প্রায় ৩০ ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে নিউ জিল্যান্ড পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে পৌঁছেছেন তারা।
নিউ জিল্যান্ড পৌঁছাতে তাদের তিন দফা বিমান পরিবর্তন করতে হয়েছে। ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট শেষ হওয়ার ৮ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ দল নিউ জিল্যান্ডর উদ্দেশে বিমান চড়ে। পরে দুবাই, অকল্যান্ড হয়ে তারা ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছে।
সেখানে মুমিনুল, মুশফিক,তাসকিনরা সাতদিনের কোয়ারেনটিনে থাকবেন। কোয়ারেনটিন শেষে সবার কোভিড টেস্ট করা হবে। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে এরপর তারা অনুশীলন শুরু করবেন। ১ জানুয়ারি প্রথম টেস্ট খেলার আগে দুটি অনুশীলন ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ৯ জানুয়ারি। বাংলাদেশ দল ক্রাইস্টচার্চে কোয়ারেনটিনে থাকলেও এখান থেকে চলে যেতে হবে প্রথম টেস্টের ভেন্যু মাউন্ট মঙ্গানুইতে। সেখান থেকে তাদের আবার আসতে হবে ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে। চলতি বছর নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সফর। মার্চে তারা গিয়েছিলেন তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। সবগুলোতেই হেরেছিলেন তারা। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে কোনো ফরম্যাটেই কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
দুর্ঘটনায় নিহত ইন্টার্ন চিকিৎসক অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডল ও গুরুতর আহত তাঁর বাগ্দত্তা প্রতিভা সরকার। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক অর্ঘ্য অমৃত মণ্ডল (২৬)। একই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রতিভা সরকারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের তারিখ ছিল ২৫ জানুয়ারি।
কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারি অর্ঘ্যের এক জেঠা (বাবার চাচাতো ভাই) মারা যাওয়ায় বিয়ে পিছিয়ে দিয়ে পারিবারিকভাবে তারিখ পরে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়।
মৃত জেঠার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাড়িতে আসছিলেন অর্ঘ্য। সঙ্গে হবু স্ত্রী প্রতিভাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। ইচ্ছা ছিল, আজ শুক্রবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে সবাই বসে তাঁদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। কিন্তু এর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অর্ঘ্যই চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সোনামুর মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অর্ঘ্য ও প্রতিভা একই মোটরসাইকেলে ছিলেন। ঘটনাস্থলে আসার পর মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খান। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান অর্ঘ্য। গুরুতর আহত হয়েছেন প্রতিভা। তাঁকে ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন। ৭২ ঘণ্টা না গেলে তাঁরা কিছু বলতে পারছেন না।
অর্ঘ্য শ্যামনগরের সদর ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামের অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল ও মিনতী রানী মণ্ডল দম্পতির ছেলে। অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর তারকানাথ বিদ্যাপীঠের ক্রীড়াশিক্ষক। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন অর্ঘ্য। তাঁদের গ্রামের বাড়ি শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামে। প্রতিভা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিপ্রজিৎ সরকার ও দেবকী রায় দম্পতির মেয়ে। তিনিও বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
নিহত অর্ঘ্যের জেঠা (বাবার আপন বড় ভাই) বাসুদেব মণ্ডল বলেন, ‘অর্ঘ্য ছিল খুবই মেধাবী। সব সময় ক্লাসে প্রথম হতো। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল একই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রতিভার সঙ্গে। বিয়ের তারিখ ছিল ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারি আমার জেঠতুতো ভাই সন্তোষ কুমার মণ্ডল মারা যাওয়ায় বিয়ে পিছিয়ে দিয়ে বিয়ের তারিখ পরে ঠিক করার সিদ্ধান্ত হয়। ইচ্ছা ছিল আজ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে সবাই বসে ওদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। অর্ঘ্যের জেঠার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই অর্ঘ্যকে দাহ করতে হলো। আজ দুপুরে গ্রামের বাড়ি পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামের শ্মশানে অর্ঘ্যের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।’
অর্ঘ্যের মা–বাবা দুজনেই ছেলের মৃত্যুতে পাগলপ্রায়। মা মিনতী রানী মণ্ডল বিলাপ করছেন আর বলছেন, ‘ভগবান, আমি এমন কী দোষ করেছি, আমার সোনার মানিককে এভাবে তুলে নিলে। এর চেয়ে আমাকে নিতে। আমার মানিক তো কোনো অন্যায় করে নাই। ছোটবেলা থেকে কারও সঙ্গে ঝগড়া পর্যন্ত করে নাই। তাহলে ওকে নিলে কেন। ভগবান তোমার এ কেমন বিচার।’
