচ