বাংলাদেশের সামনে ‘ভয়ংকর’ আফগানিস্তান
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সামনে আফগানিস্তান যেন এক বিভীষিকার নাম। মোটেই পেরে উঠে না। মুখোমুখি সাক্ষাতে মনে হবে আফগানিস্তানের সামনে বাংলাদেশ নবীন এক শিশু। কিন্তু বাস্তবে আফগানিস্তানই নবীন। কারণ তারা টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে মাত্রই ২০১৭ সালে, সেখানে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তি সেই ২০০০ সালে। কালের বিবর্তনে বাংলাদেশ সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি, যতোটা পেরেছে আফগানরা। গোল-বারুদের শব্দে ঘুম ভাঙা দেশটি বাংলাদেশের বিপক্ষে একটিমাত্র তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। এরপর আজ আবার শুরু হবে দুই ম্যাচের সিরিজ। বাংলাদেশের সামনে বদলা নেওয়ার পালা। সিরিজ জেতা ও হোয়াইটওয়াশ দুইটিই। এর অন্যতা হলে সিরিজ ড্র কিংবা উল্টো আবার বাংলাদেশ নিজেরাই হোয়াইটওয়াশ হবে!
অথচ এ আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় দিয়েই শুরু করেছিল। ২০১৪ সালে মিরপুরে জিতেছিল ৯ উইকেটে। এরপর হার টানা চার ম্যাচে। তবে সুখের খবর সর্বশেষ দেখাতে আবার বাংলাদেশ জিতেছিল। আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের এটাই হতে পারে মনোবল। কিন্তু ২০১৯ সালে পাওয়া এ জয় কী আসলেই বাংলাদেশের মনোবল বাড়াতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে? কারণ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অতীত যে ধুসর। হারে হারে বিধ্বস্ত। অন্ধকারে ঢাকা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ-টানা ৮ ম্যাচে হার। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যায় যায় রব উঠেছিল এ আট হারেই। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চরম ব্যর্থতায়। সেই ব্যর্থতা কিছুটা ঢাকা পড়েছিল নিউ জিল্যান্ড সফরে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জেতার পর। আড়ালে চলে যাওয়া বিসিবির কর্তারাও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন। কিন্তু যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ব্যর্থতা ছিল, সেই ব্যর্থতার জাল কী আজ মাহমুদউল্লাহ বাহিনী ছিন্ন করে বের হয়ে আসতে পারবেন?
সংবাদ সম্মেলনে দলনেতা মাহমুদউল্লাহ ব্যক্ত করেছেন জয়ের আশাবাদই। বলেছেন, ‘আশা তো অবশ্যই জেতার।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যর্থতার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের ঘষা-মাজা করে নিতে পেরেছেন বিপিএলে খেলে। কিন্তু বিপিএলে সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকেই পাওয়া যাচ্ছে না সিরিজে। কিছুটা অভিমানে আপাতত এ ফরম্যাট থেকে নিজেকে দূর সরিয়ে রেখেছেন ওয়ানডে কাপ্তান। কিন্তু তার না খেলাটাকে আবার মাহমুদউল্লাহ-তামিমের ব্যক্তিগত উল্লেখ করে সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর কথা বলেছেন।
তামিম ইকবাল না থাকাতে বাংলাদেশের ব্যাটিং ঘাটতি থেকেই যাবে। শেষ যে ৮ ম্যাচে হেরেছে একমাত্র শ্রীলঙ্কা ছাড়া আর কোনো ম্যাচেই তারা আগে-পরে ব্যাট করে দেড়শ রানও করতে পারেনি। দুইটি ম্যাচে আছে শতরানের নিচে অলআউট হওয়া। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচে রান ছিল ১২৭, ১২৪, ১০৮। এ ৮ ম্যাচের মাত্র একটিতে বাংলাদেশ পরে আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছিল।
এমনিতে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন ভঙুর। সেখানে আবার আছে রশিদ-নবী-মুজিব। এ স্পিন ত্রয়ীই বাংলাদেশের জন্য একটা আতঙ্কের নাম। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে এ স্পিন ত্রয়ীকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ভোঁতা বানাতে পেরেছিলেন। কিন্তু শেষ ম্যাচে তারা জানান দিয়েছেন ভোঁতা হয়ে যাননি। ক্ষেপণাস্ত্রের ভয়াবহতা ঠিকই আছে। বাংলাদেশ হেরেছে আসলে এ তিনজনের কাছেই। বিশেষ করে নবী-রশিদের ঘূর্ণিতে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা ৬ ম্যাচে আগে-পরে ব্যাট করে বাংলাদেশের দেড়শোর্ধ কোনো ইনিংস নেই। এ তিন বোলারের ১২ ওভারই তাই বাংলাদেশের জন্য ভীতি।
এ ভীতি কাটিয়ে উঠার জন্য শুরুর হালটা কে ধরবেন? গত আট ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে বদল এসেছে চারবার। এক প্রান্তে নাঈম থাকলেও অপর প্রান্তে এসেছে বারবার পরিবর্তন। আজ সেই নাঈমের স্থানই নড়বড়ে। নাঈমের স্থান টিক থাকলেও পরিবর্তন আসবে, না থাকলে ডাবল পরিবর্তন। সর্বশেষ ম্যাচে উদ্বোধন করেছিলেন নাঈম-নাজমুল হোসেন শান্ত। আজ এক প্রান্ত থেকে লিটন দাস আবার ফিরে আসছেন। অপর প্রান্তে নাঈমের! জাতীয় দলের ব্যর্থতার মাঝেও নাঈমের ব্যাট হেসেছিল। কিন্তু সেখানে টি-টোয়েন্টি মেজাজ ছিল না। তবে তার জন্য ‘কাল’ হয়ে দেখা দিতে পারে বিপিএলের ‘চরম’ ব্যর্থতা। মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদউল্লাহই। কিন্তু তিনি নিজেই নাঈমকে নিয়মিত খেলাননি। আবার খেলালেও কোনো কোনো ম্যাচে ওপেনই করাননি। নাঈম যদি আজ টিকে যান একমাত্র জাতীয় দলের সর্বশেষ পারফরম্যান্সের কারণেই। টিকলেও ওপেন করবেন কি না সেটাও দেখার বিষয়। কারণ এদিকে আবার বিপিএলে কাঁপানো মুনিমস শাহরিয়ার দরজায় কড়া নাড়ছেন সেরা একাদশে ঢোকার। তার সুযোগ পাওয়া মানেই ওপেন করা। ব্যাটিং অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ ছাড়া অন্য নামগুলো হতে পারে আফিফ, শেখ মেহেদি, সাকিব, ইয়াসির আলী রাব্বিরা।
আজকের ম্যাচের উইকেটও থাকবে ওয়ানডের মতোই স্পোর্টিং। তাই একাদশে পেসারদের আধিক্যই থাকছে বেশি। মোস্তাফিজ-তাসকিনের সঙ্গে শরিফুলের সম্ভাবনাই বেশি। স্পিনে সাকিবের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি স্পেশিয়ালিস্ট নাসুম আহমেত থাকছেন।
এমপি/এসএন