স্পিনার ও স্থানীয় কোচদের কৃতিত্ব দিলেন হেরাথ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছে না। বিশ্বকাপে চরম ভরাডুবির পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে যায় যায় রব উঠেছিল। সেই ধ্বনিতে আরও জোয়ার তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে।
এরপর ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ। এখানে আবার আফগানিস্তানই ফেভারিট। সিরিজ শুরুর আগে দুই দল ছয়বার খেলেছিল। জয়ের পাল্লা ভারী ছিল আফগানিস্তানেরই, চারবার। বাংলাদেশের জয় দুইবার। তাই বাংলাদেশের ফেভারিট তকমা ছিল না। আফগানিস্তানের জয়ের পক্ষে বাজি ধরার লোকই ছিল বেশি। এর কারণ ছিল আফগানদের স্পিনত্রয়ী রশিদ-মুজিব-নবী। যে কারণে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ যেমন স্পিন উইকেটে না গিয়ে স্পোর্টিং উইকেটের দিকে গিয়েছিল, টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হেঁটেছে একই পথে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে পাত্তাই দেয়নি। ৬১ রানের বড় ব্যবধানেই হারিয়েছে। আর এ রকম বড় জয়ের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন স্পিনাররাই। দুই বাঁহাতি নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসান। এরাই তুলে নেন প্রথম ছয় উইকেট। বাকি চার উইকেটও তুলে নেন দুই বাঁহাতি পেসার শরিফুল ও মোস্তাাফিজ। চার বাঁহাতির খেলায় আফগানরা কুপোকাত হলেও আসল কাজটা করে দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদই। ৪ ওভারের ওপেনিং স্পেলে মাত্র ১০ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন ৪ উইকেট। নাসুমের এই ধাক্কাতে পরে আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা।
বাংলাদেশের স্পিনাররা এমন সাফল্য দেখালেও আফগান স্পিনত্রয়ীর চেয়ে তারা শক্তিশালী নন। তারপরও তারা সফল। আর তাদের এই সাফল্যের নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছেন লঙ্কান গ্রেট রঙ্গণা হেরাথ। কিন্তু হেরাথ এখানে নিজে কোনো কৃতিত্ব নিতে চান। সব কৃতিত্ব দিতে চান তার শিষ্যদের। আজ মিরপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘টেকনিক্যাল কিছু নেই, পুরোটাই কৌশল। আপনার চিন্তাধারা পজেটিভ হবে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আমি সবসময় মাইন্ডসেটের ব্যাপারটা প্রাধান্য দেই। কন্ডিশন পক্ষে থাকুক বা নাই থাকুক, আপনাকে কন্ডিশনের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। টার্নিং হোক বা টার্নিং না হোক, বোলারের ভূমিকা বোঝা লাগবে। তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে পরিস্কারভাবে জানে। এজন্যই আসলে তারা ভালো করেছে।’
ভালো করার জোর আকাঙ্ক্ষা থাকলে যে কোনো কন্ডিশইেন ভালো করা সম্ভব বলে হেরাথ জানান। তিনি বলেন, ‘আপনি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ড যেখানেই খেলুন না কেন, সবচেয়ে বেশিগুরুত্বপূর্ণ মাইন্ডসেট। দেশের হয়ে খেলার সময় নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে। এটা বোঝা খুবই জরুরি। আমি দেশের হয়ে অনেক বছর খেলেছি। আমি বিশ্বাস করি, যখন আপনি সুযোগ পাচ্ছেন, তখন দেশকে কিছু দিতেই হবে। ছেলেরা ভালো করছে, তাদের মানসিক অবস্থা ভালো।’
ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে নাসুমকে ২ ওভারে ১২ রান দেওয়ার যে পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল, তা নাসুমকে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে হেরাথ বলেন, ‘নাসুম ছাড়া আর কে আছে এখন? কোচ হিসেবে আমাদের একটি পরিস্থিতি তৈরি করে নিতে হয়। অনুশীলনে সেই পরিস্থিতি থাকে না, কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হল সেই পরিস্থিতি তৈরি করে দেখানো। আমি সেই চেষ্টাই করেছি নাসুমকে দিয়ে।’
স্পিনারদের এমন সাফল্যে হেরাথ স্থানীয় কোচদেরও ভূমিকা আছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘কৃতিত্ব দিতে হবে স্থানীয় যেসব কোচ আছেন তাদের, যাদের সঙ্গে ক্রিকেটাররা কাজ করেন। এসব কোচরাই ফাউন্ডেশনের অনেক কাজ করে থাকেন। অবশ্যই তারা অনেক বড় ভূমিকা রেখেছেন।’
উল্লেখ্য, নাসুমদের নিয়ে দেশি স্পিন বোলিং কোচ সোহেল ইসলাম কাজ করে থাকেন। হেরাথের ইঙ্গিত ছিল তার দিকেই।
প্রথম ম্যাচ জিতলেও দুই ম্যাচের সিরিজ হওয়াতে আগামীকাল অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ম্যাচও বাংলাদেশকে জিততে হবে। তাহলে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি আফগানদের প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশও করা হবে। তাই কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষ নয়, মূল শক্তি নিয়েই বাংলাদেশ মাঠে নামবে বলে জানান হেরাথ। তিনি বলেন, ‘এটা দুই ম্যাচের সিরিজ। সিরিজ জিততে হলে আমাদের অবশ্যই পরের ম্যাচ জিততে হবে। মনে হয়না কাউকে আমরা বিশ্রাম দিচ্ছি। সেরা একাদশ নিয়েই মাঠে নামব।’
এমপি/আরএ