দুর্ঘটনার সময় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ের উপপরিদর্শক মো. রোমান মোল্যা মহাসড়কে দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি জানান, অর্ঘ্য তাঁর বাগ্দত্তাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঢাকা থেকে খুলনার দিকে যাচ্ছিলেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সোনামুর মোড়ে একটি ট্রাক আগে থেকে দাঁড়িয়ে ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সেখানে দ্রুতগতিতে আসা অর্ঘ্যের মোটরসাইকেলটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক অর্ঘ্য মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী প্রতিভাও মারাত্মক জখম হন। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে অর্ঘ্যের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর মরদেহ ময়নাতদন্ত না করে দাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়। রাতেই তাঁর মরদেহ স্বজনেরা সাতক্ষীরায় নিয়ে চলে যান।
বাঙালির প্রেরণা ও গৌরবের ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ছবি: সংগৃহীত
আজ ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন। শুরু হলো বাঙালির আবেগ, প্রেরণা ও গৌরবের ভাষার মাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির মধ্যে গভীর ভাবে মিশে আছে। দিনটিকে ঘিরে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সৃষ্টি করেছিল অভূতপূর্ব এক অভিঘাত। যার ফলশ্রুতিতে এতদিনেও দিনটি মানুষের মনে বিশেষভাবে জায়গা দখল করে আছে।
স্বাধীনতার উন্মেষ-চেতনার ভিত রচিত হয়েছিল ৭৩ বছর আগের সেই আন্দোলনে। সেই জাগৃতি ও স্ফুরণের ধারাবাহিকতায় অর্জন আজকের বাংলাদেশ। ভাষাশহীদরা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহিনে চিরজাগরূক।
ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য অপরিসীম। এ কারণে ফেব্রুয়ারি মাস এলে দেশজুড়ে শুরু হয় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমি মাসব্যাপী আয়োজন করে অমর একুশে বইমেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে বসে জাতীয় কবিতা উৎসব।
শহীদ মিনারে আয়োজন করা হয় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিদিন দেশব্যাপী থাকে নানা কর্মসূচি। বরাবরের মতো আজ থেকে মাসব্যাপী শুরু হচ্ছে সেসব আয়োজন।
ভাষা ঘিরে এই অভূতপূর্ব জাগরণ তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্লজ্জ বৈষম্য সৃষ্টি থেকে। ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’—৭৩ বছর আগে পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার মানুষ এই অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তাই বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় দ্রুত দানা বাঁধে আন্দোলন।
আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ অমান্য করে ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি পৌঁছলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, শফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরো অনেকে। এতে তীব্র আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ বাঙালির ভাষাশহীদ দিবস। একই সঙ্গে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতি স্মরণ করিয়ে দিতে দিনটি বাঙালি জাতির জন্য বিশেষ আবেগের। মাতৃভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত দেওয়ার উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ভাষার জন্য বাংলার সূর্যসন্তানদের এই বিরল আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ২০০০ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।
এর মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বের দেশে দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শুধু বাংলা ভাষা নয়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরো যেসব ভাষার মানুষ আছে, তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষা বিকাশের উদ্যোগ বেগবান করার তাগিদ দেয় এই দিবস।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বিয়ে করেছেন। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) গাজিপুরের রাজিন্দ্র রিসোর্টে শুক্রবার আসরের নামাজের পর পারিবারিকভাবে তাদের বিবাহ কার্য সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, সারজিসের শশুরের নাম ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান। তার বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ২ নম্বর গৌরীচন্না ইউনিয়নে লাকুরতলা গ্রামে। পেশার তাগিদে ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর বাসাবো এলাকার শাহজাহানপুর এলাকায় বসবাস করেন। একবোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সার্জিস আলমের স্ত্রী সবার বড়। তিনি একজন কোরআনের হাফেজা। সবসময়ই পর্দা করে চলেন। তাই তার নাম প্রকাশ করতে কালবেলার কাছে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন তারা।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ফেসবুক পোস্টে সারজিসকে বিয়ের জন্য শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ফেসবুকে বিয়ের ছবি পোস্ট করে আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, নবজীবনে পদার্পণে অভিনন্দন সার্জিস ভাই। বিবাহিত জীবন সুখের হোক।
কিছুক্ষণ পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিয়ের ছবি পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক লিখেছেন, অভিনন্দন, বন্ধু সার্জিস! তোমাদের একসঙ্গে ভালোবাসা এবং সুন্দর মুহূর্তে ভরা একটি জীবন কামনা করছি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসিফ মাহমুদ ও হাসনাত আব্দুল্লাহ একই ছবি পোস্ট করে সারজিস আলমকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ছবিতে সারজিসকে শেরওয়ানি ও পাগড়ি পরা বরবেশে দেখা গেছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ।